জো বাইডেনকে 'লক্ষ্য করে' কিম জং-আনের নতুন সামরিক পরিকল্পনা ঘোষণা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

জো বাইডেনকে 'লক্ষ্য করে' কিম জং-আনের নতুন সামরিক পরিকল্পনা ঘোষণা

 


নতুন নতুন সমরাস্ত্র তৈরির ইচ্ছা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আন সম্প্রতি তার জন্মদিন পালন করেছেন।


অস্ত্রের এই দীর্ঘ তালিকার মধ্যে রয়েছে: দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যা আরো নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে, রকেট কিম্বা ক্ষেপণাস্ত্রে বহনযোগ্য বিশালাকৃতির বোমা বা ওয়ারহেড, গুপ্তচরবৃত্তির জন্য স্যাটেলাইট এবং পরমাণু শক্তি চালিত ডুবোজাহাজ ইত্যাদি ইত্যাদি।


বলা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়ায় গত পাঁচ বছরের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দেশটির এই সামরিক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়, যাকে পশ্চিমা বিশ্ব বড় ধরনের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে।


একই সঙ্গে এই ঘোষণাকে দেখা হচ্ছে কিম জং-আনের ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবেও। কারণ এই পরিকল্পনার কথা এমন এক সময়ে ঘোষণা করা হলো যখন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে এবং নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।


এর মধ্যে কিম জং-আন উত্তর কোরিয়ার শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সর্বোচ্চ সেক্রেটারি জেনারেল বা মহাসচিব পদেও উন্নীত হয়েছেন।


কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের আগে যখন শোরগোল চলছে তখন মি. কিমের এই ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার বাইরে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি।


এই পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার সামরিক পরিকল্পনাকে প্রতিহত করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রশাসনের যদি কোন পরিকল্পনা থাকে তাহলে তাদের উচিত হবে এবিষয়ে এখনই মনোযোগ দেওয়ার।


কেন এই ঘোষণা

"কোন সন্দেহ নেই যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনকে লক্ষ্য করেই কিমের এই ঘোষণা। এবিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র-সক্ষমতার গুণগত অগ্রগতি ঘটবে যা যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর," বলেন অঙ্কিত পাণ্ডা, যিনি 'কিম জং-আন ও বোমা' এই শিরোনামে উত্তর কোরিয়ার নেতার ওপর একটি বই লিখেছেন।


তিনি বলছেন, "জো বাইডেনের প্রশাসনের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া।"


কিম জং-আন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে মোট তিনবার সাক্ষাৎ হয়েছে কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করা ও দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে তারা কোন সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেন নি।


এখন প্রশ্ন উঠেছে যে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কি এবিষয়ে কিছু করতে পারবেন এবং মি. কিমের দেওয়া হুমকিকে তার কি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত?


মি. পান্ডা বলেন, "আমি মনে করি নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের উচিত কিম জং-আনের ঘোষণাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা, এবং যত দ্রুত সম্ভব তার প্রশাসনের পরিষ্কার করা উচিত যে উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্ভাব্য সমঝোতা থেকে তারা কোন লক্ষ্য অর্জন করতে চায়।"


"কিম যদি দেখেন যে এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত অবস্থানের কোন পরিবর্তন ঘটেনি তাহলে তিনি আরো পরীক্ষা ও অন্যান্য কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন," বলেন তিনি।


ওয়ার্কার্স পার্টির কংগ্রেসে দলের কয়েক হাজার প্রতিনিধির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে কিম জং-আন যুক্তরাষ্ট্রকে তার দেশের "সবচেয়ে বড় শত্রু" হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে তিনি "কূটনীতিকেও বাদ দিতে চান না।"


ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং-আনের শীর্ষ বৈঠক হয়তো ব্যর্থ হয়েছে, তবে উত্তর কোরিয়ার শাসক দলের কংগ্রেসে এসব আলোচনাকে অত্যন্ত বড় করে দেখা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে "বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে এসব বৈঠক অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।"


ফলে জো বাইডেন যদি এটাকে ব্যবহার করতে চান তাহলে তার এখনই নড়েচড়ে বসা উচিত।


তবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যা নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির একজন গবেষক ডোয়েন কিম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রথম এগিয়ে আসতে হবে এবং কোন সমঝোতা হলে তার জন্যেও একটা মূল্য দিতে হবে।


"যুক্তরাষ্ট্রের যে মূল্য দিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করা, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা থেকে বিরত থাকা। কোন শর্ত ছাড়াই ওয়াশিংটন এসব করবে না," বলেন তিনি।


"আবার যদি আলাপ আলোচনা শুরু হয়, যেকোনো সমঝোতার জন্য কিমকেও উচ্চ মূল্য দিতে হবে, কারণ তিনি নিজেই শীতল যুদ্ধের স্টাইলে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কথা বলে আসছেন যাতে উভয়পক্ষকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এটি অর্থহীন কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রের মধ্যে কোন সমতা নেই।"


শান্তি আলোচনা

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং-আন যখন হ্যানয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসেছিলেন তখন তারা সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর সেটি আলোচনার টেবিলে নেই। আলোচনা হলেও মি. কিম এখন একেবারেই ভিন্ন ধরনের এক প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হবেন।


কিম জং-আন যে ভাষণ দিয়েছেন সেখানে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে প্রতিপক্ষের চেয়ে তারা ভাল অবস্থানে রয়েছেন। আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য তিনি কিছু বিষয় পুনরায় নির্ধারণ করে দিচ্ছেন- তাতে তিনি বর্তমান অস্ত্র ত্যাগ করার কথা বলছেন না, বরং বলছেন নতুন এবং আরো উন্নত অস্ত্র তৈরি করা থেকে নিজেকে থামানোর কথা।

কোন মন্তব্য নেই