চীনা কৌশলে দুর্বল হয়ে পড়ছে মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সশস্ত্র প্রতিরোধ
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
চীনের কূটনৈতিক কৌশলে দুর্বল হচ্ছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী প্রতিরোধ আন্দোলন
মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে চলমান সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে — আর এর মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চীনের কৌশলগত হস্তক্ষেপ। সীমান্ত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় বেইজিংয়ের মধ্যস্থতাই এখন বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়েছে।
‘অপারেশন ১০২৭’-এর পর থেকে পাল্টে গেল চিত্র
২০২৪ সালে ‘অপারেশন ১০২৭’ চালুর পর মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধযোদ্ধাদের দ্রুত অগ্রগতি দেখা যায়। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স—যার মধ্যে ছিল এমএনডিএএ, টিএনএলএ ও আরাকান আর্মি (এএ)—একটির পর একটি শহর দখল করতে থাকে। তাদের সহায়তায় মাঠে নামে গণপ্রতিরোধ বাহিনী পিডিএফ (People’s Defense Force)।
তখন মনে হচ্ছিল, সামরিক জান্তার পতন কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ২০২৫ সালে চীনের অবস্থান পরিবর্তনের পর দৃশ্যপট বদলে যায়।
চীনের নতুন কৌশল: যুদ্ধবিরতি ও অর্থনৈতিক চাপ
বেইজিং জানায়, “মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।” এরপরই তারা স্পষ্ট বার্তা দেয়—যদি সংঘাত বন্ধ না হয়, সীমান্তপথে অর্থ, সরঞ্জাম ও জ্বালানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
চীনের এ চাপের মুখে এমএনডিএএ লাশিও দখলের পর অগ্রযাত্রা থামায়, টিএনএলএ সরে আসে নাওংকিও থেকে, আর মোগোক ও মংমিত ফেরত যায় জান্তার হাতে।
রাখাইনে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র
চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থই মূল চালিকা শক্তি
বিশ্লেষকদের মতে, বেইজিং “শান্তি প্রতিষ্ঠা”র নামে মিয়ানমারের সেনাশাসন টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছে। কারণ সীমান্ত বাণিজ্য, বিরল খনিজ (ল্যান্থানাম, নিওডিমিয়াম, টারবিয়াম), গ্যাস পাইপলাইন ও বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প নির্বিঘ্ন রাখতে জান্তা সরকারের স্থিতি চায় চীন।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর প্রথমে বেইজিং দূরত্ব বজায় রাখলেও, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বাড়ার পর তারা সেনা সরকারের পাশে দাঁড়ায়। এখন উত্তর মিয়ানমারের বহু খনিজ খনন প্রকল্প পরিচালনা করছে চীনা সমর্থিত কোম্পানিগুলো।
প্রতিরোধ আন্দোলন স্থবিরতার পথে
ইতিহাসের প্রতিধ্বনি
ইতিহাসবিদরা বলছেন, মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা যেন বাগান সাম্রাজ্যের পতনের প্রতিধ্বনি—তখনও এক রাজা বিদেশি শক্তির সামনে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, আর আজও এক সামরিক নেতা বিদেশি কৌশলের আশ্রয়ে টিকে আছেন।
কোন মন্তব্য নেই