রাজশাহী অঞ্চলে নজিরবিহীন শিলাবৃষ্টি
বৈশাখ আসতে এখনো মাস দুয়েক বাকী। তবে এই বসন্তের শুরুতেই রাজশাহী অঞ্চলে কালবৈশাখীর ‘মহড়া’ দেখিয়েছে প্রকৃতি। রাজশাহীতে হঠাৎ করেই প্রবল ঝড়ো হাওয়া আর ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত এই শিলাবৃষ্টি স্থায়ী ছিল। এরপরও সকাল পর্যন্ত কোথাও কোথাও শিলা বরফের স্তুপ জমে ছিল। রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম এই নজিরবিহীন শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাস্তায় জমেছে পুরু হয়ে শিলার স্তুপ। এতো পরিমান শিলা আগে দেখা মেলেনি এ অঞ্চলে। সকাল হওয়ার আগেই ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি হওয়ায় মানুষের ক্ষতির কারণ না হলেও ঝরে গেছে এ অঞ্চলের আমের প্রস্ফুটিত মুকুল। কলা ও পেপে বাগান নুয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে গাছের ডালপালা। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে সদ্য প্রষ্ফুটিত আমের মুকুলের। ঝড়ো হাওয়া ও শিলার কারনে ঝরে পড়েছে অসংখ্য মুকুল। এতে হতাশায় পড়েছেন চাষিরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, এই শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজ, রসুন, গম ও আমের ক্ষতি হয়েছে। তবে ফল গবেষকরা বলছেন, মুকুল ঝরে পড়লেও চাষিদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। এ বছর আমের উৎপাদন স্বাভাবিকই হবে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, ভোরে ৩৮ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এ সময় তারা ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড কররেছেন। আর বৃষ্টির সময় বজ্রপাতও হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আবারও এমন বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিলাবৃষ্টির আঘাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে মুকুল ঝরে পড়েছে। বিশেষ করে পুঠিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টির কারণে বরফের স্তুপ জমে যায়। সকাল ৮টা পর্যন্ত এমন বরফের স্তুপ দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, এমন বরফের স্তুপ তারা আগে দেখেননি। বিপুল পরিমান গাছের ডালপালাও ভেঙে গেছে।
বসন্তের শুরুতে ঝড়ো হাওয়ায় রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্যারিস রোড়ের আকাশ ছোঁয়া অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়েছে। গাছ ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ায় বন্ধু হয়ে যায় চলাচলের পথ। রাবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রাস্তার সামনের অনেক গাছ ভেঙ্গে পড়ে গেছে।
পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এবার আমের গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। কিন্তু ভোরে শিলাবৃষ্টির আঘাতে প্রচুর মুকুল ঝরে পড়েছে। এতে লোকসান গুণতে হবে। তিনি জানান, শিলাবৃষ্টিতে অন্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
চারঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের আম ব্যবসায়ী শামসুল হক জানান, আম গাছে মুকুল যে পরিমাণ এসেছিল তাতে অন্যান্য বছরের লোকসান অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু বসন্তের শুরুতেই শিলাবৃষ্টিতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমের উৎপাদন কেমন হবে তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, শিলা এবং ভারি বৃষ্টি কারণে পেঁয়াজ, রসুন, গম ও আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে তারা জরিপ শুরু করেছেন।
তবে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলীম বলছেন, আমের মুকুল ঝরে পড়লেও চাষিদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা, আম হলো বৈরি আবহাওয়ার ফসল। ঝড়, বৃষ্টির মধ্যেই আমের উৎপাদন হয়ে থাকে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
এবার আমের উৎপাদন ভালো হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে জানিয়ে ড. আলীম বলেন, এবার প্রচুর মুকুল এসেছে। অতো মুকুলে শেষ পর্যন্ত আম ধরে না। আবার ধরলেও গাছে থাকে না। ঝরে পড়ে। এবার শিলার কারণে অনেক মুকুল ঝরলেও বৃষ্টি গাছের মুকুলগুলোর জন্য ভালো হয়েছে। তাই আমের কাক্সিক্ষত উৎপাদন পাওয়া যাবে বলেই মনে করেন এই গবেষক।
কোন মন্তব্য নেই