স্মার্ট সিটি হওয়ার যোগ্যতা নেই ঢাকার - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

স্মার্ট সিটি হওয়ার যোগ্যতা নেই ঢাকার


ঢাকা শহরে সময়মতো প্রকল্প শেষ না হওয়ায় সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শামসুল হক: কেবল মেট্রোরেল নয়, অনেক প্রকল্পেই ঢাকার বাসিন্দারা উন্নয়নের যন্ত্রণা ভোগ করছেন। অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে যত দেরি হয়, এর উপযোগিতা তত কমে যায়। শহর মানেই কানেক্টিভিটি। শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো স্থানে দ্রুত যাতায়াতের সুযোগ থাকতে হবে।

 সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যেসব আইন হয়েছে, তা তার্যকর করা যাচ্ছে না কেন?

শামসুল হক: এর পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের চাপ কাজ করছে। জাবালে নুরের যে বাসটি চাপা দিয়ে দুজন শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলল, বিআরটিএ সেই বাসের লাইসেন্স বাতিল করল। ওই মালিকের আরও বাস আছে। সেগুলো বহাল তবিয়তে আছে। কিছুদিন পর দেখা যাবে জাবালে নুরও নাম পাল্টে রাস্তায় নামবে। কেবল ওই দুর্ঘটনা নয়, সব ক্ষেত্রেই তাঁরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন।

আমাদের উন্নয়ন নীতি কী হওয়া উচিত?

শামসুল হক: উন্নয়নের লক্ষ্য হবে বৃহত্তর মানুষের কল্যাণ। কেউ উন্নয়নের বাইরে থাকবে না। একটি উন্নয়নের জন্য আরেকটি উন্নয়ন ব্যাহত করা যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটল। তারা ৮৭ বছরের পুরোনো নিয়ম ভাঙল। আগে পণ্য খালাস করা হতো বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে। প্রায়ই বন্দরে শ্রমিক ধর্মঘট হতো। বন্দর কর্তৃপক্ষ উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিল এসওটির (সাপ্লাই অ্যান্ড ট্রান্সফার) ভিত্তিতে। এতে বন্দরের কর্মক্ষমতা ও গতি অনেক বেড়ে গেল। এখন সিঙ্গাপুরে প্রতি ঘণ্টায় খালাস হয় ২৪টি কনটেইনার। চট্টগ্রামে ১৪টি। আগের তুলনায় এটি বড় অগ্রগতি।

প্রকার মহাসড়কে মাশুল বা টোল আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু আমাদের সেই অর্থে মহাসড়ক আছে কি?

শামসুল হক: মহাসড়কের গতি হতে হবে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন। নছিমন-করিমন-রিকশা-স্কুটার চলবে না। সড়কের পাশে হাটবাজার থাকবে না। কিন্তু আমাদের দেশে সেই ধরনের সড়ক নেই। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে সম্প্রতি। এখানে আগে ৪৩টি স্পিডব্রেকার ছিল। এখন একটিও নেই। মহাসড়ক থাকলে সরকার টোল আদায় করতে পারে। কেননা সড়ক কেবল নির্মাণ করলেই হবে না, সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত জরুরি। কিন্তু আমাদের এখানে যাকে মহাসড়ক বলছি, তা লোকাল রাস্তার চেয়েও খারাপ। মহাসড়কের সুবিধা পেলে জনগণ টোল দিতে আপত্তি করবে না।

সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কাজে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। তারপরও দেখি খানাখন্দে ভরা।

শামসুল হক: আমরা সড়ক মেরামত করি গর্ত বা ফাটল হয়ে যাওয়ার পর। কোনো রকমে সেই গর্ত মেরামত করার কিছুদিন পর আবার গর্ত হয়, আবার মেরামত করি। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়। কিন্তু যেসব দেশে সড়ক ব্যবস্থাপনা উন্নত, সেখানে তারা গর্ত হতেই দেয় না। আগাম ব্যবস্থা নেয়।

প্রিবহনকে ঘিরে একধরনের মাফিয়া চক্র গড়ে উঠেছে, যারা সড়কে শৃঙ্খলা আনতে দিচ্ছে না। এর প্রতিকার কী?

শামসুল হক: রাজনৈতিক দৃঢ়তা ছাড়া এদের নিবৃত্ত করা যাবে না। গণপরিবহনকে ঘিরে একধরনের মনস্টার তৈরি হয়েছে। এদের কাছে সরকারও অনেক সময় জিম্মি হয়ে পড়ে। আর এই চক্রে সরকারি ও বিরোধী—সব দলের লোক আছে। এরা পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করে। শ্রমিক ইউনিয়নের ইলেকশনের নামে চাঁদা তোলে। এরা ঠিক করে দেয় কোন রুটে কোন বাস চলবে কি চলবে না। গণপরিবহনকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করতে হলে এদের দৌরাত্ম্য কমাতেই হবে। মেয়র আনিসুল হক যখন ঢাকা চাকা শুরু করেন, তখনো এরা বাধা দিয়েছিল। কিন্তু তিনি সব বাধা মোকাবিলা করেই কাজটি করেছেন। এখন ঢাকা চাকা মডেল পরিবহন হিসেবে বিবেচিত।

ঢাকা শহরের যানজটে কত ক্ষতি হয়, এ সম্পর্কে আপনাদের কাছে কোনো হিসাব আছে কি?

শামসুল হক: কয়েক বছর আগে একটা হিসাব করা হয়েছিল—১১ বিলিয়ন ডলার বার্ষিক ক্ষতি। তবে এই ক্ষতির পুরোটা অর্থ দিয়ে মাপা যাবে না। যেমন ব্যক্তির ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ, অসুস্থতা।

 প্রতিবেশী, এমনকি উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণে ব্যয় অত্যধিক বেশি। এর কারণ কী?

শামসুল হক: এর একটি সংগত কারণ আছে। আরেকটি অসংগত। সংগত কারণ হলো আমাদের ভূমি নিচু। জলাভূমি উঁচু করে আমরা সড়ক নির্মাণ করি। অন্যান্য দেশে ভূমি উঁচু। সেখানে মাটি ভরাট করতে হয় না। দ্বিতীয়ত সড়ক নির্মাণসামগ্রী বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। আর অসংগত কারণ হলো প্রকল্প বাস্তবায়নে অযথা বিলম্ব। আমরা প্রকল্প নেওয়ার পর ভূমি অধিগ্রহণ করি। অন্যান্য দেশে ভূমি অধিগ্রহণ করে প্রকল্প হাতে নেয়।

 ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করার উপায় কী?

শামসুল হক: ঢাকা শহরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সেটি বিজ্ঞানভিত্তিক ও সমন্বিত নয়। এ কারণেই এর বসবাসযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। এক সংস্থা আরেক সংস্থার ওপর দোষ চাপাচ্ছে। এভাবে একটি আধুনিক শহর চলতে পারে না। দুর্বল কাঠামোর ওপর কোনো টেকসই উন্নয়ন হয় না। ঢাকা শহরের সামর্থ্যটাও বুঝতে হবে। অনেক দেশ তাদের রাজধানী শহর সরিয়ে নিয়েছে। মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুর থেকে পুত্রজায়ায়। ভারত দিল্লির চাপ কমাতে বাণিজ্যিক রাজধানী করেছে মুম্বাইয়ে। পাকিস্তান করাচি থেকে ইসলামাবাদ সরিয়ে নিয়েছে। মিয়ানমার ইয়াঙ্গুন থেকে নেপিডোতে নিয়ে গেছে। ইন্দোনেশিয়াও জাকার্তা থেকে রাজধানী শহর সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তদুপরি ঢাকা শহর প্লাবন ভূমি, পানিনিষ্কাশন করে একে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। প্লাবনমুক্ত এলাকায়ই রাজধানী শহর সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। ৫০ বছর, ১০০ বছর পর কী হবে, সেটি মাথায় রেখে পরিকল্পনা নিতে হবে। আধুনিক শহর হতে হয় স্টেডিয়ামের মতো। সব দিক দিয়ে মানুষের আসা–যাওয়ার সমান সুযোগ থাকবে। ঢাকা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, স্মার্ট সিটি হওয়ার যোগ্যতা নেই। তাই আমার প্রস্তাব হচ্ছে রাজধানী শহর সরানো হোক। সেটি পূর্বাচল ও এর আশপাশের উঁচু ভূমিতে হতে পারে। 

কোন মন্তব্য নেই