চ্যাটজিপিটির পরামর্শে প্রেমের ইতি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
চ্যাটজিপিটির পরামর্শে প্রেমের ইতি — এআইয়ের শরণাপন্ন হয়ে মানুষ যা করছে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় এখন মানুষ শুধু কাজ বা লেখালেখি নয়, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নিচ্ছে। কেউ বিচ্ছেদ করছে, কেউ চাকরি ছাড়ছে, কেউ আবার দেশ বদলাচ্ছে— সবই এআই চ্যাটবটের পরামর্শে।
চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ৩৩ বছর বয়সী কেটি মোরান নিজের প্রেমিকের সঙ্গে ছয় মাসের সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে এক বন্ধু— চ্যাটজিপিটি।
মোরানের ভাষায়,
“এটা আমাকে নিজের সঙ্গে আলাপে বাধ্য করেছে, যেটা আমি আগে এড়িয়ে যেতাম। বুঝতে সাহায্য করেছে, আসলে সম্পর্কটাই আমার দুশ্চিন্তার মূল।”
এক সপ্তাহ ধরে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বলার পর তিনি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
এআইয়ের কাছে জীবনের প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ দ্রুত, নিরপেক্ষ এবং আবেগমুক্ত পরামর্শের আশায় এআইয়ের ওপর নির্ভর করছে— যা আগে করা হতো বন্ধু, পরিবার বা থেরাপিস্টের সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে।
স্থান বদলের পরামর্শেও এআই
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর জুলি নাইস তিন বছর প্রযুক্তি খাতে কাজের পর হতাশা ও অবসাদে ভুগছিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, নতুন দেশে গিয়ে নতুনভাবে শুরু করবেন।
চ্যাটজিপিটিতে নিজের পছন্দ–অপছন্দ জানিয়ে জানতে চাইলেন কোথায় যাওয়া যেতে পারে। উত্তরে চ্যাটবট তাঁকে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের ছোট্ট শহর ইউজেস–এর নাম দেয়।
জুলি বলেন,
“চ্যাটজিপিটি আমাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। তবে পরে বুঝেছি, ওখানে বেশির ভাগ প্রবাসীই অবসরপ্রাপ্ত— আমার মতো কর্মজীবী কেউ খুব বেশি নেই।”
তরুণদের মধ্যে এআই নির্ভরতা বাড়ছে
ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান বলেন, ২০–৩০ বছর বয়সী তরুণ ব্যবহারকারীরা “জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোও এখন চ্যাটজিপিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিচ্ছে।”
তিনি বলেন,
“তাঁদের জীবনে কে আসছে, কার সঙ্গে কথা বলছে— এসব পটভূমি এআইয়ের কাছেই আছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নির্ভরতা একদিকে আত্মবিশ্বাস জোগালেও, অন্যদিকে মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
৩৬ বছরের দাম্পত্যে চ্যাটবটের ভূমিকা
মাইকের ভাষায়,
“আমি শুধু নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম যে আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। চ্যাটবটটা নিরপেক্ষভাবে শুনেছে, কোনো বিচার করেনি।”
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফস্টার স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও বলেন,
“এআই ব্যবহারকারীদের খুশি করতে প্রশিক্ষিত— সেরা পরামর্শ দিতে নয়। তাই এটি কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্তেও প্রভাব ফেলতে পারে।”
তাঁর পরামর্শ,
“নিজেদের চিন্তাশক্তিকে সম্পূর্ণভাবে এআইয়ের হাতে ছেড়ে দেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় মানুষকেও সক্রিয় থাকতে হবে।”
সারসংক্ষেপ
-
চ্যাটজিপিটির পরামর্শে প্রেম ভাঙলেন কেটি মোরান
-
স্থান পরিবর্তন, চাকরি, বিচ্ছেদ— নানা সিদ্ধান্তে এআইয়ের ভূমিকা
-
তরুণদের মধ্যে এআই নির্ভরতা বাড়ছে
-
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা: অতির্ভরতা সিদ্ধান্ত গ্রহণক্ষমতা দুর্বল করতে পারে
কোন মন্তব্য নেই