চলতি বছরই ৪৩টি নতুন শিল্পাঞ্চল তৈরি করবে হ্যানয়
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের বিশেষ শিল্প এলাকা বা গুচ্ছ শিল্পাঞ্চলের বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এ চাহিদা মেটাতে এবার নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটি। হ্যানয় পিপলস কমিটির উদ্যোগে তৈরি হতে যাচ্ছে ৪৩টি গুচ্ছ শিল্প এলাকা। ২০২১ সালেই এসব এলাকার কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। খবর ভিয়েতনাম টাইমস।
মিউনিসিপ্যাল পিপল’স কমিটির পরিকল্পনা অনুযায়ী, বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই একটি শিল্প পার্কের কাজ শুরু হবে। এরপর যথাক্রমে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২৩টি, তৃতীয় প্রান্তিকে ১৩টি এবং চতুর্থ প্রান্তিকে ছয়টি গুচ্ছ শিল্প এলাকা তৈরি করা হবে।
এসব শিল্পাঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে হ্যানয়। এমনকি বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনার জন্যও থাকবে শোধনাগার। যেসব বাণিজ্যিক এলাকায় এখন কাজ চলছে সেগুলোয় সমকালীন প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর ব্যবস্থা করা হবে, যা বর্তমান বিধিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হবে। শহরটিতে এখন অন্তত ২০টি গুচ্ছের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর কাজ চলছে। সেই সঙ্গে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি গুচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতেও চেষ্টা করছে।
প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শহরটি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। বিনিয়োগ প্রক্রিয়া যেন দীর্ঘ না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে হ্যানয় এমন ব্যবসায়ীদের সহায়তা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যারা শিল্পগুচ্ছের জন্য জমিতে বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে যেন এসব এলাকায় যথাযথ বিনিয়োগ হয়। সেই সঙ্গে এসব এলাকার জমি কী কাজে ব্যবহূত হচ্ছে বা কোনো অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে কিনা তারও তদারকি হচ্ছে।
শহরটিতে থাকা বিধি অনুযায়ীই নতুন শিল্পগুচ্ছ তৈরি হচ্ছে। তবে নিয়মকানুনের ক্ষেত্রে কঠোর থাকছে কর্তৃপক্ষ। বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে ভিয়েতনামের অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ৩০ বছর ধরে এ বিনিয়োগ দেশটির অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। অন্যদিকে করোনা মহামারীর প্রভাবসহ নানা কারণে এখন বিশ্বে যে ধারা চলছে, তাতে দেখা যায়, বিনিয়োগের জন্য নিজের দেশ ছাড়াও অন্য দেশ খুঁজছেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা। সব মিলিয়ে ভিয়েতনামের জন্য এটি দারুণ সুযোগ। তাদের এই শিল্পগুচ্ছ এলাকার সুবিধা নিতে পারেন অনেক বড় বড় বিনিয়োগকারী।
কয়েক বছর ধরেই ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি এনেছে এই বিদেশী বিনিয়োগ। ১৯৮৯ সালে দেশটির জিডিপি ছিল ২ দশমিক ১ শতাংশ, ২০১৮ সালে এসে তা হয়েছে ২০ শতাংশ। বিদেশী বিনিয়োগ খাতে রফতানিও বেড়েছে।
বিদেশী বিনিয়োগ শুরুর ৩০ বছর পর এবারই প্রথম পলিটব্যুরো গত নভেম্বরে নতুন লক্ষ্য নিয়েছে। আর সেটি হলো, বিনিয়োগের গুণমান ও দক্ষতা বাড়াতে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরো যাচাই-বাছাই করা এবং নীতিমালার কঠোর প্রয়োগ করা। দেশটির গণমাধ্যমগুলো বলছে, এটি কার্যকর করা গেলে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে ভিয়েতনামে।
গুচ্ছ শিল্প এলাকা সঠিকভাবে তৈরি করতে হলে বিভিন্ন দিকে মনোযোগ দিতে হয়। অবকাঠামোর উন্নয়ন তো লাগেই, সেই সঙ্গে প্রয়োজন হয় উৎপাদনের নেটওয়ার্ক এবং মানের একটি শৃঙ্খল তৈরি করা। এসব শিল্পকে সহায়তা করতে পাশাপাশি গড়ে ওঠে আরো কিছু সহায়ক শিল্প। ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ভিয়েতনামের স্থানীয় উদ্যোক্তারাও লাভবান হন। সে কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ দেশটির জন্য লাভজনক ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। এসব গুচ্ছ শিল্প অঞ্চলের কারণে স্থানীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়, শ্রমের পরিশীলিত বণ্টন হয়, সুবিধাভোগীদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। তবে এটাও ঠিক যে গুচ্ছ শিল্পাঞ্চলের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও চোখে পড়ে। যেমন এর ফলে নতুন আবিষ্কার বাধাগ্রস্ত হয়, পুরনো প্রযুক্তির ওপরই হয়তো বছরের পর বছর নির্ভর করে থাকতে হয় কিংবা গুচ্ছগুলোর ভেতরের দ্বন্দ্বও চোখে পড়ে।
কোন মন্তব্য নেই