ড্রোন উড়িয়ে পাহাড়ে রোহিঙ্গা ডাকাতের আস্তানা ধ্বংস - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

ড্রোন উড়িয়ে পাহাড়ে রোহিঙ্গা ডাকাতের আস্তানা ধ্বংস

কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ডাকাত ও সন্ত্রাসী আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাত বাহিনীর ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত এসব পরিবারের সদস্যরা সন্ধ্যা নামলে ঘর ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে রাতের জন্য আশ্রয় নেয়। এই বাহিনীর আস্তানার সন্ধানে গত দুই দিন টেকনাফ গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়েছেন র‍্যাব-১৫-এর সদস্যরা। গত শুক্রবার উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালী পাহাড়ে এবং শনিবার হ্নীলা ইউনিয়নের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় পাহাড়ে ড্রোন উড়িয়ে ডাকাতের আস্তানা শনাক্ত করে সেসব ধ্বংস করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমদ বলেন, ‘শুধু হাকিম ডাকাত নয়, পাহাড়কেন্দ্রিক যেসব সন্ত্রাসী ও ডাকাত গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে তাদের ধরতেই আমাদের অভিযান। পাহাড়ে কোনো উগ্রপন্থী গোষ্ঠী, ডাকাত বা সন্ত্রাসের আস্তানা গড়তে দেওয়া হবে না। আমরা এই প্রথমবার পাহাড়ে ড্রোন উড়িয়ে ডাকাতের আস্তানা শনাক্তে অভিযান চালিয়েছি।’ 

র‍্যাব-১৫ সিপিসি-১-এর কম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, ‘টেকনাফের পাহাড়ে রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাত বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা ধ্বংস করতে আমরা অভিযান শুরু করেছি। শনিবার শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অদূরে পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ডাকাত গ্রুপের কয়েকটি আস্তানার সন্ধান পেয়েছি। সেখানে ডাকাতদের অবস্থানের বিভিন্ন ধরনের আলামত পাওয়া গেছে। সেগুলো আমরা ধ্বংস করেছি এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

হাকিম ডাকাত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের তার দলে ভিড়িয়ে টেকনাফ পাহাড়কে অপরাধের ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। দিনে পাহাড়ে অবস্থান এবং রাতে লোকালয়ে ঢুকে ডাকাতি ও অপহরণসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তার এ বাহিনী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিকবার হাকিমকে ধরতে অভিযান চালালেও তার খোঁজ পায়নি। তবে এর আগে পৃথক অভিযানে তার ভাই ও স্ত্রীসহ ডজনখানেক সহযোগী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। এর পরও থামেনি হাকিম ডাকাত বাহিনীর অপরাধ কর্মকাণ্ড। 

টেকনাফ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, প্লানপাড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালী, বড়ডেইল, মাথাভাঙ্গা, বাইন্যাপাড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া, মৌচুনী ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ হাকিম ডাকাত বাহিনীর অপহরণ, খুন ও ডাকাতি আতঙ্কে রয়েছে।

বাহারছড়া শীলখালী বাইন্যাপাড়ার গৃহবধূ রহিমা খাতুন বলেন, ‘রাতে আমাদের ঘরে থাকা খুবই ভয়ের। হাকিম ডাকাতের লোকজন এসে ঘরে ডাকাতি করার পাশাপাশি লোকজনকে তুলে নিয়ে যায়। অনেক সময় তার হাতে খুন হওয়ার ভয়ও থাকে। তাই আমরা বাড়ির লোকজন সন্ধ্যার পর ঘর ছেড়ে অন্য এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিই। পরে ভোর হলে বাড়ি ফিরে আসি।’ 

জানা গেছে, প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে হাকিম বাহিনীর একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। তার বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের উগ্র বিদ্রোহী সংগঠন আল ইয়াকিনের সংযোগ রয়েছে। বাহিনীর হাতে রয়েছে দেশি-বিদেশি অস্ত্রশস্ত্র। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভিডিও বার্তা প্রচার করেছিল হাকিম বাহিনী।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের মংডু রাশিডং এলাকার রোহিঙ্গা জানে আলমের ছেলে আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাত প্রায় ১৪ বছর আগে টেকনাফে পালিয়ে এসে বসবাস শুরু করে। প্রথমে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী বসবাস করলেও পরে পৌরসভার নাইট্যংপাড়া পাহাড়ে ছোট ঝুপড়ি তৈরি করে সেখানে বসবাস শুরু করে। সেখান থেকে জড়িয়ে পড়ে ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। 

হাকিম ডাকাত বাহিনীর হাতে খুন হয়েছিলেন সদর ইউপির সদস্য সিরাজুল ইসলাম। সর্বশেষ গত ২০ অক্টোবর উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের এক হেডম্যানের বসতঘরে ঢুকে ডাকাতি করে যাওয়ার সময় তাঁর স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হাকিম বাহিনী। পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তিন দিন পর দুই বোনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

এই বাহিনীর খোঁজে পাহাড়ে র‍্যাবের অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।


কোন মন্তব্য নেই