কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ে আজ নামছে সবচে বড় ড্রেজার - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ে আজ নামছে সবচে বড় ড্রেজার



কথা ছিল এতদিনে শেষ হবে প্রকল্পের পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি কাজ। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ। ভয়াবহ পলিথিন জঞ্জালের জন্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং কার্যক্রম। আর এই জঞ্জাল সরাতে প্রয়োজন ছিল একটি বড় ড্রেজার। অবশেষে চীন থেকে আনা হল বহুল প্রত্যাশার সেই বিশাল ড্রেজার, যেটি দিয়ে আজ থেকে কাজ শুরু হবে। গতকাল বিকেলে চমৎকারভাবে সম্পন্ন হয়েছে ড্রেজারের ট্রায়াল পর্ব। এই ড্রেজারটি কাজ শুরু করলে কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং এর কাজে প্রত্যাশিত গতি আসবে বলেও আশা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী জটিলতার ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল। আইনী জটিলতা কাটিয়ে ওঠার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্প নামে নতুন করে প্রকল্পের কাজ শুরু করে। বুয়েটের একটি সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার চওড়া এলাকায় ড্রেজিং এর কাজ শুরু হয়। নৌবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকা থেকে ৪২ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি তোলার মাধ্যমে ড্রেজিং সম্পন্ন করা হবে। ড্রেজিং থেকে উত্তোলিত বালি ও মাটি বন্দরের হামিদচর এলাকা ভরাট করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চীন থেকে আনা তিনটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে এই মাটি তোলার কাজ করানো হচ্ছে। কিন্তু ড্রেজার দিয়ে মাটি তুলতে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তলদেশে ৪/৫ ফুট পুরু পলিথিন, বাসা বাড়ির ময়লা, ছেঁড়া কাপড়সহ নানা জঞ্জালের ভয়াবহ এক স্তর তৈরি হয়েছে। এই স্তর এত পুরো যে ছোট মেশিনের পক্ষে তা ভেদ করে মাটির নাগাল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ড্রেজার মেশিনগুলো মাটি না পাওয়ায় পুরো প্রকল্পের কাজটিই ঝুলে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়। পলিথিন আটকে ড্রেজারের কাটার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাটার থেকে পলিথিনের জটলা খুলে পুনরায় চালাতে হচ্ছে। এভাবে ড্রেজিং কার্যক্রমের গতি একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ছে।
‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, নদীর তলদেশে পলিথিনের যেই স্তর তৈরি হয়েছে তা ভয়াবহ। এই স্তর ভেদ করে মাটি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। আবার মেশিনও চলছে না। তিনি বলেন, ড্রেজার মেশিনের কাটারের দাঁতের সাথে লক্ষ লক্ষ পলিথিন জড়িয়ে যায়। পলিথিন পেছিয়ে মেশিন বন্ধ হয়ে যায়। মেশিন উপরে তুলে ওই পলিথিন ম্যানুয়েলি খুলে আবারো মেশিন চালাতে হয়। এভাবে এক ঘণ্টা মেশিন চললে দুই ঘণ্টা মেশিন বন্ধ থাকছে। রাতে দিনে কাজ করার কথা থাকলেও আমরা দিনের বেলায় শুধু কাজ করতে পারছি। এতে করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। এতদিনে পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত মাত্র ২৯ শতাংশ কাজ হয়েছে।
ভয়াবহ এই সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য একটি বড় ড্রেজারের খুব অভাব বোধ করা হচ্ছিল। যেসব ড্রেজার দিয়ে এতদিন কাজ চলছিল সেগুলোর কাটার ছিল ২০ ইঞ্চি। তিনটি ড্রেজারই ২০ ইঞ্চি কাটারের। এতে করে পলিথিন পেছিয়ে যাচ্ছিল সহজে। ড্রেজারের কাটার আরো বড় হলে পলিথিন পেছানোর পরিমাণ কমে যেতো। এই অবস্থায় একটি ৩১ ইঞ্চি কাটারের ড্রেজার আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। দেশের ইতিহাসের এর আগে আর কোন প্রকল্পে এত বড় ড্রেজার ব্যবহার করা হয়নি। গত ৪ মার্চ বড় ড্রেজারটি কর্ণফুলী নদীতে নামানো হয়। চীন থেকে খোলা অবস্থায় আনা ড্রেজারটিকে নদীতে নামানোর পর সংযুক্ত করা হয়। গতকাল এই ড্রেজারটিকে প্রথম ট্রায়াল দেয়া হয়েছে। ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হয়েছে ট্রায়াল কার্যক্রম। আজ সকাল থেকে ৩১ ইঞ্চি কাটারের ড্রেজারটি নদীতে কাজ শুরু করবে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ। তিনি বলেন, সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। ট্রায়ালও হয়েছে। আজ থেকে বড় এই ড্রেজার কাজ শুরু করবে। এতে করে বড় ড্রেজারের কাটারের দাঁতে পলিথিন কম আটকাবে।
তিনি বলেন, আজ থেকে আমাদের কাজে পুরোদমে গতি আসবে বলে আশা করছি। আশা করছি বড় ড্রেজারটি দিয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারবো। এতে কিছুটা বাড়তি সময় লেগে গেলেও আমাদের সামনের দিনগুলো সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।


চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ দৈনিক আজাদীকে বলেছেন, আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নদী ড্রেজিং এর কাজ করছি। অনেক বড় একটি ড্রেজার আনা হয়েছে। এতে কাজে গতিশীলতা বাড়বে। এতদিন তিনটি ড্রেজার কাজ করতো, আজ থেকে চারটি ড্রেজার কাজ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। নদী ড্রেজিং খুবই অগ্রাধিকার দেয়া একটি প্রকল্প বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কোন মন্তব্য নেই