বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস যুগের অবসান
২০২০ সালের মার্চের শুরুতে দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর অব্যাহত মন্দায় থাকা দেশের পুঁজিবাজারে আরও বিপর্যয় নেমে আসে। পুঁজিবাজারের বড় বিপর্যয় ঠেকাতে এক পর্যায়ে পুঁজিবাজারের সূচক নেমে যায় ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে।
অবস্থা বেগতিক দেখে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দেশে শুরু হয় ফ্লোর প্রাইসের যুগ। তবে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির লক্ষণীয় উন্নতি হওয়ার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নির্দেশনা জারি করেছে কমিশন। ফলে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস যুগের অবসান হল। অবশেষে তালিকাভুক্ত ১১০ কোম্পানির বন্দী দশার অবসান হল।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের বিষয়ে গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত-উল স্বাক্ষরিত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
বিএসইসির আদেশে এর আগে গত বছর জারি করা ফ্লোর প্রাইস-সংক্রান্ত আদেশটির কার্যকারিতা রদ করা হয়েছে। পাশাপাশি শেয়ারদর ওঠানামার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা বা সার্কিট ব্রেকার-সংক্রান্ত কমিশনের ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর জারি করা আদেশ পুনর্বহাল করা হয়েছে।
বর্তমান আদেশ অনুসারে শেয়ারদর ২০০ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে। শেয়ারদর ২০০ টাকার উপরে হলে এবং ৫০০ টাকা পর্যন্ত ৮.৭৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার থাকবে। ৫০০ টাকার বেশি এবং ১ হাজার টাকা পর্যন্ত শেয়ারদর থাকলে সেক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার হবে ৭.৫ শতাংশ। শেয়ারদর ১ হাজার টাকার বেশি এবং ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ৬.২৫ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা হবে। শেয়ারদর ২ টাকার উপরে থাকলে এবং ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সার্কিট ব্রেকার হবে ৫ শতাংশ। আর শেয়ারদর ৫ হাজার টাকার বেশি হলে ৩.৭৫ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা হবে।
এছাড়া, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নতুন শেয়ার লেনদেনের প্রথম দিন থেকেই অন্যান্য শেয়ারের মতো একই হারে সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, অনেক দিন ধরেই ফ্লোর প্রাইস বহাল ছিল। এতে পুঁজিবাজারের লেনদেন বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি তারল্যও কমে গিয়েছিল। দরপতন ঠেকাতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর আগে দুই ধাপে ৮৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে এবং ফ্লোর প্রাইসে মাত্র কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার আটকে ছিল। তাই কমিশন এটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বাজারে তারল্য বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের স্বাভাবিক যে প্রবাহ, সেটি ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১১০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের বাজারমূল্য ফ্লোর প্রাইস স্পর্শ করার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দৈনিক লেনদেনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সিকিউরিটিজ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। এ স্থবিরতা কাটাতে এ বছরের ৭ এপ্রিল এ ১১০টির মধ্যে ৬৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয় বিএসইসি। দ্বিতীয় ধাপে গত ৩ জুন আরো ৩০ কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া হয়। সর্বশেষ গতকালের (বৃহস্পতিবার) আদেশের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব সিকিউরিটিজের ওপর থেকেই ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই