আমান ফিডের অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

আমান ফিডের অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি

 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আমান ফিড লিমিটেডের আর্থিক, উৎপাদন ও বিপনন কার্যক্রম সশরীরে পরিদর্শন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। এর মধ্যে ডিএসই কোম্পানিটির কারখানা ও প্রধান কার্যালয় সশরীরে পরিদর্শন কার্যকম শেষ করেছে। অন্যদিকে, সিএসই কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করলেও কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম এখনো শেষ করতে পারেনি।


ডিএসই’র একটি সূত্র জানায়, আমান ফিডের উৎপাদন ও বিপনন কার্যক্রম প্রতিবেদনে নানা অসংগতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ডিএসই। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনেও অনেক অসংগতি ও মিথ্যা তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। ডিএসই কোম্পানিটির অসংগতি ও অনিয়ম তুলে ধরে শিগগির নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে।


উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত ৭টি কোম্পানির আর্থিক অনিয়ম, উৎপাদন ও বিপনন ব্যবস্থা সশরীরে যাচাই করার জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জ অনুমতি চায় বিএসইসি’র কাছে। গত এ্প্রিলের শেষ সপ্তাহে বিএসইসি ৭ কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা, উৎপাদন পরিস্থিতি ও বিপনন অবস্থা সশরীরে যাচাই করার অনুমিত দেয় দুই স্টক এক্সচেঞ্জেকে। সাত কোম্পানি হলো-আমান ফিড, নূরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও কাট্টালি টেক্সটাইল লিমিটেড।


এরই অংশ হিসাবে ডিএসই সম্প্রতি কয়েকটি কোম্পানি পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এরমধ্যে আমান ফিডের পরিদর্শন কার্যক্রম পুরোপুরি সম্পন্ন শেষ হয়েছে এবং প্রতিবেদন তৈরির পর্যায়ে রয়েছে।


জানা যায়, ডিএসই কর্তৃপক্ষ আমান ফিডের আর্থিক অবস্থা, উৎপাদন ও বিপনন কার্যক্রম ও প্রতিবেদনে নানা অসংগতি ও অনিয়ম পেয়েছে। কোম্পানিটির উপর বিস্তারিত প্রতিবেদন শিগগির বিএসইতে জমা দিবে প্রতিষ্ঠানটি।


উল্লেখ্য এর আগে গত বছর আমান ফিডের আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি ও করপোরেট গভর্নেন্স পরিপালনে অসঙ্গতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বিএসইসি। ওই কমিটি কোম্পানিটির ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নানা অসংগতি খুঁজে পায়।


তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির সার্ভিল্যান্স বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন ও ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল।


ওই কমিটির প্রতিবেদনও চূড়ান্ত হয়ে রয়েছে। এদিকে, স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন পাওয়ার পর কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কমিশন।


বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমান ফিডের সব আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখে তদন্ত কমিটি। কোম্পানিটি হিসাব কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা বাড়িয়ে দেখায় এবং আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) অনুসরণ না করার প্রমাণ পায়।


এদিকে, এবি ব্যাংকের ২৫০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করা এবং ঋণ আদায়ে আমান ফিডের সম্পদ নিলামে বিক্রির বিষয়টিও খতিয়ে দেখে তদন্ত কমিটি। তদন্তে আমান ফিড কোম্পানির অনিয়ম আর্থিক গড়মিলের প্রমাণ পায়। এ সময়ে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট অডিটরের অডিট আপত্তি নিয়েও তদন্ত করা হয়।


এর আগে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার না করার পাশাপাশি কমিশনের কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে আমান ফিডের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক বাদে) ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করে বিএসইসি।


প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে আইপিওর মাধ্যমে ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে অতিরিক্ত ২৬ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে মোট ৩৬ টাকা দরে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আমান ফিড। আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। তবে আর্থিক প্রতিবেদনে অনেক মুনাফা দেখিয়েও কোম্পানিটি এবি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থঋণ আদালতের আওতায় আমান ফিডের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। পরে আদালত বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে সমাধানের দায়িত্ব দেয়।


কোন মন্তব্য নেই