শিশুরা যেন পারদর্শী হয় সব দিকে : প্রধানমন্ত্রী - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

শিশুরা যেন পারদর্শী হয় সব দিকে : প্রধানমন্ত্রী



শিশুরা যেন শিক্ষা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সাংস্কৃতিক চর্চা- সব দিকে পারদর্শী হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আজকের শিশু যাতে আগামী দিনে একটি সুন্দর জীবন পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পরিবেশ সৃষ্টি করছি যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারে, মানুষের মত মানুষ হতে পারে, উচ্চ শিক্ষা নিতে পারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শিশু সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শিশুদের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, পাশাপাশি শিশু শিক্ষা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সাংস্কৃতিক চর্চা-সবদিকে যেন তাদের পারদর্শিতা গড়ে ওঠে সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি। শিশুদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা আর নেতৃত্বে তার দূরদর্শিতার কথা স্মরণ করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (দেশ স্বাধীন হওয়ার পর) মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এরই মধ্যে তিনি শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পুরোপুরি অবৈতনিক করে দিয়ে যান।
শিশুদের যে অধিকার সেটা যাতে নিশ্চিত হয় তার জন্য ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা এই বাংলাদেশে শিশু আইন প্রণয়ন করেন, তখনো জাতিসংঘ শিশু আইন করেনি। কত দূরদর্শিতা ছিল তার নেতৃত্বে আমরা তার আলোকেই জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করি ২০১১ সালে। শিশুদের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছে। প্রতিটি জেলায় ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব করে দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তাদের জন্য ব্রেইল বইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য তাদের ভাষার বই দেওয়া হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা থেকেই ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দাদীর কাছে গল্প শুনেছি যে নিজের বই… গরীব ছাত্রছাত্রী হলে… অনেক সময় কষ্ট করে পড়তে হত, তখন.. তাদেরকে তিনি বিলিয়ে দিতেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে বা নৌকা করে স্কুলে যেতে হত, হেঁটে যাওয়ার সময় ছাতা কিনে দেওয়া হত। যারা দূর দূরান্তে যেতেন তাদের তিনি নিজের ছাতাটা দিয়ে দিতেন। অনেকে বিভিন্ন বাসায় লজিং থেকে পড়াশোনা করত, সেখানে হয়ত ঠিকমত খাবার পেত না। তার (বঙ্গবন্ধু) কাছে যখন কথাটা বলত, তাদের তিনি বাসায় নিয়ে আসতেন এবং তার জন্য যে খাবার থাকত, সেটা ভাগ করে খেত। এই কথা শোনার পর আমার দাদি বেশি করে খাবার রেখে দিতেন। শেখ হাসিনা বলেন, এসব কাজের জন্য তার দাদা-দাদি তাদের ছেলেকে বকাঝকা না করে বরং উৎসাহ দিতেন।
তিনি যে বড় হয়ে উঠেছিলেন, তাতে মা-বাবার যে অবদান সেটাও কিন্তু অনেক বড়। তিনি যে রাজনীতি করেছেন আমার দাদা-দাদি সব সময় সেই সমর্থনটা দিয়ে গেছেন। সেই সাথে আমার মাও আমার বাবার রাজনীতির পাশে সব সময় ছিলেন। যে কারণে তিনি এত বড় আত্মত্যাগ করতে পেরেছিলেন, এত বিরাট হৃদয়ের অধিকারী তিনি হয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সে ভাষণ প্রচার করেছিল। তাদের নির্মম নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া লামিয়া সিকদারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিমা হোসেন, শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কেএম আলি আজম বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেয় চতুর্থ শ্রেণির আরাফাত হোসেন। জেলা প্রসাশক মোখলেসুর রহমান সরকার গোপালগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের লোগোর একটি রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করার পর সেখান থেকে নির্বাচিত সেরা চিঠিটি পড়ে শোনায় যশোরের কেশবপুরের শিশু সুরাইয়া।


অনুষ্ঠানে দুস্থদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ‘আমার কথা শোন’ শীর্ষক একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান, শিশু শিল্পীদের ফটোসেশন ও বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের আঁকা ছবি নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয় জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে জাতির জনকের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ, তাতে সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই