বৈশ্বিক উষ্ণতায় ধ্বংসের পথে বিশ্বের প্রবালপ্রাচীর, বিজ্ঞানীদের নতুন সতর্কবার্তা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বৈশ্বিক উষ্ণতায় ধ্বংসের পথে বিশ্বের প্রবালপ্রাচীর, বিজ্ঞানীদের নতুন সতর্কবার্তা

 

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত



বৈশ্বিক উষ্ণতায় ধ্বংসের পথে বিশ্বের প্রবালপ্রাচীর, বিজ্ঞানীদের নতুন সতর্কবার্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, দুপুর ১:০৩ | আপডেট: ১:০৬ পিএম

বিশ্বজুড়ে উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরগুলো এখন ভয়াবহ সংকটের মুখে। সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় প্রবালগুলো তাদের স্বাভাবিক রঙ ও খাদ্য উৎস হারাচ্ছে, ফলে দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে এই সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধ্বংস শুধু পরিবেশের জন্য নয়, বরং মানবসভ্যতার ভবিষ্যতের জন্যও এক মারাত্মক হুমকি।

সোমবার প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রবালপ্রাচীরগুলো সম্ভবত ইতোমধ্যেই একটি “বিপজ্জনক সীমা” (Dangerous Threshold) অতিক্রম করেছে। এতে সতর্ক করা হয়, শিল্পপূর্ব যুগের তুলনায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা মাত্র ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে বিশ্বের অধিকাংশ প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এই প্রতিবেদন তৈরিতে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের ১৬০ জন শীর্ষস্থানীয় সামুদ্রিক ও জলবায়ুবিজ্ঞানী।

প্রতিবেদনের প্রধান লেখক, যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিজ্ঞানী টিম লেন্টন বলেন,

“দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা নিশ্চিত যে উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরের বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। এখন সমুদ্রের তাপমাত্রা না কমলে প্রবালগুলো তাদের স্বাভাবিক রঙ ও জীবনীশক্তি ফিরে পাবে না।”

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সাল থেকে প্রবালের মৃত্যুহার অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশান্ত, ভারত ও আটলান্টিক মহাসাগরের বিশাল অঞ্চলজুড়ে প্রবালপ্রাচীরগুলো ভুতুড়ে সাদা রঙ ধারণ করেছে—যাকে বলা হয় Coral Bleaching। পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও, প্রবালভিত্তিক বাস্তুতন্ত্রগুলো দ্রুত কমে আসছে বৈচিত্র্যে, যেখানে অ্যালজি ও স্পঞ্জের মতো প্রাণী আধিপত্য বিস্তার করছে।

এই প্রক্রিয়ার ফলে প্রবালের মৃত কঙ্কাল ধীরে ধীরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে, যা একসময় সাগরের জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল ছিল। গবেষকদের মতে, এটি সামুদ্রিক জীবজগতের “সুনামি-সম” এক পরিবর্তন, যার প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি ও বহু ক্ষেত্রে স্থায়ী।

প্রবালপ্রাচীর ধ্বংসের এই প্রবণতা বিশ্বের লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার ওপরও সরাসরি প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি প্রজাতির জলজ প্রাণী প্রবালপ্রাচীরের ওপর নির্ভরশীল, এবং উপকূলীয় লাখো মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে মাছ ধরা ও পর্যটনের মাধ্যমে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন—যদি এখনই বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে “প্রবালপ্রাচীর এক সময় ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে।

তাদের মতে, এটি শুধু পরিবেশগত বিপর্যয় নয়, বরং মানবজাতির প্রাকৃতিক উত্তরাধিকার হারানোর এক ভয়াবহ সংকেত। জলবায়ু নীতি বাস্তবায়ন, সমুদ্র সংরক্ষণ ও কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনই এখন সময়ের সবচেয়ে জরুরি চ্যালেঞ্জ।

কোন মন্তব্য নেই