কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পাওয়ারহাউজে পরিণত হচ্ছে চীন
২০৩০ সাল নাগাদ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পাওয়ারহাউজে পরিণত হওয়ার পথে হাঁটছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবিত আধুনিক প্রযুক্তির চিপ ব্যবহারের মাধ্যমে এ পথে এগোচ্ছে দেশটি। সম্প্রতি সেন্টার ফর সিকিউরিটি ইন ইমার্জিং টেকনোলজির (সিএসইটি) এক গবেষণা সূত্রে এ তথ্য জানা গিয়েছে। খবর টেকটাইমস।
চীনের সেনাবাহিনী ব্যবহূত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসেসর সম্পর্কিত ৯৭টি উন্মুক্ত নথির তথ্যানুযায়ী, চিপগুলোর প্রায় অধিকাংশই এনভিডিয়া, জিলিংক্স (বর্তমান এএমডি), ইন্টেল বা মাইক্রোসেমি তৈরি করেছে বলে গবেষকদের প্রাপ্ত তথ্যে উঠে এসেছে। গবেষকরা জানান, হাইসিলিকন (হুয়াওয়ে), সুগন, সানওয়ে, হাইগন বা ফাইটিয়ামের মতো চীনা প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিপ ব্যবহারে আমরা চীনের সামরিক বাহিনী বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড দেখতে পাইনি।
ডিফেন্স ওয়ান আগে যুক্তরাষ্ট্র উৎপাদিত যে চিপের কথা বলেছে, সেগুলো তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করেছে। ডিফেন্স ওয়ান জানায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংবলিত অ্যাপলিকেশনগুলো পরিচালনায় যে চিপ ব্যবহূত হয়, সেগুলোয় শক্তি জোগাতে এনভিডিয়ার গ্রাফিকস প্রসেসর ইউনিট (জিপিইউ) পাওয়ারহাউজ হিসেবে কাজ করে।
চীন সরকার তাদের নিজস্ব চিপ উৎপাদনে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করলেও গবেষকদের দাবি, এ খাতে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্নিহিত দক্ষতা ও পরিশীলিত প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতার মতো বিষয় রয়েছে। যে কারণে চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে পারেনি। ২০২০ সালে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন প্রবেশ বন্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন সেসব বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে।
সিএসইটির তথ্যানুযায়ী, তবে এটি চীনের সেনাবাহিনীকে অন্যান্য মাধ্যমে চিপ সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। চীনা মধ্যস্থতাকারী ও ডামি করপোরেশন তৈরির মাধ্যমে তারা চিপ সংগ্রহ করে যাচ্ছে। গবেষণা দলটি জানায়, পাবলিক ইকুইপমেন্ট চুক্তির তথ্যানুযায়ী চীনের সেনাবাহিনী সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মধ্যস্থতাকারী ও শেল কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে। তারা কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে না।
গবেষকরা দেশটির বাণিজ্য বিভাগকে সহযোগীদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার পরামর্শ দেন। এর মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করার পাশাপাশি তাদের অভিজ্ঞদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিতে হবে। এছাড়া কোন চিপগুলো চীনের সামরিক বাহিনীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রকল্পগুলোর জন্য সহায়ক, সেগুলোও নির্ধারণ করতে হবে।
যাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সে তালিকার বাইরে চীনের সেনাবাহিনীর কাছে সরবরাহকারী সাতটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে সিএসইটির গবেষকরা। তারা আরো জানান, উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে বাকি সমস্যাগুলোর সমাধান করা যাবে।
সিএসইটির তথ্যানুযায়ী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে চীনের সামরিক বাহিনীকে থামানো গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার রফতানি নিয়ন্ত্রণে অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। পাশাপাশি গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে উন্মুক্ত তথ্যের ব্যবহার এবং সহযোগী ও মিত্রদের কাছে তথ্য আদান প্রদানের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজস্ব পরিস্থিতিগত সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই