কর্মক্ষেত্রে ইমেইল কিভাবে লেখা উচিৎ - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

কর্মক্ষেত্রে ইমেইল কিভাবে লেখা উচিৎ



বর্তমানে দ্রুত ও কম সময়ে যোগাযোগ করার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে ধরা হয় ইন্টারনেটকে। বিভিন্ন অনলাইন সামাজিক সাইটগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যোগাযোগ করে থাকে। তার বাইরেও যোগাযোগকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করতে ইমেইলের ব্যবহার হতে পারে দারুণ একটি মাধ্যম। কিন্তু আমরা অনেকেই ইমেইললের মতো শক্তিশালী একটি যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে তেমন কোনো নিয়ম-কানুন মেনে চলি না। এখন আবার বলতে পারেন, এটা ব্যবহারের আবার নিয়ম হয় নাকি!
সেটা নির্ভর করবে আপনি কী ধরণের যোগাযোগ রক্ষা করবেন তার উপর। আপনি যদি কোনো বিজনেস মেইল কাউকে পাঠাবেন বলে চিন্তা করেন, তাহলে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ যথেষ্ট ভদ্রতা ও শিষ্টাচার জানা। আপনার ব্যবহারের উপর নির্ভর করেই আপনার অপর পাশের গ্রহীতা আপনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনি কতটা প্রফেশনাল সেটা বোঝা যাবে, আপনার মেইল লেখার ধরণ দেখেই। আপনার ইমেইলটি ময়লার ঝুড়িতে যাবে নাকি অপর ব্যক্তি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন সেটা নিশ্চিত করার জন্য, চলুন আমরা জেনে আসি কিছু ভদ্রতা ও শিষ্টাচার সম্পর্কে। যেগুলো হাজার ইমেইলের ভীড়ে আপনার ইমেইলকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলবে।

১. প্রেরক-প্রাপক
কেউ আমাদের যখন কোনো মেইল পাঠায় তখন সবার আগে আমরা মেইলটা কে পাঠিয়েছে সেটা দেখি। তাই প্রেরক এবং প্রাপকের অংশগুলো ঠিকভাবে লিখতে হয়। মেইলটি যদি ব্যক্তিগত না হয়ে থাকে, তবে প্রেরক অংশে যথাসম্ভব আপনার পেশায় ব্যবহৃত নাম ব্যবহার করুন। কিংবা কোম্পানীর নাম উল্লেখ করতে পারেন। এতে প্রাপক সহজেই মেইলটির গুরুত্ব বুঝতে পারবেন।

২. বিষয়বস্তু পরিষ্কার করা
একটা ইমেইল লিখতে হলে সবার প্রথমেই আসে পুরো মেইলটির বিষয়বস্তু মানে টাইটেল লাইন। আর এটা পড়েই অপর পাশের মানুষটি আপনার বিস্তারিত মেসেজ সম্পর্কে ধারণা নিবেন। তাই টাইটেলে থাকা লাইনটি হতে হবে একেবারে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তুুর সারমর্ম।
যেমন হতে পারে, আপনি কোনো সহকর্মীকে পরবর্তী একটি মিটিংয়ের সংবাদ জানাতে চাচ্ছেন। তখন খুব সহজভাবে টাইটেলে যদি লিখেন, ‘মিটিং দুপুর ২ টা সেমিনার হল’, তবে পুরো ব্যাপারটাই তার বুঝতে সুবিধা হবে।

৩. প্রফেশনাল মেইল এড্রেস ব্যবহার
কর্মক্ষেত্রে আপনার প্রফেশনালিজমকে পরিষ্কার করে তুলে ধরতে পারে আপনার ব্যক্তিগত ইমেইলের বদলে কর্মক্ষেত্রের ইমেইল ব্যবহার। কোনো ক্লায়েন্টের সাথে আপনি যোগাযোগ করতে গিয়ে, আপনি নিজের ব্যক্তিগত মেইল এড্রেসটি থেকে যদি তাকে মেইল পাঠান, তবে তার কাছে আপনার প্রফেশনাল ভদ্রতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হবে। আপনার ক্লায়েন্ট এমন কোনো ব্যক্তি কিংবা কোম্পানীর সাথে ব্যবসায়িক যোগাযোগ রক্ষা করবে না, যাদের একটি মেইল পাঠানোর ব্যাপারে নূন্যতম ধারণা নেই। তাই আপনি যদি এমন ভুল সচরাচর করে থাকেন, তবে আজই এ অভ্যাস ত্যাগ করুন।



৪. শুভেচ্ছা বিনিময়
আমরা সচরাচর কোন বন্ধু কিংবা সহকর্মীকে মেইল করার জন্য ‘হাই’ বলে থাকি। নিজের চেনা মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগের জন্য এতটুকু সৌজন্য মানানসই।
কিন্তু মেইলটি যখন এমন একজনতে পাঠাবেন, যার সাথে আপনার ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে, তার সাথে ‘হাই’ বলার চেয়ে ‘হ্যালো’ বলাটাই বেশি সৌজন্যমূলক। এ রকম কিছু ছোট-খাটো শব্দের সঠিক ব্যবহারই আপনার পেশাদারিত্বের ব্যাপারে, অপর প্রান্তের মানুষটির মনে শ্রদ্ধাভাব তৈরি করতে পারে।

৫. ‘রিপ্লাই অল’ অপশনের ব্যবহার
আমাদের ভেতর অনেকেই আছেন মেইলের ‘রিপ্লাই অল’ অপশনটি ঘনঘন ব্যবহার করেন। এ অপশনটি গ্রুপ মেসেজের জন্য খুবই কার্যকরী, যদি মেইলের গ্রহীতারা সবাই মোটামুটি একই মনোভাবসম্পন্ন হন। হয়তো এটা তাদেরকে নতুন কোনো তথ্যেরও যোগান দিতে পারে। কিন্তু আপনার ক্লায়েন্ট যখন ভিন্ন-ভিন্ন, তখন ‘রিপ্লাই অল’ অপশনটির ব্যবহার তাদেরকে লজ্জাজনক কোনো পরিস্থিতিতেও ফেলতে পারে।
আবার অনেকের কাছে আপনার তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার মেসেজটির জায়গা হবে ট্রাস বক্সে, অনেকে আগ বাড়িয়ে হয়তো স্প্যামও করে দিতে পারেন।

৬. বানানের ব্যাপারে সতর্কতা
আপনাকে কেউ একজন প্রফেশনাল কাজে কোনো মেইল করলো। কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলেন সেখানে অনেকগুলো বানানে ভুল রয়েছে কিংবা যিনি মেইলটি পাঠিয়েছেন তার লেখায় ব্যাকরণগত ভুল রয়েছে। সেক্ষেত্রে মেইলটি পড়তে আপনার খুব একটা ভালো লাগবে না। মেইল পাঠানো ব্যক্তিটির প্রতি আপনার মনে নেতিবাচত ধারণাও জন্মাতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নজরে সবার আগে অন্যের ভুলটাই ধরা পড়ে। তাই আপনিও যখন কাউকে মেইল পাঠাবেন চেষ্টা করবেন বানান আর ব্যাকরণগত ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে।

৭. ইমেইলের আকার
মনে রাখতে হবে, আমরা প্রফেশনার ইমেইল নিয়ে কথা বলছি। ব্যক্তিগত যোগাযোগে আপনি হয়তো অনেক বড় মেসেজ কাউকে পাঠাতে পারেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে যখন আপনাকে কেউ বড় আকারের লেখা সম্বলিত মেইল পাঠায়, সেটা পড়ার আগে আপনি বেশ কয়েকবার ভাববেন।
আমরা সবাই চাই অল্প কথায় কেউ আপনাকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দিক। সেখানে এত বড় লেখা পড়ার মত ধৈর্য্য সবার না-ও থাকতে পারে। বেশিরভাগ মানুষই এরকম মেইল দেখে বিরক্তবোধ করেন।

৮. ফাইল সংযুক্তি
গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে আমাদেরকে অনেক সময় ফাইল সংযুক্ত করে পাঠাতে হয়; ফাইলগুলো হতে পারে ছবি কিংবা ডকুমেন্ট। তাই অনেকগুলো ফাইল সংযুক্ত করে পাঠানোর সময় একটা-একটা করে ফাইল যোগ করে পাঠানো দু’জনের কাছেই বিরক্তিকর কাজ হতে পারে। আপনি পাঠাতে বিরক্তবোধ করবেন; আর যিনি পাবেন, তার কাছে এতোগুলো ফাইল দেখে পুরো ব্যাপারটাই অগোছালো লাগতে পারে।
তাই অনেকগুলো ফাইল পাঠানোর সময় সবগুলো ফাইলকে একসাথে জিপ করে ফেলুন। এতে করে মেইলের ফাইল এটাচমেন্টের নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রমেরও ভয় থাকে কম। সেইসাথে প্রাপককে আগে থেকেই ফাইল পাঠানোর বিষয়টি অবহিত করে রাখতে পারেন। প্রাপকের কাছে আপনার পেশাদারিত্ব তুলে ধরার এটা ভালো একটা উপায়।

৯. ডিজিটাল সিগনেচার
আপনার নিজস্বতা তুলে ধরার জন্য ডিজিটাল সিগনেচার হতে পারে ভালো একটি উপায়। বর্তমানে কর্পোরেট জগতে ডিজিটাল সিগনেচারের কদর বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এটা একদিকে যেমন আপনার পরিচয় আর রুচিকে তুলে ধরে, অন্যদিকে আপনার পেশাদারিত্বে নতুন মাত্রা যোগ করে। তাই পুরো মেইলটি লেখার পর একবার ভালো করে দেখে নিতে পারেন কোনো ভুল রয়েছে কি না। আর সঙ্গে ডিজিটাল সিগনেচার যুক্ত করে ইমেইলটিকে করে তুলতে পারেন আরও সৌন্দর্যমন্ডিত।



১০. ইমোজির ব্যবহার
একটা মজার ব্যাপার হলো, আমরা ব্যক্তিগত কোনোমেইল পাঠালে অনেকেই ইচ্ছেমত হাসি-কান্নার ইমোজি জুড়ে দিয়ে থাকি। আপনার পরিচিত মানুষগুলোর সাথে মনের অনুভূতি ভাগাভাগির জন্য ইমোজি শক্তিশালী একটা অবস্থান হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কর্মক্ষেত্রে আপনার পাঠানো ইমোজির চেয়ে অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি আপনার লেখা শব্দগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিবেন। আর একটা সৌজন্যমূলক হাসির ইমোজি ব্যক্তিটির কাছে আলাদা কোনো গুরুত্ব বহন নাও করতে পারে। কারণ আপনাদের ভেতর পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তি হলো ব্যবসায়িক কোনো ডিল। তাই ইমোজির ব্যবহার আপনার কাছে একটু আন্তরিকতার পরিচয় হতে পারে। কিন্তু সত্যি বলতে এটা ক্ষেত্রবিশেষে একটু বাড়াবাড়িও হয়ে যায়।আপনার কাছে হয়তো প্রফেশনাল যোগাযোগের অন্য কোনো মাধ্যম রয়েছে। কিন্তু একবিংশ শতব্দিতে এসে কাজে হোক কিংবা না হোক; আপনাকে ইমেইল ব্যবহার শিখে রাখতেই হবে। তাৎক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার এই ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমটির ব্যবহার আপনারই পরিচিত অঙ্গনে আপনার সুনাম বাড়াতে পারে। আর ইমেইল যোগাযোগে ভদ্রতা ও শিষ্টাচার বাজায় রাখলে, তা আপনি যাদের সাথে যোগাযোগ করছেন তাদের কাছে, আপনাকে অনন্যভাবে তুলে ধরবে । তাই শক্তিশালী এ মাধ্যমটির ব্যবহারের সময় এ ১০টি শিষ্টাচার ও ভদ্রতার প্রতি খেয়াল রাখবেন।

কোন মন্তব্য নেই