বিশ্ব খাদ্য ফোরামে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ৬ দফা প্রস্তাব দিলেন অধ্যাপক ইউনূস - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বিশ্ব খাদ্য ফোরামে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ৬ দফা প্রস্তাব দিলেন অধ্যাপক ইউনূস

 

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বিশ্ব খাদ্য ফোরামে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ৬ দফা প্রস্তাব দিলেন অধ্যাপক ইউনূস


সংবাদ প্রতিবেদন:

নিজস্ব প্রতিবেদক | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
১৪ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম ২০২৫–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

তিনি ক্ষুধামুক্ত বিশ্বের লক্ষ্য অর্জনে ছয় দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করে বলেন,

“ক্ষুধা কোনো অভাবের ফল নয়— এটি আমাদের তৈরি করা অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা। তাই এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে।”


🔹 অধ্যাপক ইউনূসের ছয় দফা প্রস্তাব:

১️⃣ যুদ্ধ বন্ধ ও সংলাপ শুরু – সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে ক্ষুধা ও সহিংসতার দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে।
২️⃣ এসডিজি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু উদ্যোগ – উন্নয়ন অর্থায়নের অঙ্গীকার পূরণ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
৩️⃣ আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন – খাদ্য সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা রক্ষায় আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
৪️⃣ তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের সহায়তা – অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বে তরুণদের কৃষি উদ্যোগে যুক্ত করতে হবে।
৫️⃣ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার – বাণিজ্যনীতিকে খাদ্য নিরাপত্তার সহায়ক করতে হবে, বাধা নয়।
৬️⃣ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ সম্প্রসারণ – বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের কৃষক ও উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তি সুবিধা দিতে হবে।


🔹 ক্ষুধার কারণ ও অর্থনৈতিক সংস্কার

ইউনূস বলেন,

“২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ খাদ্য উৎপাদন যথেষ্ট ছিল। এটি উৎপাদনের নয়, নৈতিক ব্যর্থতা।”

তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন,

“যেখানে ক্ষুধা দূর করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাওয়া যায় না, সেখানে অস্ত্র কিনতে ব্যয় হচ্ছে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার— একে কি আমরা অগ্রগতি বলব?”

অর্থনৈতিক কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন,

“বর্তমান মুনাফাভিত্তিক ব্যবস্থা কোটি মানুষকে পিছিয়ে দিয়েছে। এখন সময় এসেছে সামাজিক ব্যবসার, যা ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, বরং সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য।”


🔹 বাংলাদেশের সাফল্যের উদাহরণ

অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন—

  • বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ,

  • বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ধান, সবজি ও স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে,

  • কৃষি ফসলের নিবিড়তা বেড়েছে ২১৪ শতাংশে,

  • উদ্ভাবিত হয়েছে ১৩৩টি জলবায়ু-সহনশীল ধানের জাত,

  • কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণে ৭০% পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন,

“আমরা কৃষিকে সবুজ করেছি— মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছি।”


🔹 তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাদের ভূমিকা

ইউনূস বলেন,

“তরুণদের চাকরি খোঁজার নয়, বরং চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতা দিন।”

তিনি তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনআইনগত সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।

“যুব সমাজে বিনিয়োগ করলে শুধু বিশ্বকে খাদ্য দেব না, বরং বিশ্বকেই বদলে দেব,” — বলেন ইউনূস।


🔹 তিন-শূন্য বিশ্ব

বক্তৃতার শেষাংশে ইউনূস তাঁর স্বপ্নের ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ ধারণা তুলে ধরেন—

“শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ— এটাই মানবতার ভবিষ্যতের পথ।”

কোন মন্তব্য নেই