অগ্নিপথ ঘিরে বিহারের সহিংসতা অন্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে
এদিন বিক্ষোভকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিহারের ভভুয়া রোড রেলস্টেশনে একটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের জানালার কাচ ভাঙচুর করে এবং ট্রেনের একটি বগিতে অগ্নি সংযোগ করে। এ সময় তারা ‘ইন্ডিয়ান আর্মি লাভারস’ ব্যানার নিয়ে নতুন নিয়োগ প্রকল্প বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। খবর এনডিটিভির।
অন্যদিকে বিহারের আররাহ রেলওয়ে স্টেশনে জড়ো হওয়া বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে। বিক্ষোভকারীরা রেল লাইনে বিভিন্ন আসবাবপত্র ছুড়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবিতে দেখা যায়, রেলওয়ের কর্মীরা আগুন নেভাতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
এদিকে বিহারের জেহানাবাদে শিক্ষার্থীদের ছোড়া পাথরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা রেললাইনের ওপর জড়ো হয়ে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। পুরে পুলিশ তাদের সরাতে গেলে তারা পাথর দিয়ে ঢিল ছুড়লে এই আহতের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিহারের নওয়াদা, সাহারশা ও চাপরায়ও সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। বিহারের পাশাপাশি এই প্রকল্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে উত্তরপ্রদেশেও। এর আগে গতকাল বিহারের মুজাফ্ফরপুর ও বুক্সারে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং চার বছর পর কেন সেনাদের ওই প্রকল্প থেকে বের করে দেওয়া হবে তা জানতে চান।
প্রসঙ্গত, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মঙ্গলবার ‘অগ্নিপথ’প্রকল্প নামে নতুন সশস্ত্র বাহিনীর পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এই সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশ্য হলো বেতন এবং পেনশন খরচ কমিয়ে আনা এবং জরুরি অস্ত্র কেনার অর্থ সংগ্রহ করা।
এই সশস্ত্র বাহিনীর প্রকল্পে সাড়ে ১৭ বছর থেকে ২১ বছর বয়সী ৪৫ হাজার নাগরিককে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে। আাগামী ৯০ দিনের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং ২০২৩ সালের জুলাইয়ের মধ্যে প্রথম ব্যাচ প্রস্তুত করা হবে।
যারা এই প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হবেন তারা ‘অগ্নিবীর’ নামে পরিচিত হবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার। সাধারণ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে যেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে, এই বাহিনীর জন্যও তাই লাগবে। নারীদেরও নিয়োগ দেওয়া হবে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চার বছর মেয়াদের মধ্যে ছয় মাস থাকছে প্রশিক্ষণের জন্য। আর এই চার বছর তাদেরকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার রুপি বেতন দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাদেরকে মেডিকেল এবং ইন্সুরেন্স সুবিধা দেওয়া হবে। চার বছর পর এই ৪৫ হাজার সেনা থেকে ২৫ শতাংশ সেনাকে নিয়মিত বাহিনীতে নেওয়া হবে এবং নন-অফিসার র্যাঙ্কে পুরো ১৫ বছর সেবা দেবেন তারা। বাকিরা ১১ থেকে ১২ লাখ রুপি নিয়ে অবসরে যাবেন। তবে তারা পেনশন সুবিধা পাবেন না। আর দায়িত্ব পালনে গিয়ে আহত বা নিহত হলে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।
সরকার বলছে, এই প্রকল্প সশস্ত্র বাহিনীর তারুণ্যকে সমৃদ্ধ করবে এবং সশস্ত্র বাহিনীকে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুদ্ধ বাহিনীতে রূপান্তরের প্রক্রিয়ার দিকে নিয়ে যাবে। তবে সরকারের এই প্রকল্প ঘিরে দেশটিতে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই প্রকল্প বাহিনীতে সেনাদের লড়াইয়ের মনোভাবে এবং পেশাদারিত্বে প্রভাব ফেলবে। চার বছর চুক্তি সৈন্যদেরকে ঝুঁকি নিতে অনাগ্রহী করে তুলতে পারে বলে সমালোচকরা উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।
কোন মন্তব্য নেই