বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম
দি অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ অ্যান্ড অ্যালাইসের (ওপেক প্লাস) বৈঠকের প্রাক্কালে বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। মূলত মে মাসে উৎপাদকরা তাদের সরবরাহ বাড়াবেন এমন আশ্বাসের বিপরীতে দাম বাড়ে। ওপেক প্লাসের এক সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় যে করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী ক্রমেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। খবর রয়টার্স।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ওপেক প্লাসের নির্ধারিত এ বৈঠক আজ অনুষ্ঠিত হবে। মূলত চলতি মাসে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ইউরোপে লকডাউন বৃদ্ধি, ভ্যাকসিনের ধীরগতির সরবরাহ, ভারত ও ব্রাজিলে কভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস পাওয়া নিয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকের ঘোষণা আসার পরই মে মাসের জন্য সরবরাহ চুক্তিতে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে ৩২ সেন্ট বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৪ ডলার ৪৬ সেন্টে পৌঁছে। এর আগে মঙ্গলবার ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছিল। এছাড়া জুনে সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী ব্রেন্টের দাম দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধিতে ২৫ সেন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৪ ডলার ৪২ সেন্টে।
চলতি মাসে ফেব্রুয়ারির তুলনায় বেঞ্চমার্ক কমেছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে ১৮ শতাংশ বেড়েছিল। গত মাসে বাজারে অপরিশোধিত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল ওপেক প্লাস। এমন সময় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদাও বাড়তে শুরু করেছিল।
মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অনুসারে ক্রুডের সরবরাহ চুক্তি মূল্য দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধিতে ২৬ সেন্ট বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৬০ ডলার ৮১ সেন্টে, যা আগের সেশনে ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছিল।
কমনওয়েলথ ব্যাংকের কমোডিটি বিশ্লেষক বিবেক ধর বলেন, সরবরাহ চুক্তির শৃঙ্খলা বজায় রাখাই এখন ওপেক প্লাসের অন্যতম উদ্দেশ্য।
এক্সিস সিকিউরিটিজের কারেন্সিজ অ্যান্ড কমোডিটিজ বিভাগের প্রধান সুনিল কুমার কাতকে বলেন, সবার দৃষ্টি এখন ওপেক প্লাসের বৈঠকের ওপর নিবদ্ধ হয়ে আছে। বিশেষ করে মে মাসের সরবরাহ চুক্তি ও ক্রমবর্ধমান কভিড-১৯ পরিস্থিতির দরুন ইউরোপে লকডাউন পরিস্থিতির কারণে সবাই ওপেকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে। পাশাপাশি ডলারের মূল্যবৃদ্ধি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামকে আরো ২-৩ শতাংশ প্রভাবিত করতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করছি পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে সরবরাহ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা আগামী মে মাসে আরেকটু শিথিল করা হবে। ফলে সামনের দিনগুলোতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ আরেকটু বাড়তে পারে।
সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ওপেক ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ওপেক-বহির্ভূত দেশগুলোর বর্তমান উৎপাদন চুক্তি অনুসারে প্রতিদিন আগের চেয়ে ৭০ লাখ ব্যারেল কম উত্তোলন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি সৌদি আরব নিজস্ব সিদ্ধান্তে প্রতিদিন আরো ১০ লাখ ব্যারেল কম উত্তোলন করার সিদ্ধান্ত নেয়। চলতি সপ্তাহে সৌদি আরব তার আগের উত্তোলনসীমায় ফিরতে প্রস্তুত বলে জানায় দেশটির একটি তেল শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র।
মঙ্গলবার আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের এক তথ্যমতে দেখা যায় সর্বশেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত তেলের মজুদ বেড়েছে ৩৯ লাখ ব্যারেল।
এদিকে কভিড-১৯ পরিস্থিতির ক্রমেই খারাপ অবস্থা তেলের বাজারে তার চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছে ওপেক প্লাস। মঙ্গলবার ওপেক প্লাসের আজকের বৈঠক নিয়ে প্রস্তুতিপূর্বক মন্ত্রিপর্যায়ের এক সভায় এমন সতর্কবার্তা দেয়া হয়।
কোন মন্তব্য নেই