গাজীপুরের তাপসের ‘হাঁসের খামার’ এখন সফলতার দৃষ্টান্ত

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
গাজীপুরের তাপসের ‘হাঁসের খামার’ এখন সফলতার দৃষ্টান্ত
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি || টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশিত: রোববার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, সন্ধ্যা ৭:৫৪
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের ডুমনি বিলের পাড়ে গড়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী হাঁসের খামার। বিলের ভাসমান পানিতে গড়ে ওঠা এই খামারের উদ্যোক্তা ২৫ বছর বয়সি তাপস দাস, যিনি এখন একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা। হাঁস পালন করে তিনি প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করছেন।
তাপস প্রহলাদপুর ইউনিয়নের ডুমনি গ্রামের ননী গোপালের ছেলে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষা না পেলেও জীবনের প্রতি তার বিশ্বাস ও অধ্যবসায়ই তাকে সফলতার পথে নিয়ে গেছে। ২০১২ সালে মাধ্যমিক পাসের পর ঢাকায় একটি কারখানায় চাকরি নেন তিনি। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় চাকরি হারান। তখন পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় তাপসকে বিদেশে পাঠানোর, কিন্তু ৬ লাখ টাকার খরচ জোগাড় সম্ভব হয়নি।
বিদেশে না গিয়ে দেশে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তাপস। পশুপাখির প্রতি ছোটবেলার ভালোবাসা থেকেই শুরু করেন হাঁস পালন। ২০২১ সালে মাত্র দেড় হাজার টাকা দিয়ে ৩২টি খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস কিনে বাড়িতেই ছোট খামার গড়ে তোলেন। কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও ইউটিউব দেখে শেখেন খামার ব্যবস্থাপনা।
ধীরে ধীরে তার খামার বড় হতে থাকে। বর্তমানে তাপসের খামারে রয়েছে প্রায় ৪৫০টিরও বেশি হাঁস। প্রতিদিন উৎপাদিত হয় প্রায় ২৫০টি ডিম, যা স্থানীয় পাইকাররা বাড়ি থেকেই কিনে নেন।
তাপসের খামারটি নির্মাণ করা হয়েছে ডুমনি বিলে—যেখানে হাঁসগুলো দিনে মুক্তভাবে পানিতে ঘোরে এবং রাতে রাখা হয় টিন ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি ঘরে। অল্প জায়গা ও সীমিত খরচে গড়ে তোলা এই খামার এখন তার পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস।
তাপস বলেন, “লাভ এখনো খুব বেশি না, খরচ আর ঝুঁকি দুটোই আছে। হাঁস অসুস্থ হলে অনেক মারা যায়। তবে সরকারি সহায়তা পেলে খামারটিকে আরও বড় আকারে গড়ে তোলা সম্ভব।”
তাপসের মা সবিতা রানী দাস বলেন, “প্রথমে আমরা তাকে খামার করতে বারণ করেছিলাম, কিন্তু সে একবারের জন্য সুযোগ চেয়েছিল। আজ সে নিজের চেষ্টায় এতদূর এসেছে—আমরা গর্বিত।”
স্থানীয় উদ্যোক্তা শেখ ফরিদ বলেন, “তাপস আমাদের এলাকার তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা। যদি শিক্ষিত বেকার যুবকরা তাপসের মতো চিন্তা করত, তাহলে বেকারত্ব অনেক কমে যেত।”
শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আশরাফ হোসেন বলেন, “তাপসের মতো তরুণ উদ্যোক্তারা সত্যিকারের পরিবর্তনের প্রতীক। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমরা তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও টেকনিক্যাল সহায়তা দিচ্ছি। সে চাইলে প্রণোদনা সুবিধার আওতায় এনে আরও বড় খামার গড়ে তুলতে পারবে।”
তাপস আজ এলাকার তরুণদের কাছে প্রমাণ করেছেন—ইচ্ছা, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস থাকলে গ্রামেই গড়ে তোলা যায় সফলতার গল্প।
কোন মন্তব্য নেই