সম্পর্ক মেরামত না বিশ্ব রাজনীতি? তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায়
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের আমন্ত্রণে এসেছেন তিনি। এখানে তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যু নিয়ে যেমন আলোচনা করবেন তেমনি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতির নানা ইস্যুতে মতবিনিময় করবেন। সফরকালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে। স্মরণ করা যায়, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে ব্যর্থ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা জামায়াতে ইসলামীর বড় নেতাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলানোর ঘটনায় আঙ্কারার সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল। ওই বিচার প্রশ্নে পাকিস্তানের পাশাপাশি বড় সমালোচকের ভূমিকায় ছিল তুরস্ক। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পদ্ধতি ও রায় নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল তুর্কি সরকার। বিশেষ করে ২০১৬ সালে জামায়াতের আমীরের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর দেশটির প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কড়া। তারা ঢাকা থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে আঙ্কারায় ডেকে নিয়ে বসিয়ে রাখেছিল প্রতিবাদ হিসেবে। অবশ্য ঢাকাও সমান প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। ঢাকা-আঙ্কারা পড়তি সম্পর্কে ওই সময়ে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। যেটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভেস্তে যেতে বসা সম্পর্ক জোড়া লাগার উপলক্ষ হিসেবে সামনে আসে। সেই সময়ে প্রকাশ্যে এরদোগান সরকারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। বিশ্লেষকদের মতে, ক্যুর প্রতিবাদে ঢাকার সরব অবস্থান আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে যাওয়ার পথেয় হিসেবে কাজ করেছে। সেই থেকে পুনর্নির্বাচিত শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ক্রমেই তুরস্কের সম্পর্ক বাড়ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চলমান সফর সম্পর্কের বিদ্যমান অবস্থাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্যই। ঢাকা বলছে, বিশ্ব রাজনীতিতে তুরস্কের নতুন পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের আকাঙ্খা রয়েছে। যদিও তারা নানা যন্ত্রণায় আছে। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট এরদোগান তুরস্ককে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যেখান থেকে দেশটি বিশ্ব রাজনীতিতে ?গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমনকি বর্তমানে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বাঘা বাঘা শক্তিশালী দেশ ও অঞ্চলকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি। সৌদি আরবসহ যে সকল দেশ পশ্চিমা বিশ্বকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাদের কট্টর সমালোচক তুরস্ক। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়ার জেরে সৌদি আরব তুরস্কের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু সেটি খুব একটা আমলে নেয়নি এরদোগান সরকার। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর তুরস্ক এখন তার অর্থনৈতিক, সামরিক ও ইসলামিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় আঙ্কারার অবস্থান এখনো প্রান্তিক পর্যায়ে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে সেটা এমন না-ও থাকতে পারে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় দেশটি তার অবস্থান জোরালো করার চেষ্টা করছে। এখানে তারা চীনের সহায়তা পাচ্ছে। সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তান তো আছেই। ওআইসি নিয়েও সক্রিয় তুরস্ক। তারা মুসলিম রাষ্ট্রের ওই জোটে বাংলাদেশের মতো মডারেট কান্ট্রিকে পাশে চায়। বিশ্বে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি; চীনের সঙ্গে তুরস্কের বন্ধুত্ব; ভারতের সঙ্গে তাদের তিক্ত সম্পর্ক; এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের অসুখী সম্পর্ককে দক্ষিণ এশিয়ায় আঙ্কারার জন্য বড় সুযোগ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশও তাদের রাডারের বাইরে নয়। উল্লেখ্য, ঢাকা আসার পথে জাকার্তায় ইসলামোফোবিয়া ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায়ের জোরালো অবস্থান কামনা করেছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুৎ চাভুসগ্লু। তার ওই বক্তব্যকে বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন ঢাকার কূটনীতিকরা।
কোন মন্তব্য নেই