অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি থেকেও সরে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি থেকেও সরে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

জলবায়ু চুক্তির পর এবার জাতিসংঘের অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি (এটিটি) থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইনডিয়ানায় 'ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন'র প্রতিনিধিদের উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে শুক্রবার ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। বিশ্বজুড়ে অস্ত্রের কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণে ২০১৩ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৩০টি দেশ অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যেটি আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি হিসেবেও বিবেচিত হয়। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স ইরান, সিরিয়া আর উত্তর কোরিয়া তখন চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। রাশিয়া ও চীনসহ ২৩টি দেশ ভোট দানে বিরত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি ওই চুক্তির পক্ষে ভোট দেয়। তখন বলা হয়েছিল, ওই চুক্তির ফলে অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন মানদন্ড নির্ধারণ করা যাবে। পরের বছর ওই চুক্তি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশকে অস্ত্র বাণিজ্যের প্রতিবেদন জাতিসংঘকে দিতে হবে এবং তাদের অস্ত্র কোনোভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সেটার মূল্যায়নও তাদেরকেই করতে হবে। অর্থাৎ, সেই অস্ত্র গণহত্যা বা যুদ্ধাপরাধের মতো মানবতার বিরুদ্ধে ব্যবহার কিংবা সন্ত্রাসীদের হাতে পড়ছে কিনা। যদি তেমন কিছুর আশঙ্কা প্রকাশ পায়, তবে রপ্তানিকারক দেশকেই অস্ত্র হস্তান্তর আটকাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন থেকে বলা হয়, জাতিসংঘের এই চুক্তি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র আইনের দ্বিতীয় সংশোধনীর পথে বাধা স্বরূপ। উলেস্নখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ার তুলনায় তাদের অস্ত্র বিক্রি প্রায় ৫৮ শতাংশ বেশি। ইনডিয়ানাতে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে ট্রাম্প আরও বলেন, 'আমরা আমাদের স্বাক্ষর ফিরিয়ে নিচ্ছি।'

জাতিসংঘ শিগগিরই আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক নোটিশ হাতে পাবে বলেও জানান। তিনি বলেন, 'আমার আমলে, আমরা কখনো কারও কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সমর্পণ করব না। আমরা অস্ত্র আইনের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে আপনাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিদেশি কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ করার অনুমতি কিছুতেই দেব না।' ট্রাম্পের ঘোষণার পর হোয়াইট হাউস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'রাশিয়া ও চীনের মতো বড় বড় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশের কারণে এই চুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীন অস্ত্র বাণিজ্য সমস্যার সত্যিকারের সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।' কিছু সংগঠন এই চুক্তি ব্যবহার করে 'সরকারের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতায়' হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে বলেও ওই বিবৃতিতে উলেস্নখ করা হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। 'অক্সফাম আমেরিকা'র প্রেসিডেন্ট অ্যাবে ম্যাক্সম্যান বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র এখন ইরান, উত্তর কোরিয়া ও সিরিয়ার মতো দেশের সঙ্গে হাত মেলাতে যাচ্ছে। যারা ঐতিহাসিক এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি; যে চুক্তির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নিরপরাধ মানুষদের প্রাণঘাতী অস্ত্র থেকে রক্ষা করা। জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যসহ এখন পর্যন্ত স্বাক্ষরকারী ১০১টি দেশে ওই চুক্তি অনুমোদন পেয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বাকি ২৯টি দেশ জাতিসংঘের অস্ত্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও নিজ দেশে আইনে পরিণত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন এখনো দেয়নি। ইচ্ছামতো অস্ত্র কেনাবেচা করতে চান ট্রাম্প এদিকে, প্রচলিত অস্ত্রের কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইচ্ছামতো চুক্তিবিহীন অস্ত্র কেনাবেচা করতে চান বলে মত দিয়েছেন অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জাতিসংঘ ওবামার আমলে দেশটিকে অস্ত্র-বাণিজ্য চুক্তির আওতায় এনেছিল। সেটা ২০১৩ সালের কথা। বছরে বিশ্বব্যাপী সাত হাজার কোটি ডলারের প্রচলিত অস্ত্র কেনাবেচা হয়। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জাতিসংঘ তাদের সদস্য দেশগুলোকে একটি চুক্তির আওতায় আনার চেষ্টা করে। অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর সাত লাখ ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। হোয়াইট হাউস থেকেও ট্রাম্পের বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, 'রাশিয়া, চীনসহ অন্য শীর্ষ ১০ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত এ চুক্তির আওতায় নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের থাকার কোনো মানে হয় না।' এছাড়া জাতিসংঘ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে এখনো অন্ধকারে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে তারা এখনো কিছুই জানেন না।

কোন মন্তব্য নেই