ব্রহ্মপুত্রে চীনের বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: অর্থনীতির গতি ফেরাতে পারবে কি? - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

ব্রহ্মপুত্রে চীনের বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: অর্থনীতির গতি ফেরাতে পারবে কি?

 

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

ব্রহ্মপুত্রে চীনের বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: অর্থনীতির গতি ফেরাতে পারবে কি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || টাইমস এক্সপ্রেস ২৪

ব্রহ্মপুত্র নদে (ইয়ালুং সাংপো) চীনের নির্মিতব্য বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ‘শতাব্দীর সেরা প্রকল্প’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পশ্চিম চীনের তিব্বত অঞ্চলে গড়ে ওঠা এই প্রকল্পটি সবুজ জ্বালানিনির্ভর উন্নয়ন ও নতুন কর্মসংস্থানের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি প্রযুক্তিগত সাফল্য আনলেও চীনের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারবে না।

প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বলেন, “এই জলবিদ্যুৎ বাঁধ আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে চীনের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।”

তবে প্রকল্পটি শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন চীনের অর্থনীতি নানা চাপে রয়েছে—সম্পত্তি খাতের মন্দা, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক শুল্কনীতি, অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাস ও মূল্যসংকোচন দেশটির প্রবৃদ্ধিকে শ্লথ করে দিয়েছে। ফলে এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে সরকার নতুন আস্থা ফিরিয়ে আনার এক প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছে।

আগামী সপ্তাহে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ২০৩০ সাল পর্যন্ত নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ঘোষণা করবে, যেখানে আত্মনির্ভরতা ও সবুজ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ইয়ালুং সাংপো প্রকল্পকেও সেই নীতির কৌশলগত অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির সদস্য লি দাওকুই বলেন, “এই প্রকল্প পশ্চিমাঞ্চলকে নতুন অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করবে, দেশীয় চাহিদা বাড়াবে এবং জাতীয় অর্থনীতির ভারসাম্য আনবে।”

বিশ্লেষকরা প্রকল্পটিকে ১৯৯০-এর দশকের ঐতিহাসিক থ্রি গর্জেস ড্যাম-এর সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে এবারের প্রকল্পটির ব্যয় ও আকার আগের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। ফলে অনেক অর্থনীতিবিদের প্রশ্ন—এত বড় বিনিয়োগ কি সত্যিই চীনের অর্থনীতিকে চাঙা করতে পারবে?

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাঁধটি বছরে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট–ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, যা চীনের গৃহস্থালি বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রায় ২০ শতাংশ। এতে সরাসরি কর্মসংস্থান হবে লক্ষাধিক মানুষের, আর নির্মাণে লাগবে প্রায় ৪ কোটি টন সিমেন্ট ও ৪০ লাখ টন ইস্পাত।

ঘোষণার পর থেকেই চীনের সিমেন্ট, প্রকৌশল ও বিদ্যুৎ সরঞ্জাম কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে উল্লম্ফন দেখা গেছে।
বাজার বিশ্লেষক অ্যাম্বার ঝাং বলেন, “থ্রি গর্জেস ড্যাম যেমন জাতীয় গর্বের প্রতীক ছিল, ইয়ালুং সাংপো প্রকল্প তেমনি নতুন প্রবৃদ্ধির এক ‘সুপার-সাইকেল’ সূচনা করতে পারে।”

তবে অন্য অনেক অর্থনীতিবিদ এ বিষয়ে সতর্ক। নোমুরা, সিটিগ্রুপ এবং ক্যাপিটাল ইকোনমিকস–এর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রকল্পের প্রভাব প্রথম পর্যায়ে চীনের জিডিপিতে বছরে সর্বোচ্চ ০.১ শতাংশ হতে পারে।
ম্যাককয়ার গ্রুপের ল্যারি হুর মতে, “এখন চীনের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করা উচিত ভোক্তাব্যয় বাড়ানোর ওপর, শুধু বড় অবকাঠামো প্রকল্পের ওপর নয়।”

অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ব্রহ্মপুত্রে নির্মিত এই বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চীনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির প্রতিশ্রুতির প্রতীক হলেও, এটি চীনের ধীরগতির অর্থনীতিকে কতটা পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে—তা সময়ই বলবে।

কিওয়ার্ড: চীন, ব্রহ্মপুত্র নদ, ইয়ালুং সাংপো, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, চীনের অর্থনীতি, চীনের প্রবৃদ্ধি, লি কিয়াং, থ্রি গর্জেস ড্যাম, তিব্বত।

কোন মন্তব্য নেই