ভগবানের থাপ্পড়ে বদলে যায় নায়িকার চেহারা
১৯১৬ সালের ১৮ এপ্রিল নাসিকের একটি রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ললিতা পাওয়ার। রেশম-সুতি কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন তার বাবা লক্ষ্মণ রাও সগুন। ললিতার প্রকৃত নাম অম্বা লক্ষ্মণ রাও সগুন। পরে অভিনয় জগতে পা রেখে ললিতা নামে পরিচিতি লাভ করেন।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন ললিতা। নয় বছর বয়সে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। ১৯২৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন। চল্লিশের দশকে নির্বাক চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়িকা হয়ে উঠেছিলেন ললিতা। হিন্দি ভাষার সিনেমার পাশাপাশি মারাঠি, গুজরাটি ভাষার সিনেমায়ও অভিনয় করেছিলেন তিনি। কম সময়ের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ললিতা। কিন্তু এই সিনেমার কারণেই তার জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়।
১৯৪২ সালে ‘জঙ্গ-এ-আজাদি’ সিনেমার শুটিং হয়। হিন্দি ভাষার এ সিনেমার নায়িকা ছিলেন ললিতা। তার সহ-অভিনেতা ছিলেন ভগবান দাদা। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, সিনেমাটির একটি দৃশ্যে ললিতাকে চড় মারার কথা ছিল ভগবান দাদার। এই দৃশ্যের শুটিং করতে গিয়েই ঘটে অনর্থ। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, বুঝতে না পেরে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক জোরে ললিতাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন ভগবান দাদা। তার চড় লাগে ললিতার গালে; সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যান নায়িকা।
ভগবানের থাপ্পড়ের আঘাত সহ্য করতে পারেননি ললিতা। এতে করে ললিতার মুখের একটি দিক প্রায় অসাড় হয়ে গিয়েছিল। ললিতার ‘ফেসিয়াল নার্ভ’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মুখের পাশাপাশি বাঁ চোখেও আঘাত লেগেছিল ললিতার। তিন বছর ধরে ললিতার চোখের চিকিৎসা চলে। দৃষ্টিশক্তি থাকলেও চোখের ক্ষত ললিতার আজীবনের সঙ্গী হয়। মুখের গড়ন বদলে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছিল ললিতার ক্যারিয়ারেও।
চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ললিতার। তার জন্য নির্ধারিত হয়ে যায় খলনায়িকার ভূমিকা। অধিকাংশ সময় ললিতাকে দজ্জাল শাশুড়ির ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যেত। তার একপেশে ভাবমূর্তি ভেঙেছিলেন পরিচালক হৃষীকেশ মুখার্জি। তার সিনেমায় ললিতাকে পাওয়া গিয়েছিল মমতাময়ী রূপে।
ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনও খুব একটা সুখকর ছিল না ললিতার। তার প্রথম স্বামী ছিলেন গণপতরাও পাওয়ার। কিন্তু তার সঙ্গে সংসার বেশি দিন টেকেনি। জানা যায়, ললিতার বোনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন গণপতরাও। স্বামী এবং বোনের এই বিশ্বাসঘাতকতা মানতে পারেননি ললিতা। তাই বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন নায়িকা।
প্রথম সংসার ভাঙার পর আবারো সংসার পেতেছিলেন ললিতা। প্রযোজক রাজপ্রকাশ গুপ্তকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। বিয়ের পর দুই পুত্রের জন্ম দেন ললিতা। মুম্বাইয়ের জুহুতে স্বামী-সন্তান, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বসবাস করতে এই অভিনেত্রী। পরবর্তীতে অসুস্থতার কারণে মুম্বাই থেকে পুণে চলে গিয়েছিলেন ললিতা। পরে তার মুখে ক্যানসার ধরা পড়ে। ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মারা যান বরেণ্য এই অভিনেত্রী।
কোন মন্তব্য নেই