দুই কারণে শপথ নেননি মির্জা ফখরুল - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

দুই কারণে শপথ নেননি মির্জা ফখরুল



বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুই কারণে শপথ নেননি। প্রথমত, দলের মহাসচিব হিসেবে সংসদের বাইরে থেকে দায়িত্ব পালন ও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের যোগসূত্র রক্ষার দায়িত্ব পালনকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত ও শারীরিক অসুবিধার কারণে এক সঙ্গে দুই দায়িত্ব পালনকে কঠিন মনে করছেন তিনি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই ব্যাপারে প্রথমে একমত না হলেও তাকে বুঝিয়ে বলে রাজি করিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, তার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। নিজে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও দলের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক এবং রাজনীতিতে এটাকে চমক ও ইউটার্ন হিসেবে দেখছেন বিএনপি মহাসচিব। সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমার সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে দুইটি প্রধান কারণ আছে। একটি হচ্ছে, আমি মনে করছি যে- এই সময়ে সংসদের বাইরে থাকাটাই আমার জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে আমার দলের যে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূল নেতৃবৃন্দের মধ্যে একটি যোগসূত্র রক্ষা করা এবং আমাদের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করার দায়িত্বটা আমাকেই এখন পালন করতে হচ্ছে। এটা একটা প্রধান কারণ। আরেকটি হচ্ছে, আমার ব্যক্তিগত কিছু অসুবিধা আছে। আমার শারীরিক অবস্থা, সবকিছু মিলিয়ে আমি সবসময় সময় দিতে পারব না। অনেক সময় দুটো দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তো এই কারণেই আমি আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছি সংসদে যাবো না। আর এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

তার নিজের দিক থেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ না থাকলেও দলের সিদ্ধান্তে তার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমার লিডার যিনি এখন আছেন চেয়ারপারসনের দায়িত্বে, তারেক রহমান, উনাকে জানিয়েই তো আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তো এককভাবে সিদ্ধান্ত নিইনি। প্রথমে উনি রাজী হতে চাননি, পরে আমি তাকে বুঝিয়ে বলার পরে তিনি একমত হয়েছেন।


বিএনপির চার এমপির শপথ গ্রহণ
বিএনপির সংসদে অংশগ্রহণ ও তার বিরত থাকার বিষয়টি রাজনীতিতে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন জানতে চাইলে মির্জা আলমগীর বলেন, দলের জন্য আমার মনে হয় যে প্রয়োজন ছিল এমন সিদ্ধান্তের। এর মধ্যদিয়ে অনেক রকমের ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে। ভ্রান্ত ধারণা দূর হবে। আমি এমন একটি অবস্থায় থাকতে পারব, যেখানে আমি দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করতে পারব। 

সংসদে যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিলেও নিজে যাচ্ছেন না- এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন জানতে চাইলে মির্জা আলমগীর বলেন, এটা তো বৃহত্তর স্বার্থে, দলীয় সিদ্ধান্তে। আমরা তো সংসদেই যাচ্ছি কৌশলগত কারণে। কৌশলগত কারণেই আমি বাইরে থাকছি।

রাজনীতিতে বিএনপির কৌশল কি হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব বলেন, রাজনীতিতে বিরোধী দলের রাজনীতি করার তেমন স্পেস নেই। সংসদে যেটুকু স্পেস আছে, সেটুকুকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। একটা কথা সত্য যে, সংসদে যে চারজন বা পাঁচজন যখনই যাচ্ছেন, এতে করে তাদের একটি অফিসিয়াল অবস্থান তৈরি হয়। যাতে সবজায়গায় তারা কথা বলতে পারে এবং তাদের কথার একটি মূল্য থাকে। দেশে যেমন, বাইরেও তেমন। এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা তো আমাদের রাজনীতিতে প্রয়োজন।

বিএনপির সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্তে দলে কেমন প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনও কথা বলিনি। এটা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, তবে শেষ পর্যন্ত আশা করি এটা নিয়ে আপত্তি কারো থাকবে না।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো সংসদে গেছি সংসদকে বৈধতা দেয়ার জন্য নয়। একথা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি। যে নির্বাচনই হয়নি কোনো। ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি, বৈধতাও দেইনি, সম্পূর্ণ কৌশলগত কারণে, গণতন্ত্রের ন্যূনতম স্পেস ব্যবহার করতে সেখানে গেছি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সঙ্কটময় আখ্যায়িত করে মির্জা আলমগীর বলেন, এই মুহূর্তের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অত্যন্ত সংকটময়। আমার মনে হয় যে, এতটা খারাপ বোধহয় আর কখনো ছিল না। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ন্যূনতম পরিবেশ সেটাও এখানে নেই। বিরোধীদল হিসেবে যারা কাজ করছি তাদের প্রচণ্ড একটা চাপের মধ্যে আমাদের কাজ করতে হয়। প্রতিমুহূতের্হ গ্রেপ্তার, মামলা, কোর্টে যাওয়া- আমাদের নরম্যাল লাইফ বলতে তো এখন আর কিছু নেই।



বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনীতিতে শূন্য একটি অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে। সেখানে আমাদের তিন চারজন মিলে পার্লামেন্টে গিয়ে কথাগুলো বলছে, সেগুলো কাজে দেবে বলে আমাদের মনে হয়। অন্তত সেটুকু আসতে হবে। রাজনীতিতে সেটা আসবে। আমার কাছে মনে হয় যে, এটা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ হয়েছে।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি দলীয় ৬ জন বিজয়ীর একজন হলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে সংসদে দলীয় এমপিদের নেতৃত্ব দেয়ার কথা তার। কিন্তু তিনি শপথ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি হারুনুর রশীদ সংসদে দলীয় এমপিদের নেতৃত্ব দেবেন।-
পার্সটুডে

কোন মন্তব্য নেই