বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল ১০ দেশের মুদ্রা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল ১০ দেশের মুদ্রা

 

 বিশ্বের শক্তিশালী ও প্রভাবশালী মুদ্রাগুলো সকলের কাছেই কমবেশি পরিচিত। ব্রিটেনের পাউন্ড, সুইজারল্যান্ডের ফ্রাঙ্ক কিংবা মার্কিন ডলার ঐ দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শক্তিমত্তার প্রতীক।


কিন্তু সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রাগুলো বেশিরভাগের কাছেই অজানা। যখন বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার প্রসঙ্গ আসে, তখন সেই মুদ্রার দেশগুলোতে বিরাজমান অস্থিতিশীলতা ও সার্বিকভাবে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির বিষয়গুলো সামনে চলে আসে।


মুদ্রার মূল্যমান সর্বদা পরিবর্তন হতে থাকে। সেক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল ১০ মুদ্রার র‍্যাংকিং করার ক্ষেত্রে গত ১৭ জুলাই, ২০২৩ তারিখের মূল্যমানকে নির্দিষ্ট করে ধরা হয়েছে।


একইসাথে মূল্যমান বিচারের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের সাথে ঐ নির্দিষ্ট মুদ্রাকে তুলনা করা হয়েছে।


১. রিয়াল (ইরান) :বর্তমানে ৪২,২৬২.৫ ইরানিয়ান রিয়ালের মূল্যমান ১ মার্কিন ডলার। এটিই ডলারের বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রা। মুদ্রার এই অবমূল্যায়নের কারণ হিসেবে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা, ইরাক-ইরান যুদ্ধের প্রভাব ও মার্কিন বিরোধিতার মুখে নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার মতো ফ্যাক্টরগুলো মোটাদাগে জড়িত।


২. ডং (ভিয়েতনাম) :বর্তমানে ভিয়েমনামের ২৩,৬৩৭ ডং এর মূল্যমান ১ ডলার। ১৯৭৮ সাল থেকে দেশটিতে এই মুদ্রা চালু রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবেই দেশটি কেন্দ্রীভূত অর্থনীতির অধীনে পরিচালিত হয়েছে। একইসাথে ভিয়েতনামে বাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য বহু চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দেশটির অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে প্রয়োজন আরও সমুন্নত উদ্যোগ। সম্প্রতি দেশটির মুদ্রার উল্লেখযোগ্য হারে অবমূল্যায়ন হয়েছে।


৩. লিওনি (সিয়েরা লিওন) :বর্তমানে সিয়েরা লিওনের ১৯,৮৭৪ লিওনির মূল্যমান ১ ডলার। আফ্রিকা মহাদেশের দেশটিতে রয়েছে তীব্র দারিদ্র্যতা। এছাড়াও ঐতিহাসিকভাবে দেশটি দুর্নীতি ও গৃহযুদ্ধসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। যার ফলে সিয়েরা লিওনের মুদ্রার মান এবং সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ নাজুক।


৪. কিপ (লাওস) :লাওসের ১৯,১৩২.১০ কিপের মূল্যমান ১ ডলার। ১৯৫২ সালে দেশটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে কিপের মূল্যমান অপেক্ষাকৃত কমই ছিল। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, মুদ্রাটির মূল্যমান সময়ের সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।


৫. রুপিয়াহ (ইন্দোনেশিয়া) :বর্তমানে ১৫,০০০ ইন্দোনেশিয়ান রুপির মূল্যমান ১ ডলার। গত সাত বছরেও মুদ্রাটির মূল্যমান বৃদ্ধি পায়নি। এক্ষেত্রে অবশ্য বহু ফ্যাক্টর জড়িত। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, মুদ্রার মান ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যর্থতা এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতাকে এক্ষেত্রে মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


৬. সোম (উজবেকিস্তান) :বর্তমানে ১১,৪৪২.৪২ উজবেকেস্তানি সোমের মূল্যমান ১ ডলার। মূলত দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার কারণে মুদ্রার মানও বেশ কম। করোনা মহামারীর কারণে দেশটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইসাথে বর্তমানে উজবেকিস্তানের শিল্পে উৎপাদন কমে যাওয়ায় মুদ্রা সোমের ভবিষ্যত নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।


৭. ফ্রাঙ্ক (গায়ানা) :বর্তমানে গায়ানার ৮,৫৬৩.০৪ ফ্রাঙ্কের মূল্যমান ১ ডলার। এটি গায়ানার অফিসিয়াল মুদ্রা। দেশটিতে বিদ্যমান ব্যাপক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণেই মুদ্রার এ অবমূল্যায়ন। একইসাথে আশঙ্কার বিষয় এই যে, বছরের পর বছর দেশটির মুদ্রার মান কমছেই।


৮. গুয়রানি (প্যারাগুয়ে) :বর্তমানে প্যারাগুয়ের ৭,২৪২.৮৪ গুয়রানির মূল্যমান ১ ডলার। দেশটিতে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি ও ব্যাপকহারে বেকারত্ব। আর এসকল ফ্যাক্টরই দেশটির মুদ্রার অবমূল্যায়নের জন্য দায়ী।


৯. শিলিং (উগান্ডা) :বর্তমানে উগান্ডার ৩,৬৬৯.৬৯ শিলিং এর মূল্যমান ১ ডলার। ১৯৬৬ সালে দেশটিতে ইস্ট আফ্রিকান শিলিং এর পরিবর্তে উগান্ডান শিলিং এর ব্যবহার শুরু হয়। মূলত স্বৈরশাসক ইদি আমিনের দীর্ঘ শাসনামলে উগান্ডার অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির মুদ্রা শিলিং এর মূল্যমান কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০. দিনার (ইরাক) :বর্তমানে ১,৩০৯ ইরাকি দিনারের মূল্যমান ১ ডলার। ইরাকের এ মুদ্রাটি মূলত দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাপিয়ে থাকে। বর্তমানে দেশটিতে তীব্র মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। একইসাথে বহু বছর ধরে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেশটির মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণ।


বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা বা দুর্বল ১০ মুদ্রার দেশগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, সার্বিকভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তর, মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি, কোভিড মহামারীসহ নানা বিষয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত ও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণে ডলারের বিপরীতে দেশগুলোর মুদ্রার মান বৃদ্ধি পেতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই