নিউজ ফাস্ট

সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে বিশ্বের অন্যতম দেশ হবে ভারত


কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে আধুনিক গাড়ি উৎপাদনে চিপ ব্যবহার করতে হয়। কভিড-১৯ মহামারীর সময় ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরিতে চিপ সংকট মারাত্মক বিঘ্ন ঘটিয়েছে। মহামারী-পরবর্তী সময়েও এ সমস্যা বিদ্যমান। এছাড়াও চীনের লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধ চিপ উৎপাদন ব্যাহত করছে। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় অ্যাপল, ফক্সকনসহ প্রযুক্তি জায়ান্টরা তাদের উৎপাদন কার্যক্রম চীন থেকে সরিয়ে ভারত ও ভিয়েতনামে স্থানান্তরের কথা ভাবছে। এ পরিস্থিতিতে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে  বিশ্বের অন্যতম দেশ হিসেবে পরিচিতি পেতে চায় ভারত। সম্প্রতি দেশটির তথ্য ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এ কথা জানান। এ লক্ষ্য অর্জনে দেশটির সরকার ১ হাজার ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে। খবর এনডিটিভি।


ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন ২০২৩-এ সেমিকন্ডাক্টরের স্বল্পতা থেকে শিক্ষাগ্রহণ বিষয়ক সেশনে বক্তব্য দেন অশ্বিনী বৈষ্ণব। সেখানে তিনি বলেন, বাজারে বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি পূরণে যে অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন তার সবই ভারতের আছে।


বৈষ্ণব বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে সহায়তা করছে। ভারত সরকারের নিজস্ব বিনিয়োগ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, সরকার ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে এবং সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও তৈরি করেছে। সরকার সূত্রের তথ্যানুয্যায়ী, বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহকারী হিসেবে অন্যতম ভরসার জায়গায় পরিণত হতে ভারতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি ও উন্নত প্রযুক্তির উন্নয়নে এসব চিপ ব্যবহার করা হয় বলেই এটি সম্ভব।


ছয়-সাত বছরের মধ্যে এ শিল্প খাত দ্বিগুণ বেড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারে প্রবেশ করবে। পাশাপাশি এর বিকাশও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। মন্ত্রী জানান, দেশটির সরকার পরিবেশের ব্যাপারে খুবই সচেতন। তাই যেসব প্রতিষ্ঠান কারখানা স্থাপন করবে তাদের গ্রিন এনার্জি সরবরাহ করা হবে।


২০২২ সালের শেষ দিকে ভারতের তিনটি প্রদেশে সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বলি ও টেস্ট ইউনিট স্থাপনের কথা জানিয়েছিল টাটা গ্রুপ। ৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে এসব ইউনিট স্থাপন করা হবে। আধুনিক প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে প্রাতিষ্ঠানিক চাপের মুখে টাটা এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গিয়েছিল।


সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বলি ম্যাটারিয়াল হচ্ছে কোনো ডিভাইসের তাপমাত্রা, কার্যক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণের উপকরণ বা যন্ত্রাংশ। আর অ্যাসেম্বলি ইউনিটে এসব যন্ত্রাংশ একত্রিত করে পরিপূর্ণ রুপ দেয়া হয়।


ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানা প্রদেশে অ্যাসেম্বলি ও টেস্ট ইউনিট স্থাপনে প্রয়োজনীয় জমির সন্ধানে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে টাটা আলোচনা করেছে বলেও সে সময় জানা গিয়েছে। সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন শিল্পে প্রবেশের বিষয়ে টাটা অনেক আগে থেকেই তাদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে আসছিল। এ খাতে গ্রুপটির প্রথম পদক্ষেপের উদ্যোগ এটি। সে বছরই চিপ উপাদনে ভারত সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটিকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এইচসিএলের সহপ্রতিষ্ঠাতা অজয় চৌধুরী। চিপ উৎপাদন কার্যক্রমে সরকারি বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্প দেশটিকে ইলেকট্রনিক পণ্য উপাদনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বৈশ্বিক পরিচিতি পেতে সাহায্য করছে।


সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ তৈরিতে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা প্যানেল গঠন করেছে। প্যানেলটি উৎপাদন কাজ পরিচালনায় নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করবে। হার্ডওয়্যার ও চিপ উপাদনে ভারত বিশ্বের অন্যতম নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে উপদেষ্টা প্যানেল।


চিপ উপাদনে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ এবং সহায়তা ইলেকট্রনিকস পণ্য ও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে ভারতকে বিশ্বের অন্যতম পাওয়ারহাউজে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এ বিষয়ে অজয় বলেন, সব মিলিয়ে আমি মনে করি, এটি একটি চমৎকার নীতি এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রযুক্তি পণ্য ক্রয়ে চীনের ওপর বৈশ্বিক আস্থা কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে ভারতে তৈরি চিপের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার পণ্য বিক্রির ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে।


সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতাদের আকৃষ্ট করতে এর আগে ১ হাজার ২০ কোটি ডলারের রূপরেখা উন্মোচন করেছে ভারত। আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের পাশাপাশি ভারতকে চিপ উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্রে রূপান্তরিত করতেই এ পরিকল্পনা।


ভারতে সেমিকন্ডাক্টর ও ডিসপ্লে উৎপাদন ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে সরকার ৭৬ হাজার কোটি রুপির উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান দেশটিতে সেমিকন্ডাক্টর, ডিসপ্লে তৈরি ও ডিজাইন ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে কাজ করছে, তাদের এ প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা করা হবে। প্রোগ্রামে চারটি ভাগ রয়েছে। এগুলো ভারতে সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব, ডিসপ্লে ফ্যাব, কম্পাউন্ড সেমিকন্ডাক্টর বা সিলিকন ফটোনিকস অথবা সেন্সর ফ্যাব স্থাপন এবং সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বল, পরীক্ষণ, মার্কিং ও প্যাকেটজাত কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করবে।

কোন মন্তব্য নেই