মুসলিম রাষ্ট্র থেকে প্রবাসীদের ফেরত আনতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ
করোনা সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ। বুধবার রাত ৯টায় সৌদি আরব থেকে ৩৬৬ জনকে ফেরত আনার মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে দু-এক দিনের মধ্যেই কুয়েত থেকে ফিরবেন ৩৪৭ জন। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালদ্বীপ থেকেও পর্যায়ক্রমে প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনা হবে। বুধবার সমকালকে এ তথ্য দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি জানান, যারা ফিরবেন তাদের প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বুধবার অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ দেওয়া হবে। তাদের নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার জন্য পাঁচ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা ব্যাংক লোনের ব্যবস্থাও করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ নিজ আগ্রহে এই প্রবাসীদের ফেরত আনছে না। বরং একটা পরিস্থিতিতে ফেরত আনতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে জেলে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার জন্য আগে থেকেই চাপ ছিল। করোনা সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে অনেক দেশই প্রবাসীদের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অবস্থায় ওই সব দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে হচ্ছে, কারণ এখন ফেরত না নিয়ে এলে পরে স্বাভাবিক সময়ে ওই সব দেশ বাংলাদেশ থেকে আর লোক নেবে না। তিনি জানান, বুধবার রাতে সৌদি আরব থেকে ৩৬৬ জন আসছেন প্রথম দফায়। তাদের মধ্যে ২৩৪ জন সে দেশের জেলে ছিলেন এবং ১৩২ জন ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন।
জেলে থাকাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগে দেখা হবে তারা কী অপরাধে জেলে ছিলেন। কারণ অনেকেই বৈধ কাগজপত্র কিংবা আকামা না থাকার কারণে বিদেশে জেলে ছিলেন। তারা তো খালি হাতে ফিরবেন। এ কারণে তাদের প্রথমে পাঁচ হাজার টাকা এবং পরে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার জন্য পাঁচ লাখ থেকে সাত লাখ টাকা ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। আর এদের পরিবারে কারও যদি কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়, তাহলে তারা তিন লাখ টাকা অনুদান পাবেন। আর যারা হত্যার দায়ে, মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় কিংবা এ ধরনের অপরাধের দায়ে জেলে ছিলেন, তাদের শাস্তির মেয়াদের বাকি অংশ দেশে এসে ভোগ করতে হবে। দেশে ফেরার পর তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বুধবারের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, প্রবাসীরা দেশে ফেরার পর তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কোয়ারেন্টিন সেন্টার প্রস্তুত করেছে যেখানে প্রায় চার হাজার জনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ মালদ্বীপকে ১০০ টন চালসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। এই সহায়তা সামগ্রী নিয়ে বুধবারই নৌবাহিনীর একটি জাহাজ মালদ্বীপে রওনা হওয়ার কথা।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত সংকটময় পরিস্থিতিতে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধসহ একটি মেডিকেল টিম কুয়েতে পাঠানো হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই