উন্নয়নের নতুন ধাপে বাংলাদেশ - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

উন্নয়নের নতুন ধাপে বাংলাদেশ



উন্নয়নের নতুন ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বে পৌঁছেছে সম্মানজনক অবস্থানে। আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সারাবিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। গতকাল পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের বোরিং (খনন) কাজের উদ্বোধন এবং লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং প্রকল্পের ফলক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখব। সকলের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করব। দেশে কেউ গৃহহীন ও গরিব থাকবে না। গৃহহীনদের ঘরবাড়ির ব্যবস্থা আমরা করে দেব। অচিরেই দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। মহেশখালী ও মাতারবাড়ী অঞ্চলে একটি এবং পায়রাতে একটি করে এনার্জি হাব গড়ে তোলা হবে। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অধিকতর কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দেশে বুলেট ট্রেন চালু করা হবে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করব।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের নতুন ধাপে প্রবেশ করল। টানেলটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাকে শহরাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে। কাজেই আরো ১০ কিলোমিটার সড়ক করা গেলে এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চারলেন সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ সময় তিনি প্রকল্পটি রিভাইস করে এই সড়ক নির্মাণ করার জন্যও সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শহরকে বাইপাস করে সরাসরি কঙবাজারের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে চট্টগ্রাম শহরের যানজট কমাসহ যাতায়াতের সময়ও অনেকাংশে কমে যাবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কঙবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে এবং কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকায় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এর ফলে পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমান বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত হবে। পূর্ব প্রান্তের শিল্প কারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমান বন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন সহজ হবে, বলেন তিনি।
বীর চট্টলার গণমানুষের নেতা প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর ওপর ব্রিজ করলে নদীর ক্ষতি হবে তাই, গণমানুষের এই নেতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনও করেছিলেন। তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর থাকলে অত্যন্ত আনন্দিত হতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের অনেক আন্দোলন সংগ্রামে তার অবদান রয়েছে। আজ আমি তাকে স্মরণ করছি। এ সময় সামনের সারিতে থাকা মহিউদ্দিন পুত্র ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে চোখ মুছতে দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা মা ভাইসহ পুরো পরিবারকে হারিয়েছি। আমার বাবা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ চট্টগ্রামের অনেক নেতা তখন জাতির জনকের সাথে দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন। তাদের সবার কথা আজ মনে পড়ে।
তিনি বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে দেশটা স্বাধীন করেছিলেন জাতির পিতা ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে স্বপরিবারের হত্যার মধ্য দিয়ে উনার স্বপ্নযাত্রাকে থমকে দিয়েছিল ঘাতকের দল। জাতির জনকের একটি চিন্তা ছিল এ চট্টগ্রামের উন্নয়নকে নিয়ে। শুধু শহর কেন্দ্রিক উন্নয়ন নয় গ্রামেও যাতে উন্নয়নের ছোয়া লাগে তার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ নিয়ে আমরা পরিকল্পনার সাথে এগুচ্ছি। শহর গ্রাম পাল্টে যাবে উন্নয়নে। গ্রামের মানুষ যাতে উন্নত জীবন পেতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিচ্ছি। বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় আসে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে ফেলে। আর আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড করি। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ২০ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। যে সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন নেই আমরা সেখানে সোলার প্যানেল দিয়ে দিচ্ছি যাতে বিদ্যুৎ অভাব মিটে যায়। ইতোমধ্যে আমরা সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাথে সন্দ্বীপকে সংযুক্ত করে সেখানে বিদ্যুৎ নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।
কঙবাজারের মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অঞ্চলে বিশাল অর্থনৈতিক জোন ও পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ চলছে। চট্টগ্রামের দ্বীপ অঞ্চলগুলোতেও সার্বিকভাবে উন্নয়নের আওতায় আসছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে যাচ্ছি। পায়রা পোর্ট করে দিয়েছি। সেখানেও উন্নয়ন করে যাচ্ছি। জলবায়ুর কারণে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, চীন সফরে গেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলাপ হয়। আলোচনার পর ওইদিনই আমরা চুক্তিতে সই করি। চীন সরকার সাধারণত ঋণের ৮৫ ভাগ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য শতভাগ ঋণ সহায়তা দিয়েছে চীন সরকার। আমাদের আগ্রহ দেখে চীনের প্রধানমন্ত্রী এ সহযোগিতা দিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্টও বেশ সহযোগিতা করেছেন। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর যখন এই টানেল নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট উপস্থিত ছিলেন। তিনিও বাংলাদেশের উন্নতির জন্য সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি এবং প্রথম দিকে বিশ্ব ব্যাংক এ ব্যাপারে অনেক আগ্রহ দেখিয়েছে। পরে মিথ্যা এক অভিযোগ আনে, এখানে নাকি দুর্নীতি হয়েছে। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করেছি, দুর্নীতি হলে প্রমাণ দেন। মামলায় বিশ্বব্যাংক কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক যা যা বলেছে সব ভুয়া, বানোয়াট। এটা নিয়ে কত যে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তা আপনারা বুঝবেন না।
তিনি আরো বলেন, এই পদ্মা সেতুর নির্মাণের কাজ বন্ধ করার জন্য চট্টগ্রামের নোবেন বিজয়ী এবং দুটি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক অনেক ষড়যন্ত্র করেছেন। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। আল্লাহর রহমতে আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করতে পেরেছি। পদ্মা সেতু হলে আমাদের জিডিপি আরো সমৃদ্ধ হবে।
সমাবেশে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার বক্তৃতায় পদ্মা সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করার প্রসঙ্গ টেনে এনে বক্তব্য প্রদানের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মন্ত্রীকে বলবো এখানে রাগ, ক্ষোভের কিছু নেই, আমি কোন নাম চাই না। আমি কিছুই চাই না। জীবনে কোনো কিছু আমার চাওয়া পাওয়া নেই।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। আরেকটি কাজ করে দিচিছ লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে। এটি পোর্ট সিটি হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু এ জায়গা থেকে হয়। চট্টগ্রামে বিশাল আকারে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। শহরে যানজট কমানোর জন্য বাইপাস করে দিচ্ছি। টানেল নির্মাণ হলে চট্টগ্রামে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন হবে।
জাতির পিতার স্বপ্নের দেশ গড়ার অংশ হিসেবে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত করেছি। টানেলটা শেষ হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত লাগবে। এটা শেষ হলে উন্নয়নে এখানকার চেহারা পাল্টে যাবে। পদ্মা সেতু আমরা করছি। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এ পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দেয়। এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের নামে বিএনপি সময়ক্ষেপণ করেছিল।
তিনি আরো বলেন, এরপর আমার ও আমার পরিবার নিয়ে অপপ্রচার চালাত। চ্যালেঞ্জ ছিল বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা নেব না। পারলে নিজেদের টাকায় করবো। ২০০২ সালে বিএনপির একটি প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে মিলিয়ে দিয়ে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কাহিনী বাাননো হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরাই শুরু করেছি। এ সেতু দৃশ্যমান। আমি নাম যশ কিছুই চাই না। কোন কিছুই আমার চাওয়া পাওয়ার নেই। আমি সব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে দেশে ফেরত এসেছি। আমার মতো যারা একদিনে পরিবারের এতগুলো মানুষ হারানোর পর এতকাজ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমি করি একটি আর্দশের জন্য সেটা হচ্ছে, আমার বাবা এদেশের জন্য সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন। অনেক কষ্ট করেছেন। দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশের গরীব দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, দিনরাত পরিশ্রম করছি এদেশের মানুষের জন্য। গৃহহীন মানুষ থাকবে না এদেশে। সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের বিজয়ী জাতি।
আমরা অবশ্যই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।
সারা বিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে মতো এদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। দেশের জনগণ মাথা উচুঁ করে বিশ্বে চলবে এটাই চাই। বন্ধু প্রতীম দেশকে ধন্যবাদ জানাই তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করছে। জাতির পিতার কণ্ঠেই বলবো ‘এদেশকে কেউ দাবাইয়ে রাখতে পারবা না। স্বাধীনতার শতবর্ষ পালনের সময় হয়তো বেঁচে থাকবো না। কিন্তু নতুন প্রজন্ম দেখবে উন্নত এক দেশ।
সমাবেশে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মীরসরাই থেকে কঙবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কের চিন্তাভাবনা চলছে। কঙবাজার মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ করার পেছনে শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। সড়কটি না হলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে দুর্দশায় পড়তাম। কঙবাজার দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। আগামী ঈদের আগে তিনটি চার লেনের সেতু দৃশ্যমান হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার চিন্তাভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত জ্যাং জোউ বক্তৃতা রাখেন। তারা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃঢতার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন। এসময় সুধী সমাবেশে মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও চন্দনাইশের এমপি নজরুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।


কোন মন্তব্য নেই