১০ বছর পর সীমান্তে দুই বোনের মিলন, ধরলার পাড়ে দুই বাংলার ‘সীমান্ত মেলা’তে আবেগের বন্যা
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
১০ বছর পর সীমান্তে দুই বোনের মিলন, ধরলার পাড়ে দুই বাংলার ‘সীমান্ত মেলা’তে আবেগের বন্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক, লালমনিরহাট | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ১০:০৫ | আপডেট: সকাল ১০:১০
লালমনিরহাটের ধরলা নদীর তীরে রবিবার অনুষ্ঠিত হলো দুই বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘সীমান্ত মিলন মেলা’। বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও আত্মিক বন্ধনের প্রতীক এই মেলায় দেখা মিলল এক আবেগঘন দৃশ্যের—১০ বছর পর দুই বোনের মিলন।
বাংলাদেশের আদিতমারী উপজেলার শুসিলা রানী (৬০) আর ভারতের কোচবিহারের নিয়তি রানী (৫০) দীর্ঘ এক দশক পর সীমান্তে একে অপরকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বোনের দেখা পাওয়ার আনন্দে তাদের চোখে অশ্রু আর মুখে হাসির মিশেল তৈরি করেছিল এক অবর্ণনীয় মুহূর্ত।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) লালমনিরহাটের দুর্গাপুর ও মোগলহাট সীমান্ত এবং ভারতের কোচবিহারের মোগলহাট এলাকায় ৯২৭ নম্বর পিলারের কাছে বসে ৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ‘সীমান্ত মিলন মেলা’। এখানে প্রতি বছর পূজা-অর্চনার পাশাপাশি দুই বাংলার মানুষ মিলিত হন ভালোবাসার উৎসবে।
মেলার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল শ্রী শ্রী মা বৃদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজা। এই পূজার বিশেষত্ব হলো—বাংলাদেশ থেকে আসেন পুরোহিত, আর ভারতের ভক্তরা করেন পূজারীর দায়িত্ব। ধর্মীয় পারস্পরিক সহযোগিতার এই অনন্য দৃষ্টান্তই যেন দুই দেশের ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক।
বাংলাদেশের পুরোহিত বিকাশ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “এই মেলা কেবল পূজা নয়, এটি দুই বাংলার মানুষের প্রাণের উৎসব। হাজারো ভক্ত এখানে এসে মিলিত হন।”
ভারতের পূজারী জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন, “পুরোহিত বাংলাদেশে, পূজারী ভারতে—এর চেয়ে বড় সম্প্রীতির নিদর্শন আর কী হতে পারে?”
মেলায় প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন।
বড় বোন শুসিলা রানী জানান, “বোনের সঙ্গে শুধু ফোনে কথা হয়, কিন্তু মন ভরে না। আজ তাকে দেখে মনে শান্তি পেয়েছি।”
নিয়তি রানী বলেন, “৩০ বছর আগে ভারতে চলে আসি, বাংলাদেশে আছে শুধু দিদি। দশ বছর পর দেখা পেয়ে বুকটা হালকা হয়ে গেল।”
দুই বোনের মাঝে উপহার বিনিময়ের সময়ও দেখা যায় অশ্রুভেজা দৃশ্য। শুসিলা রানী নিয়ে গিয়েছিলেন ইলিশ ও টাঙ্গাইলের শাড়ি, আর নিয়তি রানী এনেছিলেন মিষ্টি, মসলা ও শাড়ি।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রশান্ত সেন বলেন, “ভিসা বন্ধ থাকায় এই মেলাই এখন আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার একমাত্র সুযোগ। হিন্দু-মুসলমান সবাই একসঙ্গে আসে এখানে।”
রংপুরের সুধীর চন্দ্র গুপ্ত বলেন, “এই মেলায় সীমান্ত পেরিয়ে আত্মীয়দের বুকে জড়িয়ে ধরা যায়—এই আনন্দের কোনো তুলনা হয় না।”
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মেজর মেহেদী ইমাম জানান, “মেলার দিন সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার রাখা হয়। এটি বহু বছরের ঐতিহ্য, যা দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করে।”
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলা এই ‘সীমান্ত মিলন মেলা’ একদিনের জন্য হলেও মুছে দেয় সীমান্তের রেখা, ধর্মের বিভাজন, আর মানুষের মন ছুঁয়ে দেয় মানবতার বন্ধনে।

কোন মন্তব্য নেই