নাৎসিদের ভৌগোলিক গোপন শহর: পোল্যান্ডের মাটির নিচে অন্ধকার ইতিহাস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশ: রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, দুপুর ১২:৫০
পোল্যান্ডের লুবুশ অঞ্চলের শান্তিপূর্ণ গ্রামাঞ্চলের মাটির নিচে লুকিয়ে আছে ইতিহাসের ভয়াল অধ্যায়—একটি নাৎসি ভূগর্ভস্থ শহর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হিটলারের নির্দেশে নির্মিত এ কমপ্লেক্সকে বলা হয় ‘ওস্টওয়াল’ বা ‘ফেস্টুংসফ্রন্ট ওডার-ভার্থে-বোগেন’।
২০ মাইল দীর্ঘ সুড়ঙ্গপথ
সুড়ঙ্গ, রেলস্টেশন, যুদ্ধকক্ষ ও বিশাল শ্যাফট মিলিয়ে প্রায় ২০ মাইল দীর্ঘ এক গোলকধাঁধা তৈরি করেছিল নাৎসিরা। জার্মানির পূর্ব সীমান্ত রক্ষার জন্য নির্মিত এই দুর্গনগরী প্রকৌশলগত দিক থেকে সে সময়ের অন্যতম উন্নত প্রতিরক্ষা লাইন ছিল। যদিও পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি ৫০ মাইল দীর্ঘ হওয়ার কথা ছিল, তবে পশ্চিম ফ্রন্টে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেওয়ায় প্রকল্পটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
ইতিহাস থেকে পর্যটনকেন্দ্র
১৯৪৫ সালে নাৎসিরা স্থানটি ত্যাগ করলে সোভিয়েত সেনারা দখল নেয়। পরে কিছুদিন পোলিশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ১৯৬০-এর দশকে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সামলানো সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই জায়গাটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এবং আজও এটি ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ বাদুড় কলোনি—প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার বাদুড় এখানে শীতকাল পার করে।
২০১১ সালে এখানে ‘মিয়েন্ডজিরেজ ফোর্টিফাইড রিজিয়ন মিউজিয়াম’ চালু হয়। বর্তমানে সুড়ঙ্গপথগুলো পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। স্বল্প সময়ের ১.৫ ঘণ্টার ট্যুর থেকে শুরু করে টানা ৮ ঘণ্টার ‘এক্সট্রিম ট্যুর’ পর্যন্ত ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। এমনকি বৈদ্যুতিক ট্রেন বা সোভিয়েত যুগের সাঁজোয়া যানেও ঘুরে দেখা যায় এসব সুড়ঙ্গ।
রহস্যময় অভিজ্ঞতা
সুড়ঙ্গের ভেতরে নামলে শীতল, স্যাঁতসেঁতে বাতাসে ভেসে আসে ইতিহাসের গন্ধ। দেয়ালে এখনো দেখা যায় ‘বাঙ্কার পিপল’ নামের সাবকালচারের রেখে যাওয়া গ্রাফিতি। ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে তারা এখানে রেভ পার্টি, বিয়ে ও নানা অনুষ্ঠান করেছে। তবে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকজন।
শীতকালে বাদুড়ের হাইবারনেশনের সময় পর্যটকদের প্রবেশ সীমিত থাকে। গভীর শ্যাফট, রেললাইন আর সামরিক করিডর এখনো বিস্ময় জাগায় ভ্রমণপিপাসুদের।
বৈচিত্র্যময় লুবুশ অঞ্চল
লুবুশ অঞ্চল আজ শুধু এই নাৎসি শহর নয়, বরং নানামুখী আকর্ষণের কেন্দ্র। রাজধানী জিয়েলোনা গোরাকে বলা হয় ‘পোলিশ টাস্কানি’, যেখানে আঙুরক্ষেত ও ওয়াইন উৎসব স্থানীয়দের গর্ব। কাছেই শভিয়েবোদজিন শহরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু যিশুখ্রিস্টের মূর্তি।
এ অঞ্চলে তাই একসঙ্গে মেলে ইতিহাসের অন্ধকার, বাদুড়ের উপনিবেশ, ধর্মীয় প্রতীক আর আঙুরক্ষেতের স্বাদ—যা পোল্যান্ডের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে করে তুলেছে অনন্য ও বৈচিত্র্যময়।
কোন মন্তব্য নেই