জলঢাকায় মাল্টা বাগান করে স্বচ্ছলতার দিশারী আশরাফুল - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

জলঢাকায় মাল্টা বাগান করে স্বচ্ছলতার দিশারী আশরাফুল



 


সাধারণ ফসলের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ। তাই মাল্টা বাগান করে এখন এলাকায় স্বচ্ছলতার দিশারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন আশরাফুল ইসলাম। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার নানা পেশার মানুষ দেখতে আসছেন তার মাল্টা বাগান।


আশরাফুল ইসলামের বাড়ী নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের হরিশচন্দ্রপাট গ্রামে।

তিনি ওই এলাকার মৃত অলিম উদ্দিন এর সন্তান।


আশরাফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস হতে প্রায় তিন বছর আগে আমাকে ৬০টি বারি১ জাতের মাল্টা গাছের চারা দেয়। তারপর আমি চারাগুলো ১৬শতক জমিতে লাগাই। সেখান হতে ১২টি চারা নষ্ট হয়। এখন ৪৮টি গাছ আছে। আমি কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণের নির্দেশনায় শ্রমিক নিয়ে গাছগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করি। দ্বিতীয় বছরে আমি গাছগুলো হতে ফল পাই। সেখান হতে কিছু ফল পাইকারদের নিকট বিক্রি করি। এবার তৃতীয় বছরে ৪৮টি গাছেই ফল ধরেছে। প্রতিটি গাছে প্রায় আড়াই মণ বা ১০০কেজি করে ফল পেয়েছি। ৪৮টি গাছে প্রায় ১২০মণ মণ বা ৪৮০০কেজি অধিক ফল পেয়েছি। এসব ফল বাজারজাত করার পর যে টাকা পেয়েছি তা কখনো কল্পনা করতে পারিনি।


এলাকার বেকার যুবকদের সহায়তার কথা জানিয়ে আশরাফুল বলেন, আমার এলাকায় অনেকেরই অনেক জমি ফাঁকা পড়ে থাকে। আমাকে দেখে শিক্ষিত বেকার যুবকেরা সেই জমি গুলোতে মাল্টা বাগান করতে পারে। হয়তোবা ওরা আমার চেয়ে বেশি লাভবান হবে। অসচ্ছল পরিবার হলে আমি বিশ্বাস করি সেই পরিবারগুলোতে অবশ্যই সচ্ছলতা আসবে।


বাগান সম্প্রসারণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মাল্টা এমন একটি ফল সারা বছর গাছেই সংরক্ষণ করা যায়। এসব ফল বাজারের চাহিদা মতো যে কোন সময় গাছ হতে সংগ্রহ করে বিক্রি করা যায়। এখানে লাভের মুখ দেখার পর আমি আরো দুই বিঘা জমিতে ২৫০টি মাল্টা গাছের চারা লাগিয়েছি। মাল্টা বাগান করে অন্যান্য ফসলের চেয়ে আমি দ্বিগুন লাভবান হয়েছি। আমি মাল্টা বাগান করে যেমন লাভবান হয়েছি। তেমনি এই অঞ্চলের মানুষের শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরনে ভূমিকা রাখছি।


আশরাফুলের স্ত্রী মনি আক্তার বলেন, এই বাগানের মাল্টা ফল সম্পুর্ণ ফরমালিন মুক্ত ও টাটকা। এছাড়া অন্যান্য ফসলের চেয়ে মাল্টা বাগান করলে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব। বারি১ মাল্টা চিনবার উপায় হল এর পিছনে পয়সার মত একটি দাগ আছে। এই জাতের ফলটি খুবই স্বাদের এবং মিষ্টি। এবার বাগান হতে প্রতি মন মাল্টা ৫২’শ টাকা করে বিক্রি করছি। যা কেজি দর ১৩০টাকা। এসব ফল বাজারে পাইকারেরা ১৮০-২০০টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে।


ওই বাগানে নিয়মিত শ্রমিক দুলাল চন্দ্র ও ক্ষিতিশ চন্দ্র বলেন, প্রায়দিন বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাগানটিতে আসে। তারা রিকশা ভ্যান কিংবা মটরগাড়ীতে আসে। অনেকে ফলগুলো স্পর্শ করে। অনেকে স্বাদ নেয় গাছের তাজা ফল খেয়ে। কেউবা গাছের কাছে গিয়ে ফল হাতে ছবি তোলে। যাবার সময় অনেকে বাগানের তাজা মাল্টা ফল কেজি দরে কিনে নেন।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহ্ মোহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, ‘উপজেলাটিতে পরীক্ষামূলক কিছু মাল্টা বাগান করা হয়েছে। সবগুলোতে মোটামুটি কৃষকেরা সফল হয়েছে। এই এলাকার মাটি অম্লযুক্ত যা মাল্টা চাষের জন্য উপযোগি। আকার রং ও মিষ্টতার কারণে বারি১ মাল্টা চাষাবাদের জন্য ভাল। অন্য কোন ফসল বা ফল আবাদ করে এত দ্রুত লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। যা মাল্টা বাগান করে সম্ভব।। যেহেতু ২/৩ বছরে গাছে ফল আসে।’


উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান বলেন, ‘মাল্টা চাষ অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখছে,তেমনি কৃষকগণও লাভবান হচ্ছে। মাল্টা,কমলায় যে ভিটামিনগুলো আছে তা মানব শরীরের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এসব ফল বাইরে থেকে আনার ফলে দাম বেশি থাকায় প্রান্তিক লোকজন কিনতে পারে না। আমাদের এলাকার মাটি মাল্টা ফলের জন্য উপযুক্ত । প্রত্যেকে আঙ্গিনায় কিংবা বাড়ির কাছে ২/৪টি করে এই ফলের চারা লাগাতে পারেন।’



কোন মন্তব্য নেই