জ্বালানি সংকট কাটাতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে জোর দিচ্ছে ইরান - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

জ্বালানি সংকট কাটাতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে জোর দিচ্ছে ইরান

 

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

জ্বালানি সংকট কাটাতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে জোর দিচ্ছে ইরান



অনলাইন ডেস্ক || টাইমস এক্সপ্রেস ২৪

দীর্ঘদিনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ভেঙে পড়া অবকাঠামোর কারণে ভয়াবহ বিদ্যুৎ ঘাটতিতে ভুগছে ইরান। এ সংকট নিরসনে দেশটি এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে নজর দিচ্ছে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ব্যাপক বিনিয়োগ ও নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে তেহরান সরকার। খবর: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস (FT)

ইরান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের দেশ হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ক্রমেই কমছে। চলতি বছর দেশটিতে আবারও পর্যায়ক্রমিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট (রোলিং ব্ল্যাকআউট) শুরু করতে হয়েছে।

তেহরানে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক সৌরশক্তি সম্মেলনে ইরানের উপজ্বালানিমন্ত্রী মোহসেন তর্জতালাব বলেন,

“নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ এখন আর শুধু সহায়ক নীতি নয়, বরং কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা। বিদ্যুৎ নিরাপত্তা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা ও বিনিয়োগ সংকটে ইরানের বিদ্যুৎ অবকাঠামো নাজুক অবস্থায় পড়েছে। বর্তমানে দেশটির ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। তবে সরকার এখন উৎস বৈচিত্র্য আনতে সৌর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে জোর দিচ্ছে।

ইরানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগামী তিন বছরে ১২ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে দেশটিতে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে ২ দশমিক ৫ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে, যা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্র ২.৫ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে ২০২৩ সালে তুরস্কে এই হার ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে সরকার। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কোটি কোটি ডলারের লোকসান গুনতে হচ্ছে দেশটিকে।

এ বছরের গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পিক আওয়ারে গ্রিডে প্রায় ১৫ গিগাওয়াট ঘাটতি দেখা দেয়। এই ঘাটতি পূরণে বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে সাত গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে তেহরান। এজন্য ২৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে ইরানের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল, যেখানে ২০ শতাংশ বিনিয়োগ বেসরকারি খাতে থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানে বছরে প্রায় ৩০০ দিন সূর্যালোক থাকে, যা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আদর্শ পরিবেশ। সম্প্রতি দেশজুড়ে একাধিক সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। তবু খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠন ইরান রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রধান মুসলেম মুসাভি মনে করেন, “দেশের প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা সীমিত, তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন কঠিন।”

বিদ্যুৎ গ্রিডের চাপ কমাতে নাগরিকদেরও ছাদে সৌরপ্যানেল স্থাপনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন,

“জ্বালানি ব্যবহারে ১০ শতাংশ সাশ্রয়ী হলে প্রতিদিন আট লাখ ব্যারেল তেল ও গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব।”

তবে সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ইরান মূলত চীনের ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা প্রকল্পগুলোকে আরো ব্যয়বহুল করে তুলেছে।

মুসাভি জানান, একসময় বিদেশি কোম্পানিগুলো ইরানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই