বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে ধস, মিলছে না অর্ধেক শিক্ষার্থীও - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে ধস, মিলছে না অর্ধেক শিক্ষার্থীও












করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইনে পাঠদানের পাশাপাশি সামার-২০২০ সেমিস্টারে শিক্ষার্থীও ভর্তি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থী পেতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বড় ধরনের ধসের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা মেনে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হলেও করোনার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত আসন এখনো পূরণ করতে পারছে না। এমনকি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফরম অবিক্রিত রয়েছে। এদিকে আগামী পহেলা জুলাই থেকে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি। সে হিসাবে ভর্তির আর ৯ দিন বাকি থাকলেও এখনো অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের প্রত্যাশার ধারে-কাছেও যেতে পারেনি। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়কেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে আসনের অর্ধেক শিক্ষার্থী নিয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, অনলাইনের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারলেও স্থবির হয়ে পড়েছে ভর্তি কার্যক্রম। সামার সেমিস্টারে ভর্তি ফরমের বেশির ভাগই এখনও অবিক্রিত। করোনার বন্ধ কবে শেষ হয়, সে বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আবার করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শিক্ষার্থীদের ঢাকায় ফেরার সম্ভাবনা অনেক কম। সবমিলিয়ে সামার সেমিস্টারের ভর্তি নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহুল প্রচলিত র‌্যাংকিং অনুযায়ী প্রথম দিকে থাকা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। রাজধানীর আফতাব নগরে অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মোট আসনের প্রায় ৭০ শতাংশ ফরম বিক্রি হয়েছে। তবে ‘বি’ এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোট আসনের বিপরীতে তাদের অর্ধেক ফরমই বিক্রি করতে পারেনি। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সামার-২০২০ সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বড় ধরনের ধসের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী পেতে তেমন একটা অসুবিধা না হলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী ভর্তি একবারেই কম। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চলতি সেমিস্টারে ৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ১৫০, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ১৩০ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) ৩০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।

সামার-২০২০ সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার দুটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমএম শহিদুল হাসান। তার মতে, প্রথম কারণটি হচ্ছে, সামারের এই সময়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলমান থাকে। ফলে বাজারে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীই কম। আরেকটি হচ্ছে চলমান করোনা পরিস্থিতি।
সাক্ষাৎকারে ড. এমএম শহিদুল হাসান আরো বলেন, করোনার ফলে এখন অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ফলে অনেকের ল্যাপটপ নেই, স্মার্টফোনও নেই। তারা ভর্তিতে অনীহা দেখাচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী ভাবছে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষায় তারা ভাল করতে পারবে না। এটিও শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া আর্থিক সমস্যার কারণেও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছে না।

শিক্ষার্থীর অভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে জানিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না পেলে ভাড়া ক্যাম্পাস নিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। কারণ শিক্ষার্থী না পেলে তারা ক্যাম্পাসের ভাড়া দেবে কীভাবে আর শিক্ষকদের বেতনই বা দেবে কীভাবে?

অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে সমগ্র বিশ্বই এখন স্থবির। আর্থিক সংকটের কারণেই মূলত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছে না। কেননা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ছোট ছোট ছোট ব্যবসার সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের একটা বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। সেজন্যই তারা তাদের ছেলে-মেয়েকে ভর্তি করাতে পারছে না।

কোন মন্তব্য নেই