দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নীতির অশ্বারোহী কি ডোনাল্ড লু - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নীতির অশ্বারোহী কি ডোনাল্ড লু


চলতি বছরের শুরু থেকেই বারবার সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় ঘুরেফিরে তার নামই উচ্চারিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-সংক্রান্ত মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির প্রধান চালক এখন তিনি। এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলা ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নে নেতৃত্বের আসনে উঠে এসেছেন ডোনাল্ড লু।


নেপালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত মাসে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে দীর্ঘদিন। গত বছরের মাঝামাঝি পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া নিয়ে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়, সেটি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দুবার নেপাল সফর করেছেন ডোনাল্ড লু। নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণ খাড়কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এর তিন মাসের মধ্যেই গত ফেব্রুয়ারিতে ২০১২ সাল থেকে আটকে থাকা নেপালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মার্কিন সহায়তায় গৃহীত মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কো-অপারেশন প্রকল্প নেপালি পার্লামেন্টের অনুমোদন পায়। ৫০ কোটি ডলারের ওই অনুদান প্রকল্পটির অচলাবস্থা কাটানোর পেছনে ডোনাল্ড লু বড় ভূমিকা রেখেছিলেন বলে নেপালি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে।


ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে চলতি বছরের জুনে মার্কিন নেতৃত্বাধীন স্টেট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম শীর্ষক একটি কর্মসূচি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় নেপাল। এ ঘটনার এক মাসের মধ্যে গত জুলাইয়ে আবারো নেপাল সফরে যান ডোনাল্ড লু। দেশটির রাজনৈতিক নেতারা ততদিনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এর মধ্যেই দুদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণ খাড়কার সঙ্গে আবারো বৈঠকে বসেন তিনি।


কয়েক মাসের মধ্যে ডোনাল্ড লুর দুবার নেপাল সফরকে মোটেও কাকতালীয় বলতে চাইছেন না ভূরাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, ডোনাল্ড লু এমন সময়ে দেশটিতে সফর করেছেন, যখন সেখানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তুঙ্গে। রাজনৈতিক হট্টগোল ও নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যে বিষয়টি সেভাবে নজরে না এলেও শুধু নেপালেই অল্প সময়ের ব্যবধানে দুবার সফরের মধ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নে এ মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়া নিয়েই সবচেয়ে বেশি মনোযোগী ডোনাল্ড লু।


ডোনাল্ড লু তার দ্বিতীয় নেপাল সফরে এসেছিলেন ভারত ঘুরে। কোয়াড জোটের সহযোগী দেশটির সঙ্গে টু প্লাস টু বৈঠকে অংশগ্রহণকারী মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। ওই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ও মানবাধিকার। এছাড়া ভারতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ আরো নানা অংশীজনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন তিনি।


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমারা মস্কোর ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করে। এর মধ্যেও রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি তেল ক্রয়সহ বাণিজ্য সম্পর্ক ধরে রেখেছে ভারত। যুদ্ধ শুরুর পর এপ্রিলে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ডোনাল্ড লুর একটি সাক্ষাত্কার প্রকাশিত হয়। সেখানেই ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা আরো বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন তিনি।


ডোনাল্ড লু বলেন, ইউক্রেন সংকটকে যে আমরা (যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত) ভিন্ন চোখে দেখছি, সে বিষয় এখন আর গোপন নেই এবং এ কারণেই কৌশলগত অংশীদার হিসেবে সব পর্যায়ে যোগাযোগ ও আলোচনা বাড়াতে হবে, যাতে আমাদের নিজেদের মধ্যে পরস্পরের অবস্থান পরিষ্কার থাকে। একই সঙ্গে আমাদের মিলের জায়গাগুলো খুঁজতে হবে, যাতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।


অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে বিধ্বস্ত শ্রীলংকায় অক্টোবরে সফর করেন ডোনাল্ড লু। সেখানে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ডোনাল্ড লুর সঙ্গে ওই বৈঠক শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রীকে উত্ফুল্ল করে তুলেছিল বলে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। তামিল গার্ডিয়ান জানিয়েছে, রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে বৈঠক চলাকালে শ্রীলংকার সংকট মোকাবেলায় তাকেই ‘উপযুক্ত ব্যক্তি’ হিসেবে আখ্যা দেন ডোনাল্ড লু।


বৈঠক চলাকালে রনিল বিক্রমাসিংহেকে তিনি বলেন, আমি মনে করি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গেই আসবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এ কাজ করার জন্য আপনিই উপযুক্ত ব্যক্তি। এটি একটি ঐতিহাসিক পরীক্ষা। আমি আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন আপনার সঙ্গে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।


বিক্রমাসিংহের দপ্তর দাবি করছে, ডোনাল্ড লু শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, তার পেছনে সমর্থন রয়েছে এবং ওয়াশিংটন শ্রীলংকাকে আইএমএফ ও ঋণ পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনায় সহায়তা করে যাবে।


চলতি বছর ডোনাল্ড লুর নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে পাকিস্তানে ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির সময়ে। ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে ক্রেমলিন সফরে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার সে সফরের পর পরই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে একজোট হয় পাকিস্তানি পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলো। সে সময় ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শরিকরাও তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানায়। শাসনক্ষমতা হারানোর আগে ডোনাল্ড লুর বিপক্ষে তাকে হুমকিমূলক চিঠি পাঠানো ও ক্ষমতাচ্যুতির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনেছিলেন ইমরান খান। যদিও তার সে অভিযোগকে ‘অমূলক’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। 


ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে এসেছিলেন গত মার্চে। সে সময় ওয়াশিংটনের আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সফরসঙ্গী ছিলেন তিনি। ওই সময় বাংলাদেশ নিয়ে সেভাবে আলোচনায় না এলেও সম্প্রতি তিনি আবারো সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন।


যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনে ১৫ ডিসেম্বর এক আলোচনায় বসেন ডোনাল্ড লু। কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, আগের দিন (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকার শাহীনবাগের একটি বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক চলাকালে বাইরে ঘটে যাওয়া হট্টগোলের ঘটনায় মোহাম্মদ ইমরানকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে তলব করা হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এটি ছিল পূর্বনির্ধারিত একটি আলোচনা।


কোন মন্তব্য নেই