ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ৬ দফা প্রস্তাব দিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
![]() |
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত |
ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ৬ দফা প্রস্তাব দিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
টাইমস এক্সপ্রেস ২৪ | নিউজ ডেস্ক
১৪ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার | ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বাংলা | ২১ রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি
বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নিরসনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও খাদ্যব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনের জন্য ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন—
“ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে নয়, এটি আমাদের তৈরি করা অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা। এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে।”
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (World Food Forum - WFF) ২০২৫–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন তিনি।
ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে অধ্যাপক ইউনূসের ৬ দফা প্রস্তাব
১️⃣ যুদ্ধ বন্ধ ও সংলাপের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য পৌঁছানো ও যুদ্ধ বন্ধের ওপর জোর দেন তিনি।
২️⃣ এসডিজি অর্থায়ন ও জলবায়ু অভিযোজন জোরদার করা
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানান।
৩️⃣ আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন
খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখতে প্রতিটি অঞ্চলে খাদ্য ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব দেন।
৪️⃣ তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তা বৃদ্ধি
অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে কৃষিতে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা বিকাশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
৫️⃣ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ন্যায্য বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন
বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতিকে খাদ্যনিরাপত্তার সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
৬️⃣ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ সম্প্রসারণ
বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তি অ্যাক্সেস নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
“ক্ষুধা অভাব নয়, নৈতিক ব্যর্থতা”
২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,
“আমরা যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন করেছি— এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়, বরং অর্থনৈতিক ও নৈতিক ব্যর্থতা।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“ক্ষুধা দূর করতে যেখানে কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করা যায়নি, সেখানে অস্ত্র কিনতে বিশ্ব ব্যয় করেছে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি কি আমরা অগ্রগতি বলব?”
🌐 ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ গঠনের আহ্বান
অধ্যাপক ইউনূস তার স্বপ্নের “তিন-শূন্য বিশ্ব” ধারণা ব্যাখ্যা করে বলেন—
“শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ— এটি কোনো কল্পনা নয়, এটি আমাদের টিকে থাকার একমাত্র পথ।”
তিনি বলেন,
“পুরনো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা পদ্ধতি কোটি মানুষকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। আমাদের এমন ব্যবসা চাই— যা সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য, ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়।”
তরুণদের নেতৃত্বে সামাজিক পরিবর্তনের ডাক
অধ্যাপক ইউনূস তরুণদের উদ্দেশে বলেন—
“তরুণ প্রজন্ম আগের তুলনায় বেশি সংযুক্ত, সৃজনশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর। তাদের চাকরি খোঁজার নয়, চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতায়ন করুন।”
তিনি তরুণ, নারী, কৃষক ও উদ্ভাবকদের সহায়তায় “সামাজিক ব্যবসা তহবিল” গঠনের আহ্বান জানান এবং বলেন,
“এই ধরনের উদ্যোগের জন্য আইনগত ও আর্থিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, বাঁধা নয়।”
কোন মন্তব্য নেই