৮০ বছর পরও পারমাণবিক বোমার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন কোরিয়ানরা, বৈষম্যের শিকার হিবাকুশারা
৮০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পারমাণবিক বোমার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোরিয়ান হিবাকুশারা। এমনই একজন ভুক্তভোগী বে কিউং মি (৮৫)। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট, তার বয়স তখন মাত্র পাঁচ বছর। সেই ভয়াল দিনে জাপানের হিরোশিমাতে পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। হাজার হাজার কোরিয়ান শ্রমিক তখন হিরোশিমায় কাজ করতেন, বে কিউংয়ের পরিবারও তাদের মধ্যে ছিল।
বে কিউং মি স্মরণ করে বলেন, “আমি তখন খেলছিলাম। মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যাই। আমার ওপর ঘরের টিন ও কাঠ পড়ে যায়। সেই ধ্বংসাবশেষই আমাকে বিস্ফোরণের সরাসরি ধাক্কা থেকে বাঁচিয়ে দেয়।” তবে বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি।
বিস্ফোরণের পরপরই বে কিউং মির পরিবার কোরিয়াতে ফিরে যায়, তবে সেখানে গিয়েও তিনি কাউকে জানাননি যে, তিনি পারমাণবিক বোমার ভুক্তভোগী (হিবাকুশা)। তিনি বলেন, “মানুষ বিশ্বাস করত, বোমার শিকার কাউকে বিয়ে করা মানে আপনার ভুল মানুষকে বিয়ে করা। তাই আমি আমার স্বামীকেও কিছু বলিনি।”
বে কিউং মি যখন বোমা হামলার শিকারদের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি বিশেষ কেন্দ্রে রেজিস্টার করেন, তখনই তার দুই ছেলে প্রথম জানতে পারে মায়ের সেই ভয়াবহ অতীতের কথা। তিনি বলেন, “আমি সবসময় ভয় পেতাম আমার সন্তানেরা তেজস্ক্রিয়তার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
হিবাকুশা কোরিয়ানদের দীর্ঘদিনের বৈষম্য
হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত ও আহত হন। এর মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি ছিলেন কোরিয়ান নাগরিক। তবে ভুক্তভোগী হওয়া সত্ত্বেও কোরিয়ান হিবাকুশারা জাপানে বৈষম্যের শিকার হন।
আরেক হিবাকুশা কুওন জুন ওহ বলেন, “আমার বাবা-মা দুজনেই বোমা হামলার শিকার ছিলেন। ফলে তাদের অন্যদের তুলনায় নোংরা ও বিপজ্জনক কাজ করতে হতো। আমাদের পরিবারকে হেয় করা হতো।”
সরকারি স্বীকৃতি আসতে দেরি
কোরিয়ান হিবাকুশারা দশক ধরে দাবি জানালেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাদের জন্য কোনো সরকারি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়নি। কেবলমাত্র ১৯৯০ সালের শেষের দিকে হিরোশিমার পিস পার্কে কোরিয়ান হিবাকুশাদের জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
আজও তাদের সংগ্রাম চলছে
৮০ বছর পেরিয়েও কোরিয়ান হিবাকুশারা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন পারমাণবিক বিস্ফোরণের শারীরিক ও মানসিক ক্ষত। সামাজিক বৈষম্য, স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও স্বীকৃতির লড়াই এখনও চলছে। এই বেঁচে থাকা মানুষদের জন্য আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ও সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
কোন মন্তব্য নেই