‘ফুটবল ঈশ্বর’ এর মৃত্যু ও ‘ম্যারাদোনিয়ান চার্চ’ - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

‘ফুটবল ঈশ্বর’ এর মৃত্যু ও ‘ম্যারাদোনিয়ান চার্চ’



 

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, সবচেয়ে বিখ্যাত ও সবচেয়ে ভালোবাসার সন্তানটিকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা আজ বেদনার্ত। বুয়েন্স আয়ার্সসহ দেশের সর্বত্র শোকের মাতম। ‘ঈশ্বরের উপহার’ এই ফুটবলার জাদুকরি পারফরম্যান্স দিয়ে লাখো সমর্থকের কাছে হয়ে উঠেছিলেন ‘ফুটবল ঈশ্বর’। ফুটবলের এই ঈশ্বরের বিদায় তারা মেনে নিতে পারছেন না।  


কিংবদন্তির মৃত্যু নিয়ে ফ্রান্সিসকো সালাভেরি ২৮ বছর বয়সী এক আর্জেন্টাইন সে দেশে গণমাধ্যমে বলেছেন, আমি এটা বিশ্বাসই করতে পারি না। অবিশ্বাস্য। এটা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়, মনে হয় স্রেফ মজা।’


বুয়েন্স আয়ার্সের ঐতিহ্যবহুল ওবেলিস্ক স্কয়ার কিংবা ম্যারাডোনার সাবেক ক্লাব বোকা জুনিয়র্সের স্টেডিয়াম বোমবোনেরার সামনে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার ভক্ত। এভাবে শহরজুড়ে বিমর্ষ মানুষের ভিড়। অনেকে হাতে ব্যানারা, যার বেশিরভাগেই লেখা ছিল ‘ডি১০এস’। স্প্যানিশ ভাষায় ‘ডিআইওএস’ বা ‘ডিওস’ এর অর্থ ‘ঈশ্বর’। এসব ভক্তের কাছে ম্যারাডোনা ঈশ্বরের আসনে বসেছিলেন। 


ফুটবল যদি আর্জেন্টিনায় একটি ধর্ম জয়, তবে সেখানে সত্যিকার অর্থেই ঈশ্বর ছিলেন ম্যারাদোনা— বিশেষকরে, ম্যারাদোনিয়ান চার্চ প্রতিষ্ঠাতাদের ক্ষেত্রে তো বটেই। মূলত ইন্টারনেট-ভিত্তিক এই গ্রুপের সদস্যরা খেলোয়াড়টিকে শ্রদ্ধা জানাতে ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। 


ম্যারাদোনা ভক্তদের বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৪টা) বুয়েন্স আয়ার্সের ট্রেডমার্ক ওবেলিস্ক-এ হাজির হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ‘ম্যারাদোনিয়ান চার্চ’। বলাবাহুল্য, বুয়েন্স আয়ার্সে ফুটবল-কেন্দ্রিক অধিকাংশ উদযাপন হয়ে থাকে ঐতিহ্যবহুল ওবেলিস্কে।


গত ৩০ অক্টোবর ম্যারাদোনার ৬০তম জন্মদিনে তার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে শরীরে একটি ট্যাটু আঁকিয়েছেন গুইলার্মো রদ্রিগেজ নামরে এক ভক্ত। আজকের ‘ধর্মসমাবেশ’ নিয়ে তার অনুভুতি প্রকাশ করলেন একটু ভিন্নভাবে, আমি কথা বলতে চাই না। আমি আজ ওবেলিস্কে যাব।  


এ সময় চোখের জল ধরে রাখতে পারননি ৪২ বছর বয়সী রদ্রিগেজ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলে যান, আইডলের সঙ্গে আলিঙ্গন করার স্বপ্ন আর কখনই পূরণ হবে না তার। 


৬৮ বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল ওতুরি বলেন, আমি পুরোপুরি হতবিহ্বল, বিষাদগ্রস্ত। আমি মিথ্যা বলছি না। আমি মনে করি, অসাধারণ এক মানুষ ছিলেন তিনি, যদিও আশেপাশে ভালো মানুষ পাননি এবং যারা ছিলেন তারা শুধু সুবিধাই নিয়েছেন।


ম্যারাদোনার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে ৫২ বছর বয়সী মার্সেলা রদ্রিগেজ বলেছেন, আমার ১২ বছর বয়সী ছেলে এসে বলল: মা, ম্যারাদোনা মারা গেছেন। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি।

আসলে ঠিকমতো তার উপাসনাও করতে পারিনি, তার জন্য আমার অনেক কষ্ট লাগছে।


১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ম্যারাদোনার বিখ্যাত ‘হ্যান্ড অব গড’ এবং পরিশেষে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্মৃতিচারণ করে মাউরিসিও পাসাদোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, আজ আমার হূদয়ে যে ব্যথা অনুভুতি হচ্ছে, গোটা জীবনে এমনটি খুব কম সময়ই হয়েছে। ২৯ জুনের (১৯৮৬, বিশ্বকাপ ফাইনাল) মতো আনন্দ আমি জীবনে কমই পেয়েছি যেদিন আমরা হাত দিয়ে আকাশ ছুঁয়েছি, সেই আকাশ আজ অন্ধকারাচ্ছন্ন ও আমাদের চোখ জলে ভরা।


ক্যারিয়ারজুড়ে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার জন্য অনেক বদনামও রয়েছে ম্যারাদোনার। এজন্য আর্জেন্টাইনদের কারো কারো চোখে তিনি নিন্দিতও। ম্যারাডোনাকে নিয়ে একটি পোস্ট দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন এক আর্জেন্টাইন। তিনি লিখেছেন, ম্যারাদোনা ছিলেন একজন নোংরা ও পাপী ঈশ্বর-যিনি মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের সবচেয়ে কাছাকাছি ছিলেন। 


বুয়েন্স আয়ার্স টাইমস অবলম্বনে

কোন মন্তব্য নেই