নেপালে জেন-জি আন্দোলনের সহিংসতায় ৩ ট্রিলিয়ন রুপি ক্ষতির শঙ্কা
নেপালে জেনারেশন জেড বা জেন-জি নেতৃত্বাধীন সাম্প্রতিক সহিংসতায় দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, এই সংঘাতের অপ্রত্যক্ষ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন রুপি—যা নেপালের দেড় বছরের বাজেট কিংবা মোট জিডিপির অর্ধেকের সমান।
পর্যটন খাতের বড় ধাক্কা
বর্তমানে নেপালে শরৎকাল—ব্যবসা ও পর্যটনের সবচেয়ে প্রাণবন্ত সময়। কিন্তু সহিংসতায় থামেল, দরবার স্কোয়ার, পোখারা, বিরাটনগর ও চিতওনসহ প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হোটেল ভাঙচুর ও লুটপাটের পাশাপাশি ভ্রমণও ব্যাহত হয়েছে।
হোটেল খাতে ক্ষতি: প্রায় ২৫ বিলিয়ন রুপি
শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেলেই ক্ষতি: ৮ বিলিয়ন রুপি
ভাট-ভাটেনি সুপারমার্কেটের ২৮টির মধ্যে ২১টি শাখা ক্ষতিগ্রস্ত
প্রায় ২,০০০ হোটেল কর্মীর জীবিকা ঝুঁকির মুখে
পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই ব্যাপকভাবে হোটেল বুকিং বাতিল হয়েছে, যা খাতটিকে দীর্ঘমেয়াদী সংকটে ফেলতে পারে।
কর্মসংস্থান ও পরিবহন খাত
সহিংসতায় হোটেল, অটোমোবাইল ডিলার ও ভাট-ভাটেনির ক্ষতি মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার নেপালি রাতারাতি বেকার হয়েছেন। পরিবহন খাতের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন রুপি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে
অর্থনীতিবিদ চন্দ্রমণি আঢ্যাকি সতর্ক করে বলেছেন, চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশেরও কম হতে পারে। এর সঙ্গে আগামী মার্চে নির্বাচনের জন্য অতিরিক্ত ৩০ বিলিয়ন রুপি ব্যয় হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বাড়তি চাপ পড়বে।
পুনর্গঠনে আশাবাদ
তবে ভয়াবহ এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নেপালের বিনিয়োগকারীরা। তারা স্বল্প, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবসা পুনর্গঠন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন।
নেপাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্টস বিদেশি পর্যটক ও অংশীদারদের আশ্বস্ত করেছে, দেশটি দ্রুত স্থিতিশীল হচ্ছে।
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে নিয়মিত ফ্লাইট চালু রয়েছে।
কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে।
ফিনিক্সের মতো ফিরে আসা
দুদিনের ধ্বংসযজ্ঞ পেরিয়ে নেপাল এখন ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সুশীলা কার্কির সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেনারা ব্যারাকে ফিরেছে, পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে। আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রীরা নিরাপদে ঘরে ফিরেছেন। সংসদ ভবন ও সরকারি দপ্তরের ভাঙচুরকৃত অংশ সরাতে শুরু হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
এমনকি আন্দোলনের সূচনাকারী জেন-জি শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় ফিরে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন, যা পুনর্গঠনের আশাবাদকে আরও শক্তিশালী করেছে।
কোন মন্তব্য নেই