সাইবার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তাইওয়ান
চলতি মাসে তাইওয়ানের সাইবার নিরাপত্তা প্রধান জানান, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা ও সাইবার আক্রমণের হাত থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে বেশকিছু নাটকীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আক্রমণ চালানোর জন্য দুই ডজনেরও বেশি কম্পিউটার এক্সপার্ট নিয়োগ করা হয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত আক্রমণ চালিয়ে যাবে।
এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতি মাসে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ দুই থেকে চার কোটি সাইবার আক্রমণের যে হিসাব করেছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।
তাইওয়ান জানায়, এখন পর্যন্ত তারা অনেক বড় বড় সাইবার আক্রমণই প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। সফল আক্রমণের সংখ্যাও ১০০-এর বেশি নয়। যার মধ্যে খুব কম আক্রমণকেই সরকার গুরুতর বলে জানিয়েছে।
তাইওয়ানের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান চিয়েন হুং ওয়েইয়ের তথ্যানুযায়ী, এ বিপুল হামলার উত্পত্তিস্থল নির্ধারণ না হওয়ায় সরকার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
চীনের মূল ভূখণ্ডকে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, আক্রমণকারীদের আক্রমণ পদ্ধতি ও ধরন অনুযায়ী আমরা এটা নিশ্চিত যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ থেকেই অধিকাংশ হামলার উত্পত্তি হয়েছে।
চিয়েন বলেন, আমাদের সরকারের সার্বিক কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অধিকাংশ জরুরি সেবাও ডিজিটালাইজড। তাই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যদি সর্বাধুনিক না হয়, তাহলে আমরা সহজেই সাইবার আক্রমণের শিকারে পরিণত হব।
দেশটির প্রেসিডেন্ট টিসাই ইং ওয়েন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সাইবার নিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম একটি অংশ। চলতি মে মাসে তিনি নতুন ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রণালয় চালু করার ঘোষণা দেন।
তাইওয়ানের জাতীয় সংবাদ সংস্থা সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির তথ্যানুযায়ী, তথ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেয়াই হবে এ মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ। এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি অবকাঠামোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
গত মাসে তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ চীনের বিরুদ্ধে সামরিক ভীতি প্রদর্শন, চাপ প্রয়োগ ও সাইবার হামলার অভিযোগ করেন। মূলত এসবের মাধ্যমে চীন তাইওয়ান সরকারের ওপর থেকে দেশটির জনগণের বিশ্বাস তুলে নিতেই এসব কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
প্রায় ৭০ বছর আগে চীনের গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে তাইওয়ান ও চীনের মূল ভূখণ্ড আলাদাভাবে তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এখন পর্যন্ত তাইওয়ান শাসন করতে পারেনি। অন্যদিকে বেইজিং এ দ্বীপরাষ্ট্রটিকে তাদের অঞ্চলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করলেও সামরিক শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তাইওয়ানের যাত্রা বন্ধের হুমকিও প্রদান করেছে।
গত কয়েক বছরে তাইওয়ানের ওপর সামরিক চাপ প্রয়োগ বাড়িয়েছে চীন। জুনে চীন দ্বীপরাষ্ট্রটির সীমানায় দুই ডজনেরও বেশি যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। এর ফলে তাইওয়ান আকাশপথে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় তাইওয়ানকে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে বেইজিং।
বিশেষজ্ঞরা সামরিক যুদ্ধের পাশাপাশি সাইবার যুদ্ধের বিষয় নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তদুপরি এ সপ্তাহের শুরুতে বিশাল সাইবার হামলা প্রকল্প শুরুর জন্য পশ্চিমা দেশগুলো চীনকে অভিযুক্ত করে আসছিল।
কোন মন্তব্য নেই