প্রযুক্তি খাতে গণহারে কর্মী ছাঁটাইয়ের নেপথ্যে - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

প্রযুক্তি খাতে গণহারে কর্মী ছাঁটাইয়ের নেপথ্যে


বেশি বেতনে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি বরাবরই শীর্ষে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বর্তমানে সেখানেও ধস নেমেছে। মূলত মেটা, টুইটার, স্ন্যাপ ও মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো বড় আকারে কর্মী ছাঁটাই করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। ছাঁটাইয়ের পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। খবর উইওন।


সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বজুড়ে অ্যামাজন তাদের করপোরেট ও প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে যুক্ত ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এর আগে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটাও কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছিল, যা প্রতিষ্ঠানটির মোট কর্মীর ১৩ শতাংশ।


জনসম্মুখে প্রকাশিত বিবৃতিতে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো গণহারে ছাঁটাইয়ের পেছনে দুটি কারণের কথা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে একটি হলো কভিড-১৯ মহামারীর সময় অত্যধিক কর্মী নিয়োগ। কেননা সে সময় মানুষ ঘরে বসে অনলাইনে বেশি সময় ব্যয় করেছে। বর্তমানে মহামারীর প্রকোপ কমে আসায় মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসছে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিভিন্ন ব্র্যান্ড বিজ্ঞাপনে ব্যয় অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।


লেঅফসডট এফওয়াইআইয়ের তথ্যানুযায়ী, কভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১ হাজার ৩০০টি প্রযুক্তি কোম্পানি ২ লাখ ২০ হাজারের কাছাকাছি কর্মী ছাঁটাই করেছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের ধরন ভিন্ন হলেও অভ্যন্তরীণ বিষয় পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সবার মধ্যেই কিছু মিল রয়েছে।


২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে মেটা ১৫ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু বছর শেষ না হতেই প্রতিষ্ঠানটিকে বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিতে হচ্ছে। এদিকে কোম্পানির নির্বাহীরা বলছেন, হিসাবে ভুল করেছেন তারা। ১৩ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়ার সময় মার্ক জাকারবার্গ স্বীকারোক্তিতে বলেন, বিনিয়োগ লক্ষণীয় হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আমিই নিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত যেমনটা প্রত্যাশা করেছিলাম তেমনটা হয়নি।


প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের একটি বড় উৎস বিজ্ঞাপন। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি, যুদ্ধ, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য বিরোধসহ নানা কারণে বিজ্ঞাপনদাতারা ব্যয়ের হার কমিয়ে এনেছে। বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনাও দীর্ঘদিন ধরে চলমান, যে কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের স্বার্থে ব্যবসায়িক নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে।


এদিক থেকে সবচেয়ে বড় উদাহরণ তৈরি করেছে কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। গ্রাহকদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে সরবরাহ ও বিক্রির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর অ্যাপলের এ পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে মেটার বিজ্ঞাপনী আয়ে। এ বিষয়ে দুই প্রতিষ্ঠান প্রধানের মধ্যে মনোমালিন্যও চলছে।


বাজার বিশ্লেষক পিপি ফোরসাইটের কর্মী পাওলো পেসকাতোরের মতে, বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগের জন্যই শেষ প্রান্তিক খুবই হতাশাজনক ছিল। কেউই এখন নিরাপদ নয়। এমনকি মহামারীতেও মুনাফায় থাকা অ্যাপলও সতর্ক হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও টিম কুক জানান, প্রয়োজনের কারণেই তার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ অব্যাহত রাখতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণ হিসেবে অস্বাভাবিক ও অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথাও জানিয়েছে আরেক জায়ান্ট অ্যামাজন।


অ্যামাজন মুখপাত্র কেলি ন্যানটেল জানান, বার্ষিক পরিচালন পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়নের অংশ হিসেবে আমাদের প্রতিটি ব্যবসাকে এবং যে বিষয়গুলোয় পরিবর্তন দরকার বলে মনে করি সেগুলোকে বিবেচনায় নিই।


মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীরাও খরচ কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। গুগল ও ইউটিউবের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের উদ্দেশ্যে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি বাকিদের বেতন কমানোর কথা জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ক্রিপ্টোফার হন। খরচের ক্ষেত্রে অ্যালফাবেটকে আরো মিতব্যয়ী হতে এবং স্বচালিত গাড়ি নির্মাণ উদ্যোগের মতো প্রকল্পগুলো বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।


টুইটারের নতুন প্রধান ও অন্যতম ধনী ইলোন মাস্কও একই কথা জানিয়েছেন। অধিগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার আগে থেকেই তিনি কর্মী ছাঁটাইয়ে আভাস দিয়ে আসছিলেন। মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্মের নিয়ন্ত্রণ হাতে পেতেই এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি কর্মী ছাঁটাই করেছেন।


বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাজার পর্যবেক্ষক স্কট কেসলারের মতে, পুরো প্রযুক্তি খাতেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) ও চালকবিহীন গাড়ি নির্মাণের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে বিনিয়োগ নিয়ে সহনশীলতা কমে এসেছে। বিনিয়োগ থেকে অল্প সময়ে মুনাফা পেতে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা. যা দীর্ঘমেয়াদি খরুচে প্রকল্প থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। প্রযুক্তি খাতে বেতনের উচ্চহার এবং বাড়তি খরচের বিষয়টিও তাদের পছন্দ নয়।

কোন মন্তব্য নেই