মালয়েশিয়ায় ইসলামী ব্যাংকিংয়ের উত্থান
ইসলামিক ব্যাংকিং বলতে ইসলামী শরীয়াহ দ্বারা পরিচালিত ব্যাংকিং পদ্ধতিকে বোঝায়। সুদ ইসলামী আইন অনুসারে হারাম। সুদের বৈশিষ্ট্য হলো পূর্ব থেকেই এক পক্ষের লাভ নির্ধারণ করে রাখা। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মূলনীতি ভিন্ন। সেখানে লাভ-লোকসান যেটাই হোক, দুই পক্ষই ভাগ করে নেয় ফল। প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের বিপরীতে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সূত্রে উদ্ভব ঘটেছে ইজারাহ, মুদারাবাহ ও মুশারাকাহর মতো পরিষেবা। তৈরি করেছে স্বতন্ত্র অবস্থান। যথাযথ ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়ায় পেয়েছে জনপ্রিয়তা। সক্ষম হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ টানতে। অথচ ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস দীর্ঘ নয়। গত শতকের সত্তরের দশকে জন্মলাভ করে ইসলামী ব্যাংকিং। তারপর গ্রাহকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুততার সঙ্গে। বেড়েছে এ খাতের আকারও। বর্তমানে ইসলামিক ফাইন্যান্সের মালিকানা ও তত্ত্বাবধানে থাকা মোট সম্পদের পরিমাণ ২ দশমিক ৮৮ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের জরিপ অনুযায়ী বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১৪ শতাংশ। বিশ্বের ৮০টি দেশে ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে দেড় হাজারের বেশি। মালয়েশিয়ায় ইসলামী ব্যাংকিং ৪০ বছর পূর্ণ করেছে। ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংকিং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশটির প্রথম ইসলামী ব্যাংক। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ইসলামী অর্থনীতির উদারমুখীকরণের সূত্রে স্থাপিত হয়েছে একের পর এক ইসলামী ব্যাংক। গত ৪০ বছরে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা ও বৈচিত্র্যের পাটাতন প্রস্তুত করেছে। তার প্রমাণ দেখা যায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের জরিপেই। দেশটিতে ইসলামী ব্যাংক খাতে মোট সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ২৫ হাজার ৪০০ কোটি। ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৩৮ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে দেশটির ইসলামী ব্যাংকগুলো।
ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা বর্তমান মালয়েশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল। অনুকূল পরিবেশ ও দেশীয় বাজারে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বৈচিত্র্য বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছে। ইসলামী বিনিয়োগকারী উপাদান, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো এবং বৈশ্বিক অনুশাসনের অধিগ্রহণে পালন করেছে নিয়ামকের ভূমিকা। সবকিছু মিলে মালয়েশিয়াকে পরিণত করছে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ইসলামী ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানকারী দেশগুলোর একটিতে। ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থার দিক দিয়ে দ্রুত উদারমুখী নীতি দেশটিকে পরিণত করেছে বিদেশী বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলোর অন্যতম প্রধান গন্তব্যে। দেশীয় ইসলামী ব্যাংকগুলোর বাইরে তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বিদেশী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। প্রথাগত ব্যাংকগুলো উন্মোচন করেছে ইসলামী ব্যাংকিং পরিষেবা। রিংগিতের পাশাপাশি লেনদেন হচ্ছে বিদেশী মুদ্রায়ও। ফলে ক্রমেই বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ হচ্ছে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার পরিসর। সত্যি বলতে মালয়েশিয়া ইসলামী ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। অর্থনীতিতে দেশটির স্থিতিশীলতা উল্লেখযোগ্য। নেগারা মালয়েশিয়া ব্যাংকের জরিপ অনুসারে, ১৯৯৯ সালে দেশটির ইসলামিক ব্যাংকিং খাতের আমানত ছিল ২৩ হাজার ৫৯০ রিংগিত। অথচ ঠিক পরবর্তী বছরে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৭৫০ রিংগিতে। সুকুকের দিক থেকে দেশটি সবার সামনে। সুকুক হলো ফান্ড সংগ্রহের একটি বিশেষ মাধ্যম। সাধারণত কোনো কোম্পানি সুকুকের মাধ্যমে মূলধন সরবরাহ করে থাকে। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী, সুকুক ইস্যু করার দিক থেকে মালয়েশিয়া বিশ্ববাজারের ৬৬ শতাংশ দখল করে আছে। ইস্যুকৃত সুকুকের পরিমাণ ৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
ইসলামী ব্যাংকিং মালয়েশিয়ার সামগ্রিক অর্থনীতিকে অন্তর্ভুক্তিকরণের বিশেষ কৌশল হিসেবেও ভূমিকা রাখছে। ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স পণ্যের সূত্র ধরে সমাজের নিম্নবর্গ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে সরকারি পরিষেবা। অধিকতর মুক্ত করা সম্ভব হয় বাজারকে। ফলে বেড়ে যায় বিদেশীদের আগমন ও অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ। নবম মালয়েশিয়া পরিকল্পনার ব্যাপ্তি ছিল ২০০৬-১০ সাল পর্যন্ত। পরিকল্পনায় রাখা হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়াকে বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত করা, যা বাস্তবায়ন করার প্রধান পথ হিসেবে চিহ্নিত হয় বিনিয়োগ। সেদিকে মনোযোগ দিয়েই দেশটিতে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেন্টার ফর এডুকেশন ইন ইসলামিক ফাইন্যান্স (আইএনসিইআইএফ)। অর্থনীতির সংশ্লিষ্ট ইসলামী বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল শরিয়াহ রিসার্চ অ্যাকাডেমি (আইএসআরএ)। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন (আইআইএলএম)। নিগারা ব্যাংকও সেখানে অংশগ্রহণ করেছিল। নীতি, নৈতিকতা ও ইসলামী অর্থনীতিবিদদের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তৈরি হয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব শরিয়াহ অ্যাডভাইজর্স (এএসএএস)। ক্রমে সেখানে যোগ দিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত আলেমগণ। ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আলেমদের এমন অংশগ্রহণ উৎসাহিত করছে দেশের জনগণকে। এভাবে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়েছে মালয়েশিয়ার মাটিতে। কীভাবে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার কলেবর বাড়ে আর কীভাবে তা প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতিকে প্রতিস্থাপিত করে, তার জীবন্ত উদাহরণ হতে পারে মালয়েশিয়া। যেকোনো ওআইসিভুক্ত ইসলামী ফাইন্যান্সের ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণে মালয়েশিয়াকে সামনে রাখতে পারে। তখন অনায়াসেই বদলাতে পারবে অর্থনৈতিক চালচিত্র। সে দেশে ইসলামী ব্যাংকিং আর বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হয়ে থাকবে না। বরং পরিণত হবে মূল অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে।
এশিয়ার ইসলামী অর্থনীতির তহবিল দ্রুত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে ডাবলিনভিত্তিক ইউসিআইটিএস। বিশ্বের প্রথম সারির বিনিয়োগকারী ও সিআইএমবি গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে গঠিত এ প্রতিষ্ঠান। আসিয়ান ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে পরিকল্পনা। তার অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তিনটি অনুবর্তী তহবিল। দ্য ইসলামিক গ্লোবাল এমার্জিং মার্কেটস ফান্ড, ইসলামিক এশিয়া-প্যাসিফিক এক্স-জাপান ফান্ড ও ইসলামিক আসিয়ান ইকুইটি ফান্ড। তত্পর রয়েছে সাতটি পৃথক দেশে। ডাবলিনভিত্তিক প্লাটফর্মটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে মালয়েশিয়ায় তৈরি হয়েছে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ। সত্যিকার অর্থেই বেড়েছে বিনিয়োগ। মালয়েশিয়াকে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগিতা করেছে। মাত্র তিন দশকের ব্যবধানে মালয়েশিয়ার এতটা পথ এগিয়ে যাওয়া রীতিমতো বিস্ময়কর। অন্য দেশগুলোর জন্য এটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নিঃসন্দেহে। আশির দশকে নেগারা মালয়েশিয়ার গভর্নর জাফর হুসেইন ঘোষণা করেছিলেন, ‘জীবিত থাকতেই মালয়েশিয়ায় দুই ধরনের ব্যাংকিং পদ্ধতি দেখার স্বপ্ন আমার। প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি পরিচালিত হবে ইসলামী ব্যাংকিং।’ ঠিক এ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই প্রণীত হয়েছে সামগ্রিক নীতিমালা। তার ফলও এর মধ্যে দৃশ্যমান। ২০২০ সালের জরিপে দেখা গেছে দেশটির ব্যাংকিং খাতের ৩৭ শতাংশ শেয়ারই ইসলামী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। ২০১৯ সালে এ পরিমাণ ছিল ৩৫ শতাংশ। মালয়েশিয়া ইসলামীকরণ নীতি ‘?ইসলামিক ফার্স্ট’ নীতির একটা প্রভাব রয়েছে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি প্রভাব অর্থ ব্যবস্থায় নিরাপত্তা। দেশটির সরকার ও বিএনএমের উদ্দেশ্য ২০৩০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়ার ব্যাংকিং খাতের ৫০ শতাংশকে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা। তাহলেই একই দেশে সমান্তরালে দুই ধরনের ব্যাংকিং পদ্ধতির স্বপ্ন পূরণ হবে। যদি সত্যিই এমনটা হয়, সেটা হবে একটা মাইলফলক। কোনো দেশের ব্যাংক খাতের ৫০ শতাংশ ইসলামী ব্যাংকিংয়ের হাতে থাকাটা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ কথা সত্য, কভিড-১৯ মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। প্রভাব ফেলেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেই। তবে অন্যান্য খাতের মতো ইসলামী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানও পেয়েছে সরকারি সহযোগিতা। আর যেহেতু মালয়েশিয়ায় ইসলামী অর্থনীতি বলতে মোটা দাগে ইসলামী ব্যাংকিং পরিষেবাই উঠে আসে। সেহেতু পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক। বৃহৎ তিনটি আন্তর্জাতিক রেটিং দাতা প্রতিষ্ঠানের মতামত এক্ষেত্রে তাত্পর্যপূর্ণ। প্রতিষ্ঠান তিনটি ফিচ রেটিংস, মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিস ও স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি) গ্লোবাল। তিনটির জরিপেই দেখা গেছে মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষণীয় বিস্তার। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকার পরও বিস্তার ঘটেছে ইসলামী ব্যাংক খাত। আসিয়ান অঞ্চলে ইসলামিক ব্যাংকিং, সুকুক ও তাকাফুলের দিক থেকে মালয়েশিয়া শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোও বাড়িয়ে চলছে ইসলামী প্রডাক্ট। যার প্রভাব পড়েছে জিডিপির বৃদ্ধিতে।
মালয়েশিয়ার ইসলামী ব্যাংক খাতের মূলধন ও তারল্য স্থিতিশীল। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর চেয়ে আমানতের সুবিধা বেশি হওয়ায় বাড়ছে সাধারণের ঝোঁকও। ইসলামী ব্যাংক খাতে সফল উদ্যোগ মুশারাকাহ ও মুদারাবাহ বিনিয়োগ। ২০২০ সালের আমানতের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আমানতের ৬ শতাংশ মুশারাকাহ ও মুদারাবাহ। যদিও মালয়েশিয়ায় এ আমানত ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স স্কিমের (ডিআইএস) তত্ত্বাবধানে হয় না। তবে অন্যান্য দেশে সরকারি বা ডিআইএস থেকে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। ২০২১ সালে মালয়েশিয়ার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী টেংকু আবদুল আজিজ। তিনি পারস্পরিক সহযোগিতা, প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধি ও ইনসেনটিভের পরিকল্পনা জানান। নেয়া হয় বেশকিছু উদ্যোগ। দেশটির ব্যাংক খাতের জন্য আরো স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ইএসজি ও সোশ্যালি রেসপনসিবল ইনভেস্টমেন্ট (এসআরআই) প্রতিষ্ঠান দুটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিএনএম ও মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা কমিশনের (এসসি) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নিরাপত্তা কমিশন গ্রিন এসআরআই সুকুক গ্র্যান্ট স্কিম চালু করে। বিভিন্ন কোম্পানিকে আহ্বান করেছে সুকুকের দিকে। টেংকু আবদুল আজিজ তার বাজেট ভাষণে সরাসরিই একে মালয়েশিয়ার সামাজিক ও স্থিতিশীল স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে তুলে ধরেন।
ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট (আইসিএম) প্রথমে সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে মালয়েশিয়ার স্থিতিশীলতা, ইএসজি ও এসআরআই প্রকল্পকে। নিরাপত্তা কমিশন ২০১৪ সালে শুরু করেন এসআরআই সুকুক ফ্রেমওয়ার্ক। বিশ্বের প্রথম আইসিএম এটি। মালয়েশিয়াই পথ দেখিয়েছে এসআরআই, গ্রিন সুকুক ও ইএসজি পরিষেবা দেয়ার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে ট্যাক্স মওকুফ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে। সরকার জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ২০২০ সালের আগস্টে সরকার প্রথমবারের মতো ৫০ কোটি রিংগিত ডিজিটাল সুকুক অনুমোদন দেয় দেশটি। আসিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের অধীনে মালয়েশিয়া ১৯ শতাংশ সুকুক ও বন্ড ইস্যু করেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নিরাপত্তা কমিশনের তত্ত্বাবধানে ৫০৪ কোটি রিংগিত এসআরআই সুকুক ইস্যু করেছে, যার মধ্যে ৫৮ শতাংশ ছিল আসিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের অধীনে। নিরাপত্তা কমিশন মনে করে, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট পূরণের জন্য আগামী ১০ বছরে প্রতি বছর ৫ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। বিপরীতে মালয়েশিয়ার বাজারে আগামী পাঁচ বছরে দরকার হবে ৪ হাজার ৫০০ কোটি রিংগিত। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে ক্যাপিটাল মার্কেট। নতুন গৃহীত পরিকল্পনায় ২০টি কৌশল হাতে নেয়া হয়েছে, যেন মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করা যায়।
মালয়েশিয়ার পুঁজি বাজার কভিড-১৯-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার পরও ২০২১ সাল থেকে ফিরে পেতে শুরু করেছে গতি। তার প্রমাণ মালয়েশিয়া ন্যাশনাল মর্টগেজ করপোরেশনের কোম্পানি চাগামাস বারহাদের কর্মকাণ্ড। চাগামাস বারহাদ দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সুকুক ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চাগামাস বারহাদ ৭১ কোটি রিংগিত ইস্যুর মাধ্যমে বছর শুরু করে। ফেব্রুয়ারিতে ইস্যু হয় ৯৪ কোটি ৫০ লাখ রিংগিত। ২০২১ সালের প্রথম দুই মাসে তহবিল পৌঁছেছে ১ হাজার ৭০০ কোটি রিংগিতে। ইসলামী ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের দিকে ইঙ্গিত করেই চাগামাস বারহাদের প্রধান নির্বাহী বলেছেন, ‘কভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। সচল হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিনিয়োগকারীরা সতর্ক হয়ে উঠেছেন। এটাই ইস্যুর সূচক বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম অনুঘটক।’
ড. মোহাম্মদ মা’সুম বিল্লাহ: সিনিয়র প্রফেসর, ফাইন্যান্স বিভাগ
কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব
কোন মন্তব্য নেই