বগুড়া আ’লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ইন্তেকাল - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বগুড়া আ’লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ইন্তেকাল



 প্রবীণ রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আর নেই (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)।
শনিবার দিনগত রাত ৩ টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রোববার বাদ যোহর বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ও বাদ আসর স্থানীয় মানিকচক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে চিরশায়িত করা হয়।
অধ্যক্ষ ডা. আহসান হাবিব জানান, দীর্ঘদিন ধরে মমতাজ উদ্দিন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানারোগে ভুগছিলেন। চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি গত ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতে যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে তিনি গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন।
এদিকে দেশে ফেরার পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শনিবার সকালে তাকে বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন শনিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হন মমতাজ উদ্দিন। সেসময় তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ)নেওয়া হয়। পরে সেখানেই মারা যান প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ।
মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছাত্র থাকাকালেই তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বগুড়া জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন।
পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে মমতাজ উদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রায় এক দশক সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মমতাজ উদ্দিন।
২০০৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ও ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিনিয়র সদস্য (ক্রমানুযায়ী দ্বিতীয় সদস্য) নির্বাচিত হন।
এদিকে রাজনীতিবিদ ছাড়া মমতাজ উদ্দিন ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একাধিকবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) একাধিকবার পরিচালক নির্বাচিত হন।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি ও রাজনৈতিক অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এক শোক বার্তায় বলেন, আলহাজ্জ মমতাজ উদ্দীন ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বগুড়াতে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি রাজনৈতিক ও গণঅন্দোলন সংগ্রামে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে বগুড়া অঞ্চলের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, মমতাজ উদ্দীন রাজনৈতিকভাবে আমাদের অনুসরণীয় এক ব্যক্তিত্ব। তার এই চলে যওয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা অপূরণীয়। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।


এদিকে আরো শোক জানিয়েছেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য সন্তান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
রোববার দুপুরে এক শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনাও জ্ঞাপন করেন তিনি।
শোকবার্তায় মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার। রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি গভীর শোক প্রকাশ করে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মমতাজ উদ্দিনের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
শোকবার্তায় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, রাজনীতিবিদ ছাড়া মমতাজ উদ্দিন ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) পরিচালকও ছিলেন একাধিকবার। তাই মমতাজ উদ্দিনের সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তার মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে শোকাহত। চেয়ারম্যান তার শোকবার্তায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জ্ঞাপন করেন।

কোন মন্তব্য নেই