ফাস ফাইন্যান্সকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে নতুন পর্ষদ - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

ফাস ফাইন্যান্সকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে নতুন পর্ষদ



 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফাস ফাইন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে গেছে বেশ আগে। গত ৩১ মে কোম্পানিটির বোর্ড পুনর্গঠন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়। এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ নুরুল আমিনকে চেয়ারম্যান ও পাঁচ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়।


পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাইফুদ্দিন খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মো. আলী, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মো. সেলিম। এ ছাড়া দুজন মনোনীত পরিচালক রয়েছে।

ডুবে যাওয়া এ প্রতিষ্ঠানকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন এই পরিচালকরা। কোম্পানিটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করছে কোম্পানিটি।


বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন শেয়ার বিজকে বলেন, আগের পর্ষদ কোম্পানির বড় ধরনের ক্ষতি করে গেছে। আমরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি যাতে নতুন কোনো ক্ষতি না হয় সেই প্রচেষ্টা রয়েছে। আগের যত লোন রয়েছে সেগুলো আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। প্রতিষ্ঠানটিকে আমরা আবার ব্যবসায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এককথায় বলতে চাই, কোম্পানিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যা করা দরকার আমরা তা করার চেষ্টা করছি। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে কী বললেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র তিন মাস হলো। আগের বোর্ড যে ক্ষতি করে গেছে তা কাটিয়ে উঠতে আমাদের সময় লাগবে। কোম্পানিটি তো ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিয়মিত লভ্যাংশ দিয়েছে। আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছে একটু সময় চাই।


এদিকে আর জুন ও জুলাইয়ের ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার শূন্য দেখাচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন, এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।



তবে এতে কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।


বিষয়টি জানতে কোম্পানির সচিব জাহিদ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, পরিচালকদের শেয়ার নেই তথ্যটি সঠিক নয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের কোনো উদ্যোক্তা-পরিচালক না থাকার কারণে এমন হয়েছে। মূলত পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পর পরেই পরিচালকদের কাছে যে পরিমাণ শেয়ার ছিল তা ব্লক করে প্রাতিষ্ঠানিকদের হিসেবে রাখা হয়েছে। যেহেতু এই শেয়ারগুলো আলাদা রাখার সুযোগ নেই, তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের হিসাবের স্থলে এই শেয়ারগুলো রাখা হয়েছে, যার পরিমাণ ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থাৎ শেয়ারগুলো প্রাতিষ্ঠানিকের অংশে দেখা হয়েছে। তবে তা বিক্রি অনুপযোগী।


তিনি বলেন, এতে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত হওয়া বা ভুল বোঝার অবকাশ নেই। যখন আবার কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা মনোনীত হয়ে আসবেন, তখন শেয়ারগুলো তাদের কোটায় প্রদর্শন করা হবে।


বর্তমানে এ কোম্পানির মোট শেয়ারের ৭৫ দশমিক ২৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাকি ২৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে দেখা যাচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এ শেয়ারের মধ্য (২৪ দশমিক ৭৭) পরিচালকদের শেয়ার।


পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের যোগসাজশে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স থেকে দুই হাজার কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য এসেছে। ৩০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে জামানত ছাড়া ঋণ নিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নিরীক্ষা বলছে, ফাস ফাইন্যান্সের মোট ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি এক হাজার ৬৯১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৮৮ শতাংশ। পিকে হালদারের বেনামি ৯ কোম্পানির নামে ঋণের ৫৮ শতাংশ বা এক হাজার ১১৮ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে, যা আদায় সম্ভব নয় বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


বিপুল পরিমাণ খেপাপি ঋণে জর্জর কোম্পানিটি ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা ১২ পয়সা লোকসান দিয়েছে। ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে আট টাকা ৫৪ পয়সা। অর্থবছর শেষ হয়ে আট মাস পেরিয়ে গেলেও ২০২০ সালের আর্থিক হিসাব বিবরণী এখনও তৈরি হয়নি।


সর্বশেষ গতকাল এ কোম্পানির শেয়ার ১০ টাকা ৬০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। গত এক বছরের মধ্য এ শেয়ার সর্বনিম্ন চার টাকা ৩০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১০ টাকা ৬০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। সেই হিসেবে গতকাল এ শেয়ার বছরের সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়। কোম্পানিটি ২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে।



কোন মন্তব্য নেই