হামলায় ট্যারেন্ট একাই জড়িত ছিলেন : নিউজিল্যান্ড পুলিশ - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

হামলায় ট্যারেন্ট একাই জড়িত ছিলেন : নিউজিল্যান্ড পুলিশ



গত শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলায় অভিযুক্ত হওয়া প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি ব্রেনটন ট্যারেন্ট হামলায় 'একাই' জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করছে নিউজিল্যান্ড পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও তিনজনকে আটক করা হলেও তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন দেশটির পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ। তবে তিনি বলেন, এ নিয়ে এখনই তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাইছেন না। এদিকে, আরেকটি লাশ পাওয়া যাওয়ায় এই হত্যাকান্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫০ জনে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলায় ৫০ জন নিহত ও অপর ৪০ জন আহত হন। অস্ট্রেলীয় নাগরিক ২৮ বছর বয়সী ব্রেনটন ট্যারান্ট নামে স্বঘোষিত এক শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী হামলার দৃশ্য সরাসরি ফেসবুকে সম্প্রচার করেন। ওই ভিডিওতে তাকে নিজের বন্দুক দিয়ে নির্বিচারে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। ঘটনার পরই তাকেসহ চারজনকে আটকের কথা জানায় দেশটির পুলিশ। 

শনিবার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারকৃত ট্যারান্টকে শার্ট ও হাতকড়া পরা অবস্থায় আদালতে তোলা হয়। তখন তাকে একটুও অনুতপ্ত হতে দেখা যায়নি। বরং ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে তিনি মিটিমিটি হাসছিলেন। এ সময় তিনি আঙুল দিয়ে বর্ণবাদের প্রতীকও দেখান। তার বিরুদ্ধে আপাতত হত্যার অভিযোগ আনা হলেও ধারণা করা হচ্ছে আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করা হবে।

এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ জানিয়েছেন, বন্দুক হামলার জন্য কেবল ২৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি জানান, পুলিশ কর্মকর্তারা সাহসের সঙ্গে তাকে গুলি ছোড়া থেকে নিবৃত্ত করে আটক করেছে। কমিশনার বুশ আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া দুই ব্যক্তি হামলার সঙ্গে জড়িত নন বলে মনে করছে পুলিশ। তিনি জানান, সন্দেহভাজনদের মধ্যে এক নারীকে কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই মুক্তি দেয়া হয়েছে। আর অপর এক পুরুষের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৮ বছর বয়সী একজনকে আটক করা হয়। আজ (সোমবার) তাকে আদালতে তোলা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আটক কারোর বিরুদ্ধেই আগের কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই।

তবে পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'এই ঘটনায় সত্যিকার অর্থে কতজন জড়িত ছিল, তা নিয়ে আমরা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাচ্ছি না'। এদিকে, ব্রেনটন ট্যারান্টকে প্রথম ধাপে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আগামী ৫ এপ্রিল আবারও আদালতে তোলা হবে।

রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, সোমবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বন্দুকনীতি পরিবর্তন সংক্রান্ত ইসু্যতে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, 'আমাদের বন্দুক আইনে পরিবর্তন আনা হবে।' মঙ্গলবার পার্লামেন্ট নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।



শোকে স্তব্ধ ক্রাইস্টচার্চ, নিহতের 

সংখ্যা বেড়ে ৫০

এদিকে, ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হামলার ঘটনায় আরও একটি লাশের সন্ধান পাওয়ার পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে। অপরদিকে, হামলায় ঘটনায় মায়া পাড়ের শহর ক্রাইস্টচার্চ যেন শোকে স্তব্দ হয়ে গেছে। শহরের প্রতিটি গৃহে চলছে অবিরত প্রার্থনা।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের সময় প্রথমে আল-নূর মসজিদে ঢুকে সেমি অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালান ট্যারেন্ট। পুরো ঘটনা তিনি হেলমেটে বসানো ক্যামেরা দিয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন। আল-নূর মসজিদে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গাড়ি নিয়ে ট্যারেন্ট যান পাঁচ কিলোমিটার দূরে লিনউড মসজিদে। সেখানেও একই কায়দায় গুলি শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে মসজিদের খাদেম ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে অস্ত্র কেড়ে নিলে বাইরে অপেক্ষমান থাকা গাড়িতে উঠে পালিয়ে যান ট্যারেন্ট।

কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ চারজনকে আটক করার কথা জানায়, একটি গাড়িতে বেশ কিছু বিস্ফোরক পাওয়ার পর তা নিষ্ক্রিয় করা হয়। ক্রাইস্টচার্চের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ জানান, আল-নূর মসজিদেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। সেখানেই আরেকটি লাশ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জন হয়েছে। 

মসজিদে হামলার ঘটনায় নিহতদের জন্য রোববার ক্রাইস্টচার্চের গির্জায় প্রার্থনা করা হয়। এখনো ৩৪ জনকে ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, তাদের মধ্যে ১২ জন রয়েছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র।

কোন মন্তব্য নেই