বরিশালে বেড়েছে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বরিশালে বেড়েছে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ

ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত ঘটছে নারীর উপর আগ্রাসী যৌন আচরণ, যৌন হয়রানি আর যৌন নিপীড়নসহ ধর্ষণের মত জঘন্যতম অপরাধ। এই আচরণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুসহ সব বয়সী নারীরা।

আর ধর্ষকের বেশি নজর থাকে নব গৃহবধূর দিকে এবং শিশুদের প্রতি নজর থাকে যৌন হয়রানীদের। কখন আবার দেখা যায়, ধর্ষকরা ধর্ষণের পর সেই শিশু আর মেয়েটিকে মেরে ফেলা।



এছাড়াও ধর্ষকরা যৌন আর ধর্ষনের ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ভাইরাল করে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। ধর্ষকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেলে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে সেই ভিডিওটি ইউটিউব ও ফেসবুকে ভাইরাল করে। তখন মেয়েটি স্বাভাবিক ভাবে জীবন-যাপন করতে চাইলো সমাজব্যবস্থা মেয়েটি কে চরম আড় চোখে দেখে। সবাই এমন ভাবে মেয়েটির  তাকিয়ে থাকে মনে হয় চিড়িখানার কোন জীব-জন্তু। সকলের করুণা আর অবজ্ঞা সহ্য না করতে পেরে অবশেষে আত্মহত্যা করে অনেকে। পরিসমাপ্তি ঘটে অফুরান্ত সম্ভাবনাময় জীবনের।

এই ধরণের বেশিরভাগ ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায়। অনেক থাকে অনালোচিত।  আবার মাঝে মধ্যে কোনো কোনো ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। ফাসঁ হলে তখন এ নিয়ে কিছুদিন দেশ জুড়ে চলে হৈচৈ , করা হয় ধর্ষকের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন আর সরকার বরাবর স্বারকলিপি প্রদান। তারপর আবার সবকিছুই চলতে থাকে আগের মতো। বর্তমানে বখাটেদের পাশিপাশি দেশজুড়ে শোনা যাচ্ছে শিক্ষকরাও যৌন হয়রানী আর ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িত। তবে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব শিক্ষকদের। এমন কলঙ্কের দায় নিয়ে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকাটা মোটেও সম্মানের নয়। দেশের শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনা আমাদের দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বরিশাল বিভাগ জুড়ে যৌন হয়রানী আর ধর্ষণের ঘটনা ।

বিভিন্ন উপজেলা থেকে জানা গেছে, বরিশালের মুলাদী উপজেলার দড়িরচর লক্ষ্মীপুর গ্রামে  ঘটেছে এক গৃহবধূকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনা। ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে মামলা করলে স্থানীয় থানা পুলিশ  অভিযান চালিয়ে জড়িত ৪ ধর্ষককে গ্রেফতার করে। পরে তাদের কে আদালতের মাধ্যমে হাজির করলে সংশ্লিষ্ঠ বিচারক আটককৃতদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আগৈলঝাড়া উপজেলায় প্রবাসীর এক স্ত্রী কে ধর্ষণের চেষ্টায় সুব্রত হালদার (২২) নামে এক যুবক কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। আগৈলঝাড়া থানার ওসি আফজাল হোসেন ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।

উজিরপুর উপজেলায়,এক গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার পরে মারধরের অভিযোগে পিতা-পুত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কে গ্রেফতারের পর বরিশাল আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও উজিরপুরে বড়াকোঠা ইউনিয়নের খাটিয়ালপাড়া নুরানী মাদ্রাসার প্রথম জামাতের এক শিশু শিক্ষার্থী কে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম মুসাকে (৫০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় ্ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিশুর পিতা বাদী হয়ে মামলা করলে শিক্ষককে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। 

এদিকে ঝালকাঠীতে এক স্কুল ছাত্রীর ফেসবুক আইডিতে নগ্ন ছবি পাঠিয়ে আলোচনা এসেছে ঝালকাঠি সরকারী হরচন্দ্র্র বালিকা বিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রেজাউল করিম। এই অভিযোগে  শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কাছে শাস্তিমূলক বদলীর সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষক মো রেজাউল করিম বর্তমানে আত্ম- গোপনে  রয়েছেন। তবে এ নিয়ে শিক্ষক ও  অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বরিশাল নগরীর একটি কোচিং সেন্টারে স্কুল ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের শিক্ষক এনামুল হক নাসিমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই স্কুলের এক ভুক্তভোগী ছাত্রী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শিক্ষক এনামুল হক নাসিমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষক নাসিমের বিরুদ্ধে স্কুলের পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্তসহ তার অভিযোগ ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।



গৌরনদী উপজেলায় এক প্রবাসীর স্ত্রী কে ধর্ষনের ঘটনা ভিডিও করে স্বামী পাঠানোর অভিযোগে রাকিব নামে এক যুবক আটক করছে পুলিশ। রাকিব একই উপজেলার পশ্চিম বেজহার গ্রামের শাহিন সরদারের পুত্র । এ ঘটনায় রাকিবের বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগি ওই গৃহবধু। এছাড়াও গৌরনদী উপজেলার চন্দ্রহার গ্রামের খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে এক শারীরিক ও বুদ্ধি  প্রতিবন্ধী এক কিশোরী (১৪) কে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ধর্ষিতার বাবা বাদি হয়ে ধর্ষক লিয়াকত ফকির কে আসামি করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আর ধর্ষিতা কে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ডাক্তারের হাতে এক গৃহবধু (২২) যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা করাতে এসে যৌন হয়রানির শিকার হন কালাইয়া ইউনিয়নের আয়নাবাজ কালাইয়া গ্রামের ওই গৃহবধূ। গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।

কুয়াকাটায় একটি আবাসিক হোটেলে শ্যালিকা অপহরণ করে নিয়ে এসে এসিড নিক্ষেপ ও মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে দুলাভাই সলেমান হাওলাদারের (৩০) বিরুদ্ধে। কৌশলে শ্যালিকা পালিয়ে এসে  জীবন ফিরে পায় । পরে বাসায় পৌছলে রাতে ধর্ষিতার ভাই মো. নাঈম ইসলাম কলাপাড়া থানায় দুলাভাই সলেমান হাওলাদার ও তার সহযোগী মো. মিলনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানী প্রতিরোধে শুক্রবার বেলা ১১ টায় বরিশাল জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে বরিশালের প্রধান শিক্ষকদের সাথে জেলা প্রশাসকের এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি অভিযোগ বক্স বসানোর নির্দেশ দেন। বক্সটি সকলের উপস্থিতে খোলারও অনুরোধ জানান।

বরিশালে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক আনোয়ার জাহিদ ”বাংলা” কে জানিয়েছেন,আইনজীবীদের ব্যবসার জন্য নারী নির্যাতনসহ যৌন হয়রানী আর ধর্ষণের মামলা গুলো দ্রুত বিচারের কাটগড়ায় না নিয়ে জিয়ে রাখে। তিনি আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যৌন হয়রানী আর  ধর্ষণের মামলার পক্ষে মামলা পরিচালনা না করার জন্যও জোড় অনুরোধ জানান। আর এই অপরাধীদের প্রকাশ্যে শাস্তি বিধান চালু করলে এসব অপরাধ প্রতিকার করা সম্ভব হবে। তাই সরকারের পাশাপাশি এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের কেও আরো কঠোর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

রহিমা সুলতানা কাজল নামে বরিশালের এক উন্নয়ন কর্মী ‌‌‘বাংলা’কে জানান,বাংলাদেশে লাগামহীন ভাবে বেড়েই চলছে নারী প্রতি অমানসিক নির্যাতন,যৌন হয়রানী আর ধর্ষণ। একই সঙ্গে বরিশালেও বেড়েছে  এ ধরণের ঘটনা। যখন এই ধরনের ঘটনা দেশে ঘটে তখনই দেশজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন, মানববন্ধন আর সরকার বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে কয়েক দিন দেশ গরম থাকলে তারপর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ অপরাধের কারণ হিসেবে তিনি মনে করছেন, যৌন হয়রানী আর ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া , আসামীরা দ্রুত জামিনে মুক্তি লাভ, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও পন্যগ্রাফী ওয়েব র্পোটালের কারণেই প্রতিনিয়ত দেশের মাটিতে যৌন হয়রানী আর ধর্ষণের মত জঘন্যতম অপরাধ ঘটছে।

প্রতিকার হিসেবে তিনি আরো জানান,বর্হিবিশ্বের মত বাংলাদেশেও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি বিধান মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা। তাহলেই এ শাস্তি বিচার দেখে দেশে অন্যরা  নিজে কে শুদ্রায়ে নিবে।



বরিশালের জয়িতা মর্জিনা বেগম ‘বাংলা’ কে জানান, যৌন হয়রানী আর ধর্ষণের ঘটনা সারা দেশে এমনভাবে বেড়েছে যা নির্মূলে প্রতিরোধ করা অসম্ভব  না। এ ঘটনায় যারা গ্রেফতার হচ্ছে তারা আবার বিভিন্ন কৌশলে আইনের ফাঁকফোকড় দিয়ে বেড়িয়ে আসছে। তিনি আরো জানান ,জনসম্মুখে জড়িত ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান কার্যকর হলে অনেকাংশেই ধর্ষণের মত ঘৃণ্যতম অপরাধ কমে যাবে।  

কোন মন্তব্য নেই