রাজশাহীতে নারী দিবসের অনুষ্ঠানে পুলিশের হয়রানির প্রতিকার দাবি
রাজশাহীতে গতকাল বৃহস্পতিবার নারী দিবসের অনুষ্ঠানে এসে পুলিশের হয়রানির প্রতিকার চাইলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা। এই মর্মে তারা একটি রেজুলেশন করেন। প্রতিকারের জন্য তারা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের বাসায় যান এবং পত্রিকা অফিসে এসে তাদের সিদ্ধান্ত জানান। গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা দোষি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী দিল সেতারা নেতৃত্বে ১৩ জন নারী আইনজীবী এই সিদ্ধান্ত নেন। তারা জানান, গত ২ মার্চ তাদের সমিতির সদস্য ও রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোৎস্না আরা খাতুনের সঙ্গে তার প্রতিবেশির একটি ঝামেলা হয়। প্রতিবেশিরা তাকে মারধর করে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন। এই অভিযোগ নিয়ে জোৎস্না নগরের বোয়ালিয়া থানায় এলে থানার উপপরিদর্শক তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার সঙ্গে নগরের সপুরা এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
জোৎস্না আরা অভিযোগ করেন তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তার সঙ্গে গিয়ে তার প্রতিপক্ষের বাসায় ঢুকে তাদের বসার ঘরে দুই ঘণ্টা আলাপ করেন। এরপর বের হয়ে এসেই উল্টো তাকেই গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। পুলিশের এই আচরণের কারনে তিনি আত্মহত্যা করার হুমকি দিলে পুলিশ তার হামলাকারীদের একজনকেও আটক করে তার সঙ্গে থানায় নিয়ে আসেন। জোৎস্না বলেন, হামলায় তিনি আহত হয়েছিলেন। তার গা থেকে রক্ত ঝরছিল। কিন্তু পুলিশ তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। এক পর্যায়ে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে বাধ্য হয়ে পুলিশ তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি অভিযোগ করেন তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে যান। আর লোক দেখানোর জন্য আটক করা তার প্রতিপক্ষকেও পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি দেখায়। হাসপাতালে পুলিশ তার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। ওষুধ খাওয়ানোর জন্য তার মেয়েকে পর্যন্ত তার কাছে যেতে দিচ্ছিল না। পরে তার মেয়ে পুলিশের পা ধরে তাকে ওষুধ খাওয়ানোর অনুমতি পায়।
পরের দিন সকালে খবর পেয়ে অ্যাডভোকেট দিল সেতারা হাসপাতালে গিয়ে নিজের চোখে পুলিশের এই আচরণ দেখেন। বেলা সাড়ে ১১টার সময় পুলিশ আবার তাকে থানায় নিয়ে আসে। তারপর থানা থেকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ওই দিন তার জামিন হয়। জোৎস্না আরা বলেন, এ ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
অ্যাডভোকেট দিল সেতারা বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার তারা তাদের কার্যালয়ে বসে পুলিশের হয়রানির প্রতিকার চেয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা গতকালই এ বিষয় নিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় যান। এ সময় তিনি বাইরে থাকার কারণে মেয়রের স্ত্রী বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আক্তারকে বিষয়টি জানিয়ে আসেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারা প্রয়োজনে পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামবেন। তিনি বলেন, এতে হয়রানির মধ্যে জোৎস্না আরা কাছ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তারা এর প্রতিকার চান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। দুই পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। দুই পক্ষের আসামিকেই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা মীমাংসার চেষ্টা করেছে। ওই অ্যাডভোকেট রাজি না হওয়ার কারণে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই