২০২৩ সালে কক্সবাজারে ট্রেন
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ৪০ কিলোমিটার পথে বসেছে রেললাইন। দীর্ঘ রেলপথে প্রায় সবকটি বড় ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। ছোটখাটো কিছু কালভার্ট নির্মাণ চলছে। আশা করছি, আগামী বছর জুনের আগে পুরো কাজ শেষ হবে।
দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল রেললাইন। সেই কক্সবাজারমুখী রেল লাইন প্রকল্পে গতি ফিরেছে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল রেললাইন স্থাপন অগ্রাধিকার প্রকল্পটির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আগামী বছরের জুনে এই পথে শুরু হবে ট্রেন চলাচল। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে চলবে দ্রুতগতির ট্রেন। বহুল প্রত্যাশিত এই ট্রেন চলাচল শুরু হলে কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ এই অঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন গতির সঞ্চার হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে বহুমাত্রিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের। ট্রেন চালু হলে কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রামের ছয়-সাত ঘণ্টার দূরত্ব নেমে আসবে অর্ধেকে। কমবে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দ্রুতগতির ট্রেন চালু হলে দেশের উদীয়মান অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্ত। কক্সবাজার থেকে মাছ, শুঁটকি, লবণ ও অন্যান্য কৃষিপণ্য রেলপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সহজেই সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বিশ্বের সকল পর্যটন শহরের মতো কক্সবাজারের মানুষেরও জীবনমান উন্নত হবে। উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নতুন সংযোজন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। নতুন এই রেললাইন দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করবে। এর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চালু হবে দ্রুতগতির ট্রেন। এগুলো চলবে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে। দ্রুতগতির ট্রেনের মাধ্যমে মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া যাবে এবং বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সড়কপথে ভোগান্তি এবং ক্লান্তিকর যাত্রায় আসবে স্বস্তি। ট্রেন ভ্রমণ হবে স্বাচ্ছন্দ্যের। প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এই পথে রেললাইন চালুর প্রাথমিক লক্ষ্য পর্যটক। তাই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ঢাকা-কক্সবাজার পথে দ্রুতগতির ট্রেন পরিচালনার জন্য নতুন ইঞ্জিন-কোচ কেনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অত্যাধুনিক ইঞ্জিন-কোচ কেনার প্রকল্প নেয়া হয়। নতুন লাইন নির্মাণের পর এসব ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে চাইলে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। এই রেলপথ পর্যটন খাত ছাড়াও কক্সবাজারের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ, লবণ, রবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক সহজ হবে। আগের চেয়ে কম খরচে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবেন মৎস্যজীবী ও কৃষকেরা। বর্তমানে কক্সবাজারের মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প অঞ্চলসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ ও দ্রুত করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চলছে টানেলের নির্মাণকাজ। এর পাশাপাশি রেললাইন স্থাপিত হলে কক্সবাজারে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে। এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশা করছে সরকার।
স্থানীয়দের কাছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন এক সময়ে স্বপ্ন ছিল, অনেক দিন পর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। তাই এ প্রকল্পকে ঘিরে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নও দেখছেন অনেকেই। কক্সবাজারের মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, এনার্জি হাব, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজার এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজতর করতে কর্ণফুলীর তলদেশে চলছে টানেল নির্মাণ কাজ। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালু হলে যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজতর হবে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছরের জুনে প্রথমবারের মত ঢাকা-কক্সবাজার পথে রেল যোগাযোগ শুরু হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। এখন ডিসেম্বরের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আগামী জুনে ট্রেন চালুর লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। সড়কপথে বাসে এ দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে পাঁচ ঘণ্টা। আর এ মহাসড়কে যানজটে পড়লে পেরিয়ে যায় ছয়-সাত ঘণ্টা এমনকি তারও বেশি। তবে স্বপ্নপূরণের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ।
কোন মন্তব্য নেই