তীব্র স্রোত ও ভাঙনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অচলাবস্থা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

তীব্র স্রোত ও ভাঙনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অচলাবস্থা





পদ্মায় তীব্র স্রোত ও ভয়াবহ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে যানবাহন পারাপারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশের ব্যাস্ততম নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায়।

এরই মধ্যে ভাঙনের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে দুটি ফেরিঘাট। বাকি চারটি ঘাটে ফেরি ভিড়তে বেগ পেতে হলেও কোনো রকমে সেখান দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

ঝুঁকি এড়াতে শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে দ্বিতীয় দফায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে লঞ্চ চলাচল।

শুক্রবার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট পরিদর্শন শেষে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে লঞ্চ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত দেন।

লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় লঞ্চ পারাপার যাত্রীদের ফেরিতে নদী পারাপার হতে বলা হয়েছে।

এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়ায় লঞ্চ চলাচল ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় লঞ্চ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্রোত কমলে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু করানো হবে।

বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়ার ১নং ফেরিঘাট ও ২নং ফেরিঘাটে মাঝে থাকা সিদ্দিক ব্যপারীর পাড়া গ্রামের বিশাল অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে অন্তত ২০০ পরিবার তাদের বসতভিটা হারানোসহ বন্ধ হয়ে গেছে ওই দুইটি ফেরি ঘাট।



বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের তথ্য মতে, নদীর দৌলতদিয়া প্রান্তে থাকা ৬টি ঘাটের মধ্যে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ১নং ও ২নং ফেরি ঘাট সম্পন্ন বন্ধ হয়ে গেছে। ৪নং ফেরি ঘাটটি সচল থাকলেও তীব্র স্রোতের কারণে সেখানে ফেরি ভিড়তে পারছে না।

বাকি ৩নং, ৫নং ও ৬নং ঘাট সচল রয়েছে। তবে এ সব ঘাটেও ফেরি ভিরতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে এবং অনেক সময় লাগছে।

সুত্র আরও জানায়, এই নৌরুটে চলাচলের জন্য ১৬টি ফেরি থাকলেও ১৩টি ফেরি সচল রয়েছে। সচল থাকা ফেরিগুলোর মধ্যে রোরো (বড়) ৫টি ফেরি সার্বক্ষণিক চলাচল করতে পারছে। বাকি ৮ টি ফেরি স্রোতের কারণে ঠিকমত চলতে পারছে না। এই ফেরিগুলো মাঝে মধ্যে দীর্ঘ চেষ্টা করে দুই একটি ট্রিপ দিচ্ছে।

শুক্রবার সরেজমিনে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের ২নং ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একের পর এক বড় বড় মাটির চাপ ভেঙে পড়ছে নদীতে। উৎসুক শত শত মানুষ ভাঙ্গন দেখছে।

এ সময় অনেকেই জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে এই এলাকার ভাঙন এতই তীব্র হয়েছে যা বলার মতো নয়। মুহূর্তের মধ্যে বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে বালুর বস্তা ফেলছে তা তেমন কোনো কাজেই আসছে না। পূর্বের স্থাপন করা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের সবগুলো ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে চলে যাবে।

এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় যাত্রীবাহী বাস পারাপারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে বসে আছে।

এ সময় বাস চালকেরা জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে এখন যাত্রী নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হচ্ছে। তারপর পাওয়া যাচ্ছে ফেরি। আগের দিন রাতে অনেক নৈশকোচ দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পর দিন ফেরির নাগাল পাচ্ছে।

এছাড়া গোয়ালন্দ ঘাট থেকে ৯ কিলোমিটার পিছনে গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার জামাই পালের মাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকায় সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়েছে পন্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান।

গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় সিরিয়ালে আটকে থাকা ট্রাক চালকেরা জানান, গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় যেখানে আটকে রাখা হয়েছে, সেখানে নেই কোনো দোকান, হোটেল ও প্রসাব পায়খানার ব্যবস্থা। যে কারণে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও ছিনতাই ও ছিচকে চোরের উৎপাত রয়েছে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় কর্মরত (টিএসআই) মো. রেজাউল করিম জানান, ঘাটের এই অবস্থা দেখে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বিকল্প সড়ক হিসেবে যমুনা সেতু ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারপরও ট্রাক চালকেরা ওই রুট ব্যবহার করতে রাজি না। তারা তেল খরচ বাচানোর জন্য এখানেই বসে থাকছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ রনি জানান, প্রবল স্রোত নদী ভাঙ্গনের কারণ। আমাদের যে ফেরি সচল আছে সেগুলো দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন পার করা সম্ভব নয়। কারণ নদীতে স্রোতের কারণে ছোট ফেরিগুলোকে টেনে কয়েক মাইল দুরে নিয়ে যাচ্ছে। বড় ফেরিঘাটে আসতে সময় লাগছে ২ ঘণ্টারও বেশি। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ীর প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম জানান, হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজবাড়ীর কয়েকটি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের। আমরা জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলার কাজ করে যাচ্ছি। ঘাট সচল রাখতে আমরা সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


কোন মন্তব্য নেই