টুইটারে সক্রিয় ব্যবহারকারী কমছে, নথি প্রকাশ্যে
গবেষণা করে ভীতিকর তথ্য পেয়েছে টুইটার। তারা দেখেছে, প্ল্যাটফর্মটির সক্রিয় ব্যবহারকারীরা গণহারে নিজেদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স। সেখানে ব্যবহারকারীর শ্রেণী বোঝাতে বার্তা সংস্থাটি ‘সেলিব্রিটি’ ব্যবহার করেছে।
এর অর্থ শুধু সক্রিয় ব্যবহারকারীই নয়, টুইটার ছাড়ছেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারকারীরাও, যারা না থাকলে মাধ্যমটির অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে। তাদের ধরে রাখতেই মাইক্রো ব্লগ সাইটটিকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
সক্রিয় ব্যবহারকারী কমায় চিন্তিত টুইটার
সপ্তাহে ছয় বা সাত দিন লগইন করে এবং তিন-চারবার টুইট করে, এ ধরনের অ্যাকাউন্টকে সক্রিয় বলে থাকে টুইটার। বন্ধ হতে যাওয়া এসব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলো মোট ব্যবহারকারীর ১০ শতাংশের বেশি নয়, তবে এরাই ৯০ শতাংশ টুইট পোস্ট করে। আর এরাই প্রতিষ্ঠানটির মোট লাভের অর্ধেক এনে দেয়।
কভিড মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকেই এই শ্রেণী প্লাটফর্মটি ছেড়ে দিচ্ছে। টুইটারের গবেষণায় এ নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। তারা বলছে, আমাদের ইউজাররা কোথায় যাচ্ছেন?
কমছে ইংরেজিভাষী ব্যবহারকারীও
ওই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গত দুই বছরে সবচেয়ে সক্রিয় ইংরেজিভাষী ব্যবহারকারীরও টুইটারের প্রতি আগ্রহ কমেছে। এর ফলে বিজ্ঞাপনদাতাদের আগ্রহ হারাতে পারেন।
এ ছাড়া সংবাদ, খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক বিষয়ে কম আগ্রহ দেখানোর পাশাপাশি ইংরেজিভাষার ব্যবহারকারীরা ক্রিপ্টোকারেন্সি, পর্নোগ্রাফি এবং অন্যান্য অনিরাপদ কনটেন্টে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এ নিয়েও চিন্তিত টুইটার কর্তৃপক্ষ।
অবশ্য ইংরেজিভাষীদের মাধ্যমে কী পরিমাণ আয় হয়; তা প্রকাশ না করলেও সংখ্যাটি টুইটারের ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্সের একজন বিশ্লেষক বলছেন, প্ল্যাটফর্মটি অন্যান্য বাজারের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি বিজ্ঞাপন আয় করে। দেশটির বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনই ইংরেজিভাষীদের জন্য। ফলে তাদের সংখ্যা কমায় টুইটারের চিন্তার কারণ স্বাভাবিক।
বড় সামাজিক মাধ্যমের অধিকাংশই নগ্নতার অনুমতি দেয় না। তবে টুইটার তার ব্যতিক্রম। একটি ভিন্ন গবেষণার উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, টুইটারের মোট কনটেন্টের ১৩ শতাংশই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।
কেন?
২০২১ সালে ইউএস ক্যাপিটলে হামলার মতো বড় একটি ঘটনার সময় সামাজিক মাধ্যমে সংবাদভিত্তিক কনটেন্টের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। আর ওই সময়ই টুইটারের ক্ষেত্রে উল্টো ঘটেছে, তাদের ইউজার কমার হার ছিল সবচেয়ে বেশি। গবেষকরা মনে করছেন, এই ব্যবহারকারীরা সম্ভবত মেটা প্ল্যাটফর্মের ইনস্টাগ্রাম এবং বাইটড্যান্সের টিকটকের দিকে ঝুঁকেছে। একজন টুইটার গবেষক লিখেছেন, মনে হচ্ছে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক নীতিই আমাদের ব্যবহারকারী কমার কারণ।
সম্প্রতি ইলোন মাস্কের মালিকানা নেয়ার আগ্রহ ঘিরে টুইটার বেশ আলোচনায় আছে। গত এপ্রিলে টেসলা বস ৪৪ বিলিয়ন ডলারে প্ল্যাটফর্মটি কেনার প্রস্তাব দেন। অল্প সময়ের মাঝে ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে তথ্য চাওয়া ঘিরে টুইটার ও মাস্কের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। বিষয়টি আইনি পরিসরে গিয়ে গড়ায়। সপ্তাহ দু-এক আগে আবারো টুইটার কেনার পক্ষে মত দিয়েছেন এই শীর্ষ ধনী। আর এই সময়ে প্রকাশ্যে এল প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ গবেষণা।

কোন মন্তব্য নেই