চাঁদের বুকে প্রথম নারী পা রাখবেন ২০২৪ সালের মধ্যে
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, ২০২৪ সালের মধ্যে চাঁদে প্রথমবারের মতো নারী পাঠানোর প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে আর্টেমিস। প্রকল্পে শুধু নারী নয়, তার সঙ্গে একজন পুরুষও পাঠানো হবে। তবে নাসা বলছে, তারা যে পরিকল্পিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে তা ঠিক রাখতে হলে মার্কিন কংগ্রেসকে ৩২০ কোটি ডলারের তহবিল তাদের হাতে সময়মতো তুলে দিতে হবে, কারণ নির্ধারিত সময়ে চাঁদের বুকে নামতে হলে তাদের সময়মতো একটি অবতরণ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। আর্টেমিস প্রকল্পে নভোচারীরা অ্যাপোলোর মতো একটি ক্যাপসুলে ভ্রমণ করবেন, যেটির নাম দেওয়া হয়েছে ওরিয়ন। এসএলএস নামে একটি রকেট এটি উৎক্ষেপণ করবে।
গত সোমবার জিম ব্রাইডেনস্টাইন নামের নাসার এক প্রশাসক বলেন, ‘চাঁদের বুকে আর্টেমিস অবতরণের জন্য আগামী চার বছরে নাসার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ বিলিয়ন ডলার। এই আর্টেমিস প্রকল্পের বাজেটের মধ্যে যেসব খরচ ধরা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে এসএলএস উৎক্ষেপণের খরচ, ওরিয়ন বাবদ সব ব্যয়, এ ছাড়াও চাঁদে মানুষের নামার খরচ এবং নভোচারীদের মহাকাশ স্যুটের জন্য যাবতীয় খরচ।’
জিম ব্রাইডেনস্টাইন গত বছরের জুলাই মাসে মার্কিন টিভি চ্যানেল সিএনএনকে বলেছিলেন, ‘এমন একজন যার মহাকাশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে, যিনি ইতিমধ্যেই কোন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গেছেন''। তিনি আরও বলেছেন, নভোচারী গোষ্ঠীর মধ্যে থেকেই কাউকে এই মিশনের জন্য বেছে নেওয়া হবে।’
তিনি যখন ওই সাক্ষাৎকার দেন তখন ১২ জন নারী নভোচারীর নাম সামনে এসেছিল। এরপর আরও পাঁচজন নারী নভোচারী নাসার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এ বছরের শুরুতে প্রশিক্ষণ শেষ করে তারা নাসায় যোগ দিয়েছেন। তবে যোগ্যতার জন্য যেসব মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামী চার বছরের মধ্যে সেগুলো অর্জন করে মিশনের জন্য তারা তৈরি হতে পারবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আর্টেমিসের জন্য নভোচারী নির্বাচনের সময়সূচি জানতে চাওয়া হলে নাসার প্রধান বলেছেন, প্রথম মিশনটি পাঠানোর অন্তত দুবছর আগে তারা নভোচারীদের দলটি নির্বাচন করতে চান।
তিনি বলেন, ‘আর্টেমিসে নভোচারী হিসেবে কারা যাবেন সেটা নির্বাচনের প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ আরও একটা কারণে যে এটা একটা অনুপ্রেরণা হিসেবেও কাজ করবে বলে আমি মনে করি।’
নাসার মতো হোয়াইট হাউসও চাঁদে আবার নভোচারী পাঠাতে আগ্রহী। কারণ যুক্তরাষ্ট্র চায় মহাকাশ ভ্রমণে তাদের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। এ প্রকল্পে নাসার অন্যতম উদ্দেশ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যে বরফ-পানি জমে রয়েছে, সেই মূল্যবান নমুনা সংগ্রহ করে আনা। এটা থেকে চাঁদেই স্বল্প খরচে রকেটের জন্য জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। এটা করা গেলে পৃথিবী থেকে রকেটের জন্য জ্বালানি বহন করে নিয়ে যেতে হবে না এবং এটা চন্দ্র-অর্থনীতির একটা ভিত তৈরি করবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স চীনের মহাকাশ অভিযানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে চীন প্রথম চাঁদের বেশ ভেতরের দিকে একটি রোবট চালিত রোভার যান বেশ স্বচ্ছন্দভাবে অবতরণ করিয়েছিল।
চীন এখন পৃথিবীর গবেষণাগারে চাঁদের মাটির নমুনা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের প্রথম মিশন পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া চীনা নভোচারীদের জন্য নতুন প্রজন্মের মহাকাশযান তৈরি করছে, যা চাঁদে পাঠানোর উপযোগী। যদিও ২০২৪ এর মধ্যেই চীন এই মহাকাশযান বানিয়ে ফেলতে পারবে এমন ইঙ্গিত নেই, কিন্তু এই দশকেই সে লক্ষ্যে চীন অনেকটাই এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই