২৬ বছর পর দ. কোরিয়ায় নতুন কারখানা কিয়ার
দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হুন্দাই মোটরসের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান কিয়া। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রতিষ্ঠানটি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। খবর দ্য কোরিয়া হেরাল্ড।
২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে এ কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হবে। নতুন পরিকল্পনাটি কার্যকর হলে দীর্ঘ ২৬ বছর পর কোরিয়ায় কিয়ার নতুন কারখানা হবে এটি। কিয়া ও দেশটির শ্রমিক ইউনিয়ন দীর্ঘমেয়াদে প্রতি বছর দুই লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ হাজার গাড়ি উৎপাদন করবে তারা।
২০২৫ সালের জুলাইয়ে এ কারখানায় উৎপাদন শুরুর বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা। কিয়ার অফিস সূত্রে জানা যায়, এসব বাহনের মধ্যে বৈদ্যুতিক বাস, শাটল সার্ভিস বাহন, রোবট ট্যাক্সি ও বহনযোগ্য অফিস রয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে হুন্দাইয়ের ইভি ট্রানজিশন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কিয়া উদ্দেশ্যভিত্তিক গাড়ি উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার অঙ্গীকার করে।
পারপোজ বিল্ট ভেহিকল বা নির্দিষ্ট প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্য বাহন তৈরিতে এ কারখানায় যুগান্তকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে। যার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ হার অনেকাংশেই কমে আসবে। ২০২৩ সাল নাগাদ নতুন একটি কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট গাড়ি উৎপাদন পরিকল্পনার কথা জানায় কিয়া। এজন্য ১ ট্রিলিয়ন ওন বা ৮০ কোটি ৫৩ লাখ ডলার ব্যয়ের কথাও জানায়। কিন্তু দেশটির শ্রমিক ইউনিয়ন এর কঠোর সমালোচনা করে এবং দুই লাখ ইউনিট গাড়ি উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত বলে জানায়। এর মাধ্যমে কারখানায় আরো বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
কিয়া ও শ্রমিক ইউনিয়ন আরো একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হোয়াসিয়ংয়ের তিনটি কারখানার যেকোনো একটিতে জ্বালানি তেলনির্ভর ইঞ্জিন ব্যবহারের মাধ্যমে পিকআপ ট্রাক তৈরি করবে। দেশীয় বাজারের জন্য গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি ৪৩ বছর পর তাদের প্রথম পিকআপ ট্রাক তৈরি করতে যাচ্ছে। ১৯৮১ সালে ব্রিসা মডেলের উৎপাদন বন্ধের পর আর কোনো ট্রাক তৈরি করেনি কিয়া।
কিয়ার মালিকানা প্রতিষ্ঠান হুন্দাই মোটর গ্রুপ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সান্তা ক্রুজ মডেল তৈরি ও বিক্রি করে। স্থানীয় গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কেজি মোবিলিটিই শুধু পিকআপ ট্রাক তৈরি করে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, হয়াসেওংয়ের প্রথম কারখানায়ই ট্রাকগুলো তৈরি করা হবে। এ কারখানায় জটিল ডিজাইনের সেডান কেথ্রি, স্পোর্টস ক্যাটাগরির গাড়ি এমনকি সরেনটো ও মোহেভ তৈরি হয়।
শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নতুন মডেলের গাড়ি তৈরির জন্য কারখানায় অতিরিক্ত উৎপাদন লাইন তৈরির দাবিও জানানো হয়। কেননা ধারণা করা হচ্ছে, কেথ্রি ও মোহেভের উৎপাদন শিগগির বন্ধ হয়ে যাবে। আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, পিকআপ ট্রাকের গ্রাহক চাহিদা অনেক কম। তার পরও বিশ্ববাজারের পাশাপাশি এখানেও হালকা ওজনের গাড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্লেষকদের অভিমত, পরিবেশবান্ধব পিবিভি বাজারজাতের জন্য কিয়া ও শ্রমিক ইউনিয়ন বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
ডায়েলিম ইউনিভার্সিটির অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক কিম পিল সু বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী মোট গাড়ির ৩০ শতাংশ পিবিভির নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে উৎপাদনের লক্ষ্য ২ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ইউনিটে নামিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ। চাহিদা কমে যাওয়ায় টেসলার মতো প্রতিষ্ঠানও এখন অতিরিক্ত সরবরাহ সমস্যায় ভুগছে।
কিয়া বর্তমানে গিয়নগি প্রদেশের গোয়াংমিয়ংয়ের একটি কারখানাকে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন কারখানায় পরিণত করছে। গোয়াংজুর কারখানায় প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সাল নাগাদ বৈদ্যুতিক এসইউভি তৈরি করতে চায়। একই সময়ে উলসানে নতুন ইভি কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে হুন্দাইয়ের।
কোন মন্তব্য নেই